করোনাকালে বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ, গ্রামের ৪১ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন
(last modified Mon, 28 Sep 2020 15:38:57 GMT )
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০ ২১:৩৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের করোনা মহামারিতে শহরাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন। আর গ্রামাঞ্চলের কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন ৪১ শতাংশ মানুষ। শহরাঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছেন ঢাকায়। ঢাকা শহরের ৭৪ শতাংশ মানুষ করোনার কারণে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন। আর গ্রামাঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়েছে বরিশাল বিভাগে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শ্রমবাজারে করোনা কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে সে বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। লুজিং লাইভলিহুডস দ্য লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্টস অব কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দরিদ্র এলাকা এবং কক্সবাজার জেলাকে।

প্রতিবেদনে বিভাগ ওয়ারী হিসেবে বলা হয়েছে,  বরিশাল বিভাগের শহরের ৫৪ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৪৭ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগের শহরের ৬৩ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৪৪ শতাংশ; ঢাকা বিভাগের শহরের ৭৪ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৪৫ শতাংশ; খুলনা বিভাগের শহরের ৫৯ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৩৯ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগের শহরের ৬১ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৩৫ শতাংশ; রংপুর বিভাগের শহরের ৫৮ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের ৩৭ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগের শহরের ৬৬ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৩৯ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন করোনার কারণে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাকরি হারানো কিছু ব্যক্তি বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তারা হয়তো আগের কাজে ফিরে যেতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রেডিও তেহরানের কাছে আশংকা ব্যক্ত করে বলেনকরোনা জনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে দুর্দশায় পতিত মানুষদের জন্য জরুরী খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শহর-গ্রামে রেশন ব্যবস্থা চালু করা না হলে করোনার চেয়েও অনেক বেশী মানুষ অনাহার অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাবেন। 

চাকুরি বন্ধক রেখে ঋণ বাড়ছে

করোনার নেতিবাচক প্রভাবে আয় কমেছে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের। যারা চাকরীতে আছেন তাদের অনেককেই করোনায় আপদকালীন খরচ মেটাতে চাকুরী বন্ধক রেখে, আর্থাৎ চাকুরীর বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যাংক নিবার্হীদের সংগঠন-এবিবির হিসাব মতে, করোনা পরিস্থিতি ভোক্তাসহ নানা খাতের ঋণ বিতরণ কমলেও বেড়েছে চাকরিজীবীদের এরকম ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ। এপ্রিল-জুন মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ৪৪০ কোটি টাকা।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন-এবিবির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, করোনাকালে আয় কমে যাওয়ায় ঋণ নিতে বাধ্য হন চাকরিজীবীরা। অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, চাকুরীজীবিদের সবার জন্যই এ সুযোগ থাকা দরকার।

সংকটে ৭৫ শতাংশ ছোট প্রতিষ্ঠান

এ ছাড়া, করোনার কারণে ব্যবসার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় আছেন ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান মালিক। ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বিআইজিডির গবেষণায় ধরা পড়েছে এমন চিত্র। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এ সংক্রান্ত এক ওয়েবিনারে বলা হয়, বিক্রি ও লাভের পরিমাণ কমে যাওয়া, ইউটিলিটি বিল ও কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।  এছাড়া, করোনার প্রভাবে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় কাঁচামাল সংকটে ভুগছে ৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

এতে আরো জানানো হয়, লকডাউনের পর কাজের পরিমাণ বাড়লেও ক্ষুদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানে করোনার আগের সময়ের চেয়ে বিক্রির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ।এ অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর তার ফলে কি পরিমাণ মানুষ আর্থিক দুর্দশায় পড়েছে তার হিসেব জানা যায় নি।#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ এমবিএ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।