ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাক নির্বাচিত হওয়ায় মোদীর শুভেচ্ছা, ভারতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ব্রিটেনে ভারতীয় বংশদ্ভূত ঋষি সুনাক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ওই ইস্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে। ঋষি সুনকের হিন্দু পরিচিতি নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। প্রকাশ্যে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কখনও সরব না হলেও নিজেকে বরাবরই ‘গর্বিত হিন্দু’ হিসেবেই তুলে ধরে এসেছেন ঋষি সুনক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী এক বার্তায় বলেছেন, ‘ঋষি সুনাককে উষ্ণ অভিনন্দন। আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমরা একসঙ্গে কাজ করা ও ২০৩০-এর রোডম্যাপকে বাস্তবায়িত করার দিকে তাকিয়ে রয়েছি। ইউকে ইন্ডিয়ানদের লিভিং ব্রিজকে দেওয়ালির বিশেষ শুভেচ্ছা। ঐতিহাসিক বন্ধনকে আমরা আধুনিক অংশীদারিত্বে পরিণত করব।’
১৯৮০ সালের ১২ মে ব্রিটেনের সাউদাম্পটনের এক অভিবাসী পরিবারে জন্মেছিলেন ঋষি সুনক। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিল তাদের পরিবার। সুনকদের পৈত্রিক ভিটে ছিল গুজরানওয়ালায়। যা বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের অন্তর্গত। ১৯৩০-এর দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তারা পূর্ব আফ্রিকায় চলে গিয়েছিলেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনক নির্বাচিত হওয়ায় ভারতের বিশিষ্ট চলচিত্র অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘জয় ভারত। অবশেষে মাতৃভূমি থেকে নতুন ভাইসরয়কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে চলেছে ব্রিটেন।’

ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা পি চিদাম্বরম এক বার্তায় বলেছেন, ‘প্রথমে কমলা হ্যারিস এবং এখন ঋষি সুনক। আমেরিকা ও ব্রিটেনের জনগণ তাদের দেশের ‘সংখ্যালঘু’ মানুষকে দেশের সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত করার কাজটি করেছে। আমি মনে করি যে ভারত এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের রাজনীতি করছে যারা তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় বিষয়।’
সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো সুশান্ত সিং, এক বার্তায় বলেছেন, বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনও মন্ত্রী বা এমপি নেই।
প্রসঙ্গত, ভারতে বিজেপি আমলে লোকসভা হোক বা উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা, কোনও মুসলিমকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। এখন রাজ্যসভাতেও কোনও মুসলিম বিজেপি এমপি নেই। মোদী জমানায় যে ভাবে লোকসভা বা রাজ্যসভায় বিজেপির মুসলিম সাংসদ সংখ্যাই শূন্যে এসে নেমেছে, তার পরে সরকারের শীর্ষপদে কোনও সংখ্যালঘুকে মেনে নেওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় লিখেছেন, ‘আমার দ্বিতীয় প্রিয় দেশ ব্রিটেনের জন্য গর্বিত যে তারা এক জন ব্রিটিশ এশীয়কে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে বসিয়েছে। ভারত আরও সহিষ্ণু হোক। সমস্ত ধর্ম, সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে গ্রহণ করা হোক।’
কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা শশী থারুর বলেছেন, ‘ব্রিটিশ জনগণ যদি ঋষিকে প্রধানমন্ত্রী করে, তা হবে বিশ্বের জন্য একটি বিরল ঘটনা, যেখানে সবচেয়ে শক্তিশালী পদে ‘সংখ্যালঘু’ থাকবেন। আমরা যখন ঋষির ভারতীয় সংযোগে আনন্দিত, আসুন সততার সাথে জিজ্ঞাসা করি, ভারতে কী এটা সম্ভবে?’
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিডিপি সভানেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, ‘ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন, এটা একটা গর্বের মুহূর্ত। ভারতের পক্ষে এটি উদযাপন করাও ঠিক। একই সময়ে, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এমন সময়ে যখন ব্রিটেন একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যকে তার প্রধানমন্ত্রী বানাচ্ছে, আমরা তখন ‘সিএএ’ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) এবং ‘এনআরসি’র (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) মতো বিভাজন আইনে আটকে আছি।’
ঋষি সুনক তার হিন্দু পরিচয় প্রকাশ করে আসছেন। তিনি অনেক অনুষ্ঠানে মন্দির ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যুক্ত হয়েছেন। ২০২০ সালে ঋষি যখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন তিনি হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ ‘গীতা’য় হাত রেখে শপথ নেন। এমন ভিডিও রয়েছে যাতে ঋষি সুনককে গরুর পূজা করতে দেখা যায়। ২০২০ সালে দীপাবলি উৎসবে বাড়ির বাইরে প্রদীপ জ্বালানোর সময়ও ঋষি সুনককে একটি ভিডিওতে দেখা যায়। ঋষি সুনকের নিজেকে 'গর্বিত হিন্দু' বলার খবরও এখন গণমাধ্যমে ছেয়ে আছে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।/,