খুলনায় ইমাম হোসাইন (আ.)’র পবিত্র শাহাদাত স্মরণে আশুরা পালিত
(last modified Tue, 09 Aug 2022 10:01:37 GMT )
আগস্ট ০৯, ২০২২ ১৬:০১ Asia/Dhaka
  • খুলনায় ইমাম হোসাইন (আ.)’র পবিত্র শাহাদাত স্মরণে আশুরা পালিত

হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)'র পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মঙ্গলবার নগরীর আলতাপোল লেনস্থ আঞ্জুমান-এ-পাঞ্জাতানী ইমাম বাড়িতে শোক কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল আলোচনা সভা এবং শোক ও মাতম মিছিল।

মিছিলের পূর্বে ইমামবাড়িতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম সৈয়দ ইব্রাহীম খলিল রাজাভী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, দশই মহররমের দিবাগত রাত বা শামে গাঁরিবা তথা অসহায় মুসাফিরদের রাত। এ রাত বিশ্ব ইতিহাসে তথা মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে শোকের রাত। কারণ এরাতের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে শহীদ হয়েছেন শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর প্রায় ৭২ থেকে ১০০ জন সঙ্গী কারবালার উত্তপ্ত মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ বা ২২ জন ছিলেন নবী-পরিবারের সদস্য। ছিল ইমামের ৬ মাস বয়সী দুধের শিশু আলী আসগর। ছিল ১৩ বছরের ভাতিজা কাসেম। ছিল ইমামের ২০-২২ বছর বয়স্ক পুত্র হযরত আলী আকবর যিনি ছিলেন দেখতে অবিকল মহানবীর মত! ছিলেন ইমামের সৎভাই সৌন্দর্য ও বীরত্বের জন্য খ্যাত হযরত আবুল ফজল আব্বাস। কারবালার ঘটনা ত্যাগ ও তিতিক্ষার বহু অনন্য দৃষ্টান্তের সাক্ষ্য। ইমাম হুসাইনের (আ.) ভাই বীরশ্রেষ্ঠ হযরত আব্বাস ত্যাগ ও তিতিক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আরও ছিলেন মহানবীর ৭৫ বছর বয়স্ক সাহাবি হাবিব ইবনে মাজাহের। ছিলেন ইয়াজিদ বাহিনী ছেড়ে আসা ওই বাহিনীর অন্যতম বড় সেনাপতি হোর। 
তিনি আরো বলেন, নবী (সাঃ) দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (আঃ) এর পবিত্র শাহাদাতকে স্মরণ করা একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। কেননা ইমাম হোসাইন (আঃ) ইসলাম ধর্ম রক্ষার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সুতরাং ইমাম হোসাইন (আঃ) এর এই কালজয়ী বিপ্লবকে স্মরণ করে আলোচনা অনুষ্ঠান ও শোক মিছিলের আয়োজন করে জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে মনে করি।
রাসূলে খোদা বলেছেন, ‘হুসাইন আমার সন্তান, আমার বংশ ও মানবজাতির মধ্যে তাঁর ভাই হাসানের পর শ্রেষ্ঠ। সে মুসলমানদের ইমাম, মুমিনদের অভিভাবক, জগতগুলোর রবের প্রতিনিধি বা খলিফা, সে আল্লাহর হুজ্জাত, বেহেশতের যুবকদের সর্দার এবং উম্মতের মুক্তির দরজা। তার আদেশ হল আমার আদেশ। তার আনুগত্য করা হল আমারই আনুগত্য করা। যে-ই তাকে অনুসরণ করে সে আমার সাথে যুক্ত হয় এবং যে তার অবাধ্য হয় সে আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।’ 
কারবালায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এবং তার সঙ্গীসাথীদের শাহাদাতের পর ইমামের খান্দানের মধ্য থেকে যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাদেরকে বন্দী করা হয়েছিল। এদের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বে ছিলেন ইমাম হোসাইনের মহীয়সী বোন হযরত যয়নাব সালামুল্লাহি আলাইহা।
ইমামের বোন হযরত যাইনাব (সা.আ.)- শোকে অধীর হয়ে বলেছিলেন, “হে মুহাম্মাদ, আকাশের ফেরেশতাদের সালাম আপনার উপর, এ হলো হুসাইন, যে নিহত হয়েছে, যার শরীর রক্তে ভিজে গেছে এবং তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আপনার কন্যারা বন্দী হয়েছে। .... এ হলো হুসাইন, যে মরুভূমিতে গড়িয়ে পড়েছে এবং বাতাস তার জন্য শ্বাসকষ্ট পাচ্ছে ... হে মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথীরা, আসুন ও দেখুন মুস্তাফা (সা.)-এর বংশকে কিভাবে কয়েদীদের মতো বন্দী করা হয়েছে।”
ইসলামের শত্রুরা মহানবীর (সা:) পবিত্র আহলে বাইতকে ও তাঁদের পবিত্র নামকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল চিরতরে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে এর উল্টো। কারণ, মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর ধর্মের নুরকে রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন এবং এই আলোকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কাফির-মুশরিকদের কাছে যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন। আলোচনা শেষে ইমামবাড়ী প্রাঙ্গণে মাতম অনুষ্ঠিত হয়।#

পার্সটুডে/আবুসাঈদ/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ