আগস্ট ৩০, ২০১৬ ১০:৪২ Asia/Dhaka
  • মাহবুবে আলম- গোলাম আরিফ টিপু- তুরিন আফরোজ
    মাহবুবে আলম- গোলাম আরিফ টিপু- তুরিন আফরোজ

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকার পরের প্রক্রিয়া হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলী প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। আর তা না চাইলে যেকোনো দিন তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজ (সকাল) ৯টা ৪ মিনিটে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় বহাল রাখার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মাহবুবে আলম। এ রায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “রিভিউ’র পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার বিষয়টি অবহিত করা হবে। এরপর তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সেটি জিজ্ঞাসা করা হবে। যদি তিনি প্রাণভিক্ষা চান ও রাষ্ট্রপতি সেটি মঞ্জুর করেন, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা নাকচ হয়ে গেলে যেকোনো সময় দণ্ড কার্যকর করা যাবে।”

ওই বক্তব্যের পর এক সংবাদিক বলেন, “রাষ্ট্রপতি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি বিষয়টি কীভাবে দেখবেন?”

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “রাষ্ট্রপতি যেখানেই থাকুন না কেন, তাঁকে বিষয়টি অবহিত করা হলে, তিনি সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন।”

মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ মামলার আইনজীবী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন ছিলাম। ফাঁসির রায় বহাল না থাকলে জাতি হিসেবে আমরা কলঙ্কিত রয়েই যেতাম। ফাঁসি বহাল থাকায় এখন পুরো জাতিই খুশি, সবাই সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের অপেক্ষায়’।

তিনি আরও বলেন, “যে আশা নিয়ে সমগ্র জাতি ছিল এবং আমি ছিলাম, আজ তা পূর্ণ হয়েছে। আমি সন্তুষ্ট।”

কাঙ্ক্ষিত রায় হয়েছে: গোলাম আরিফ টিপু

রিভিউ রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, “রায়ের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত রায় হয়েছে। উই আর হ্যাপি।”

এটি একটি অসাধারণ মুহূর্ত: তুরিন আফরোজ

মীর কাসেম আলীর মামলার অন‌্যতম প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ বলেন, “ন্যায়বিচার পেয়েছি। সত্য সূর্যের মত ধ্রুব।”

তিনি আরও বলেন, “মীর কাসেম আলীর মামলাটি ছিল একটি ভিন্ন ধরণের মামলা। তাই এ মামলা নিয়ে চ্যালেঞ্জও ছিল বেশি। শেষ পর্যন্ত আমরা বিজয়ী হয়েছি। যদিও মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতি প্রসিকিউটরদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রায়ে কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় আমাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা এখন আপেক্ষিক। কারণ চূড়ান্ত রায়ে তার ফাঁসির দণ্ড বহাল রইল। এটি একটি অসাধারণ মুহূর্ত।” 

মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে সাজা নেয়া হয়েছে : খন্দকার মাহবুব

এদিকে, আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, অভিযোগে ও সাজানো সাক্ষ্য দিয়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের সাজা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই রায় কতটা সঠিক তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্বের আইনাঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই বিবেচনা করবেন।

আপিল বিভাগের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মাহবুব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে 'এটি সঠিক হয়নি' আইনজীবী হিসেবে এ কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আইনের বিধানমতে, সর্বোচ্চ আদালত যে বিচার করেন সেটাই ন্যায় বিচার। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষ্য ব্যবহার করে সরকার পক্ষ এই সাজার রায় নিতে পেরেছে বলে জানান তিনি।

আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।  মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর দুটি অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ৮ মার্চ আপিল বিভাগ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীম উদ্দিন হত্যা সংক্রান্ত একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়। #

পার্সটুডে/এআর/৩০

ট্যাগ