ফাঁসির দাবিতেই অটুট থাকব: মুখ্যমন্ত্রী
কলকাতায় নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্তকে আমৃত্যু কারাদণ্ড
-
ধর্ষকের বিচার দাবিতে কলকাতায় বিক্ষোভ (ফাইল ফটো)
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে আমৃত্যু কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস।
আজ (সোমবার) বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিচারক এই শাস্তির রায় ঘোষণা করেন। বিচারক জানিয়েছেন, আরজি করের ঘটনাকে ‘বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ’ বলে মনে করছেন না। তাই আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে সঞ্জয়কে। জরিমানাও করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ শুনে বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকেন সঞ্জয় রায়। এসময় সঞ্জয়ের আইনজীবী তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হল।’’ তার প্রেক্ষিতে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমার তো বদনাম হয়ে গেল।’’
মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং তাঁর খুনের জন্য তাঁর পরিবারকে মোট ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নির্যাতিতার বাবা আদালতের ভেতরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষতিপূরণ নিতে চান না। বাইরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষতিপূরণ নেব না। বিচারককে বলেছি। আমরা তো এ ভাবে আমাদের মেয়েকে বিক্রি করতে পারব না। তাই টাকা নিতেই পারব না। প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পেলে মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।’’
এর আগে গত শনিবার বিচারক নারী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণে যুক্ত থাকার অভিযোগে এককভাবে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন। সেদিনই তিনি জানিয়েছিলেন, সোমবার শাস্তির রায় ঘোষণা করবেন।
শনিবার মাত্র ১২ মিনিটের শুনানি শেষে বিচারক জানান, সাক্ষীদের বয়ান, তদন্তকারী সংস্থার তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয়ের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে আদলতে দাবি করেন তিনি। এও বলেন যে, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। শনিবার সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার পর বিচারকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নির্যাতিতার বাবা এবং মা। তাঁরা এজলাসে দাঁড়িয়েই কেঁদে ফেলেন।
ফাঁসির দাবিতেই অটুট থাকব: মুখ্যমন্ত্রী
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘আমরা প্রথম থেকেই ফাঁসির দাবি তুলেছিলাম। আমরা এখনও সেই দাবিতে অটুট আছি। তিনটে কেসে আমরা ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিয়েছি। এটা সিরিয়াস কেস। এটা নিয়ে ফাঁসির দাবি আমাদের সবার ছিল। আমাদের হাতে কেসটা থাকলে অনেকদিন আগে ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিতে পারতাম। এই নরপিশাচদের চরমতম শাস্তি হওয়া উচিত’।
গত বছরের ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার হল থেকে এক নারী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তাকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। গত ৪ নভেম্বর মামলায় চার্জ গঠনের পরে ১১ নভেম্বর থেকে দীর্ঘ শুনানি চলে। গত ১৮ জানুয়ারি ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে।
সোমবার রায় ঘোষণার আগে বিচারক অভিযুক্তের বক্তব্য শোনেন। আগের দিনের মতই অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তবে সিবিআইয়ের আইনজীবী অভিযুক্তের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানান। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীও অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেন।
তবে বিচারকের শাস্তির রায়কে সকলে স্বাগত জানালেও নির্য়াতিতা নারী চিকিৎসকের পরিবারসহ নাগরিক সমাজের বৃহৎ অংশ মনে করেন, অভিযুক্তের একার পক্ষে এই নারকীয় কাজ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত। তাদের কন্যার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত নির্যাতিতার পিতা-মাতা লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা বিচার চাই। ইতিমধ্যেই তারা সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন করেছেন। নির্যাতিতার পিতা জানান, তারা যে ৬৭টি প্রশ্ন তুলেছেন তার উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তারা থামবেন না।
প্রথমে ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ‘বায়োলজিক্যাল’ এবং ‘ডিজিটাল’ তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করেছিল তারা। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআইও তদন্ত চালিয়ে আটক সিভিক ভলান্টিয়ারকেই ‘একমাত্র অভিযুক্ত’ হিসেবে বর্ণনা করে আদালতে চার্জশিট পেশ করে। তার দু’মাস পর রায় ঘোষণা হলো।
তবে ধর্ষণ-খুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেপ্তার করে সিবিআই। যদিও তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফলে ওই মামলায় সন্দীপ এবং অভিজিৎ দু’জনেই জামিন পেয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে কবে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়া হবে তা এখনও জানা যায়নি।#
পার্সটুডে/এমএআর/২০