সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২১ ১৫:৫৫ Asia/Dhaka

করোনা পরিস্থিতিতে দেশে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ের তথ্য এবং বিশেষজ্ঞদের অভিমত থেকে এমনটাই ধারনা পাওয়া যাচ্ছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গত ২৫ আগস্ট কমিটির সভার উল্লেখ করেছে, অল্প বয়সের মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার কারনেও বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সর্বশেষ জরিপ (মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এমআইসিএস) অনুযায়ী,  দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে গত দু’বছরে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি বা অবনতি হয়েছে তার তথ্য এখনো সরকারের হাতে নেই। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালের  এপ্রিল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত দেশের ২১ জেলার ৮৪টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে বরগুনায়-১ হাজার ৫১২টি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, করোনাজনিত বিধিনিষেধের মধ্যে মানুষের চলাচল কমে যাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, অভাবের সংসারে কিশোরীদের নিরাপত্তার দুশ্চিন্তা -এসব বিভিন্ন কারণে বাল্যবিবাহ বেড়েছে।

সহযোগী অধ্যাপক শ্যামলী শীল

এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্যামলী শীল রেডিও তেহরানকে বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মতামত উপেক্ষা করে সরকার সম্প্রতি মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করেছে। এতে বরং সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তাছাড়া অভাবগ্রস্ত পরিবারের কন্যাদের জন্য সরকারের সহায়তা কার্যক্রমের অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা। শরীর মন প্রস্তুত হবার আগেই অপরিণত বয়সে মেয়েদের বিবাহের ফলে তার নানা শারীরিক মানসিক সমস্যার দিক তুলে ধরেন নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল।

মানবাধিকারনেত্রী সুলতানা কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনাকালে বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি এবং দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া-সরকার এ দিকগুলোতে সক্রিয়ভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি। করোনার প্রাদুর্ভাবে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে, বিষয়টি তো সরকারের চিন্তাভাবনায় আসা উচিত ছিল। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বলা যায়, বাল্যবিবাহ বন্ধে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার সক্রিয়ভাবে কোনো কাজ করেনি। স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দিয়ে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটতে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি তৎপরতায় ভাটা

বাল্যবিবাহ নিরোধে সরকারের  জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা রয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কমিটি আছে।

তবে করোনা পরিস্থিতিতে এসব কমিটি এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মতৎপরতা ব্যহত হয়েছে। লক-ডাউন কার্যকর করা, ত্রাণ বা আপদকালীন অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকায় বাল্যবিবাহ ঠেকানোর দিকে নজরদারী কমেছে। ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। বাল্য বিবাহ রোধে সরকারি কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঝুঁকিপূর্ণ কিশোরীদের তত্ত্বাবধান করার জন্য তালিকা তৈরি; জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জরুরি পুনর্বাসন তহবিল গঠন, স্থানীয় সরকারের সব ধরনের বাজেট থেকে অসচ্ছল পরিবারের কিশোরীদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে না দেওয়ার শর্তে আর্থিক সহায়তা প্রদান, জেলা ও উপজেলার বাজেটে নগদ সহায়তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা।

এ ছাড়া কিশোরীদের বৃত্তিমূলক কাজের জন্য ঋণ দেওয়া, বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক তথ্য সংগ্রহ, ম্যাপিং; ভবিষ্যতে এই পরিবারগুলোকে এই অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য কর্মসূচি, বস্তিতে ঝুঁকিতে থাকা মেয়েদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, জনপ্রতিনিধিদের সেবামূলক কর্মসূচিতে দরিদ্র কিশোরীর পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি অনুদান কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া  আছে। কিন্তু এই কার্যক্রমের কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তার কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা যায়নি।#

 

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ