আগস্ট ০৫, ২০২৩ ১৮:০১ Asia/Dhaka

রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই জ্বর-সর্দি আর ডেঙ্গু রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আবার অধিকাংশই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেছেন, গত কিছুদিন ধরে ব্যাপক হারে জ্বরের রোগী বাড়ছে। পরীক্ষায় কিছু মানুষের ডেঙ্গু আসছে, আবার কিছু মানুষের ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ভাইরাল ফ্লু আসছে। তবে হঠাৎ করেই এত সংখ্যক জ্বরের রোগী বেড়ে যাওয়াটা অবশ্যই আশঙ্কার বিষয়। হাসপাতালগুলোতে রোগী যদি এভাবেই বাড়তে থাকে, তাহলে সেটি সামাল দেওয়া কষ্টকর হবে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে আমাদের চিকিৎসকরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। যেখানে একজন চিকিৎসকের ১০ জন রোগী ম্যানেজ করার কথা, সেখানে তাদেরকে বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী ম্যানেজ করতে হচ্ছে। ডাক্তার তো এখন চাইলেই রাতারাতি বাড়ানো যাবে না। এ অবস্থায় আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো, যেকোনো মূল্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমানো।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর হোসেন বলেন, এখন শুধু ডেঙ্গুর নয়, ইনফ্লুয়েঞ্জারও সিজন চলছে। বর্তমানে জ্বরের সঙ্গে যাদের সর্দি-কাশি আছে, এরকম প্রায় ৩০ শতাংশেরই ইনফ্লুয়েঞ্জা। জ্বরের সঙ্গে যাদের সর্দি-কাশি আছে, এরকম ৫ থেকে ১০ শতাংশ হলো কোভিড। আর জ্বরের সঙ্গে যাদের শরীর ব্যথা, চোখ ব্যথা আছে এরকম ১০-১২ শতাংশ ডেঙ্গু।

সুতরাং জ্বর হলেই যে এখন ডেঙ্গু হবে তা কিন্তু নয় বলে মনে করেন ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান। তবে বর্তমানে ডেঙ্গু হলে যেহেতু মৃত্যু ভয় আছে, এজন্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষাটা করিয়ে নেওয়া জরুরি। শুরুতেই যদি ডেঙ্গুটা শনাক্ত হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসা করতেও সহজ হয়। এমনকি জ্বর নিয়ে আতঙ্কটাও কমে যায়, যোগ করেন তিনি।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা জটিল কিছু না, গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়মতো হাসপাতালে আসা। জ্বর হলে বিশ্রাম কিংবা চিকিৎসা না নিয়ে অনেকে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। পরীক্ষা করতে চায় না, অবহেলা করে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ফ্লুয়েড ম্যানেজমেন্ট। সঠিক সময়ে এটা না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।

পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ উল্লেখ করে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের পরিসংখ্যান দিয়ে তো আর বাস্তব চিত্রটা বোঝা যাবে না। কারণ ডেঙ্গু জ্বর হলেও সর্বোচ্চ ১০-১২ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে আসে। অর্থাৎ সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। অধিকাংশ মানুষের তো জ্বর হয়ে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। সব ডেঙ্গু জ্বর সিভিয়ার হয় না। আর যারা সিভিয়ার কন্ডিশনে চলে যায়, সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনাটাও কঠিন হয়ে যায় যা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করলেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।

ডেঙ্গুর পাশাপাশি ভাইরাল ফিভারসহ অবশ্যই অন্যান্য জ্বরও আছে। সব ভাইরাস তো আর ডিটেক্ট করার জন্য মানুষ ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পরীক্ষা করে না। কাজেই স্পেসিফিক করে না বলতে পারলেও ভাইরাল ফিভার, সিজনাল ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা-এসব তো এই সিজনে হয়ে থাকে। কারণ ডেঙ্গু হচ্ছে বলে ওগুলো যে বন্ধ হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। এসবের বাইরে কিছুদিন আগে চিকুনগুনিয়াও কিছু পাওয়া গিয়েছিল। এখনো হয়তো পরীক্ষা করলে কিছু পাওয়া যেতে পারে।#

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ