বাংলাদেশে কঠোর লকডাউনেও বাড়ছে সংক্রমণ: সরকার ও বিরোধী দলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
(last modified Sun, 04 Jul 2021 13:46:24 GMT )
জুলাই ০৪, ২০২১ ১৯:৪৬ Asia/Dhaka

বিএনপি মহাসচীব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সরকারের অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং ‍উদাসীনতা দায়ী করে সরকারের পদত্যাগ দাবী করেছেন।

আজ রবিবার (৪ জুলাই) জুম নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, করোনা সংক্রমনের মধ্যে ১৫ মাস সময় পেয়েও সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন, সাধারণ ছুটি, সীমিত লকডাউন, কঠোর লকডাউন এসবের কবলে পড়ে প্রায় ২ কোটির ওপরে মানুষ দরিদ্র হয়েছে; কর্মচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ শ্রমিক। দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ৮৫ শতাংশ, যারা সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি প্রকৃত অর্থে কর্মহীন। অবিলম্বে ‘দিন আনে দিন খায়’ অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, হকার, প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এক কালীন ১৫ হাজার টাকা করে প্রদানের আহ্বান জানান বিএন পি মহাসচিব। 

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকারের সমালোচনায় মুখর বিএনপি ও এনজিও ব্যক্তিত্বদের করোনার এই সময়ে আর মানুষের পাশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।

রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য হাইফ্লো ক্যানুলাসহ করোনার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাড়ছে সংক্রমণ :

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন,  আজ রবিবার সমাপ্ত ২৬তম সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমন ২৫তম সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে ৫১ শতাংশ। একই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪৬ শতাংশ । ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত কয়েকদিনের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে তিনগুন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, অক্সিজেন উৎপাদন  ও সরবরাহে কোনো সঙ্কট নেই। তবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ওদিকে রংপুর করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন, অক্সিজেন, আইসিইউ বেড, হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলাসহ প্রায় সবকিছুরই তীব্র সংকট রয়েছে সেখানে। সবকটি বেড পূর্ণ হওয়ায় নতুন রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে নাকরোনা রোগীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সিভিল সার্জন আশ্বাস দিয়েছেন, সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয়ের কাছে  আবেদন করা হয়েছে। 

অনুরূপভাবে,  বগুড়া , রাজশাহী, সাতক্ষিরা , খুলনা সহ বিভিন্ন জেলায় অক্সিজেন এবং শয্যা সংকটের অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনেরা ।

সংক্রমণ বাড়ছে খুলনা , বরিশাল,  সিলেটে

অপরদিকে, খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ১৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১৫ জন, যশোরে সাতজন, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গায় দুজন করে এবং বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে একজন করে মারা যান। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১ হাজার ৩০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

সিলেট:

সিলেটে প্রতিদিন দুশ উপরে শনাক্ত হচ্ছে নতুন রোগী। ফলে  হাসপাতালে বেড়েছে চাপ। ইতিমধ্যে আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে।  গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২২৮ জন। 
গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ৪ জুলাই পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় ৪৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৩৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে সিলেট জেলায়।  রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বরিশাল:

বরিশাল বিভাগে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ৩৪৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ সময় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এর আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬০। আর সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৬৩৭ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা সদর হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলিয়ে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৪৭। কিন্তু এসব হাসপাতালের ৩৯টিতেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। আর যাদের রয়েছে তাদের মধ্যে শুধু বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে বড় আকারে অক্সিজেন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি জেলা হাসপাতালগুলোর যাদের অক্সিজেন সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে, তাদের মেনিফোল্ড পদ্ধতির অক্সিজেন ট্যাংকারগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৩ হাজার ৪২০ লিটার করে।

চলমান লকডাউন পরিস্থিতি:

মহামারি করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে সারা দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের চতুর্থ দিনে রাজধানীতে আগের দুই দিনের চেয়ে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি একটু বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজ রোববার বৃষ্টিভেজা দিনের শুরু থেকে সড়কে আগের মতোই কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

চলমান কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ৪২৯ জন। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৩০৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এর আগে, গতকাল শনিবার বিনা প্রয়োজনের বাইরে আসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় রাজধানীতে ৬২১ জনকে গ্রেপ্তার এবং ৩৪৬ জনকে এক লাখ ছয় হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।#

পার্সটুডে/ বাবুল আখতার/ বাবুল আখতার/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

 

ট্যাগ