বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা: বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে এতক্ষণে দেখা দিয়েছে হতাশা আর ব্যর্থতার সকরুণ আক্ষেপ। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে সংক্রমণ কম এবং মধ্যাঞ্চলে সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে সংক্রমণ বাড়ছে।
তিনি বলেছেন, হাসপাতালের সক্ষমতা যতটা সম্ভব বাড়িয়েছি, জনবলের ঘাটতি যতটুকু পারা যায় কাটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কতটাই বা আর বাড়ানো যায়। যেভাবে রোগীর ঢল নামছে তাতে তো আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
এদিকে, চলমান লকডাউন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পোশাক কারখানা খুলে দেয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা কর্মস্থলে এসে যোগ দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই ছিলোনা । যার জন্য সংক্রমণ বাড়বে, এমনটাই আশংকা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।পোশাক কারখানা খুলে দেয়ায় পর এবার দোকান মালিক সমিতি চাইছে মার্কেট এবং শপিং মল খুলে দেওয়া হোক। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তাদের পক্ষে লকডাউন মানার আর কোনো ধৈর্য নেই।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন, যতবারই আমরা চাই সংক্রমণের লাগাম টানতে, বৈজ্ঞানিক পরামর্শ মতো সংক্রমণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে, কোনোবারই তা শেষ পর্যন্ত নিতে পারলাম না। ক্ষতি তো সবার হচ্ছেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী খেদের সাথে বলেন, আমরা একদিকে রোগ কমাই, অন্যরা আবার রোগ ছড়িয়ে দিয়ে হাসপাতাল ভরে ফেলে, আর দোষ হয় আমাদের। রোগের উৎস যারা বন্ধ করতে পারে না তাদের যেন কোনো দোষই কেউ দেখে না!
তিনি বলেন, গার্মেন্ট সেক্টরের প্রতি আমাদের অনুরোধ ছিল, অন্তত ১৪টা দিন সময় দেন, দেখি না কতটা কমানো যায়, কিন্তু এবারও তা হলো না। এটাই বড় আক্ষেপ। পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ অনুসারে আর পাঁচটা দিন কেন ধৈর্য ধরা গেল না! সামনে আক্রান্ত ও মৃত্যু কতটা বাড়বে তা নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছি। শুধু একটি সেক্টরের কারণে আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। অন্য সব সেক্টর ধৈর্য ধরে সহ্য করলেও একটি সেক্টর যেভাবে লাখ লাখ শ্রমিককে অমানবিকভাবে টানাহেঁচড়া করে নানাভাবে ঝুঁকি-দুর্ভোগের মুখে ঢেলে দেয়, তাদের চলাচলপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে পড়া লাখো মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে, তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে!
জুলাইয়ে মৃত্যু এবং সংক্রমণ সবচেয়ে বেশী
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৬ মাসের মধ্যে এবার করোনায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত এবং সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর হয়েছে গত জুলাই মাসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ক তথ্যে অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৯৪৪ জন মারা গেছেন। আর শুধু জুলাইয়েই মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের।
শনাক্তের ক্ষেত্রেও একই রকম চিত্র ছিল জুলাই মাসে। গত ছয় মাসে মোট ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু শুধু জুলাই মাসেই শনাক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ নতুন রোগী।
খুলনায় জুলাইয়ে দৈনিক ৪২ জন মারা গেছে
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ। জুলাইয়ের ৩১ দিনে খুলনা বিভাগের ৩৬ হাজার ২৯২ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ১৬ মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৮১২ জন। এর প্রায় ৩৯ ভাগ আক্রান্ত হয়েছেন জুলাইয়ে যা গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খুলনা বিভাগে করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৬ মাসে মারা গেছে ২ হাজার ৪২৮ জন রোগীর। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই মারা গেছেন ১ হাজার ৩১৯ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ ১৬ মাসের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী মারা গেছেন এ জুলাই মাসে। এ মাসে খুলনা বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪২ জন মানুষ মারা গেছেন।
বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগের করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি হয়েছে গত জুন ও জুলাই মাসে। তবে জুন মাসের চেয়ে জুলাই মাসে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে জুন ও জুলাই মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ৫৭২ জনের, যা মোট শনাক্তের অর্ধেকের বেশি। এ দুই মাসে মারা গেছেন ৭৫৯ জন, যা এ বিভাগের মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি।#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/ ২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।