ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি
মণিপুরে গুলিতে নিহত ‘সিআরপিএফ’ কমান্ডো ও আয়কর কর্মকর্তা
ভারতের মণিপুরে চলমান সহিংসতার জেরে গুলিতে নিহত হয়েছেন আধাসামরিক বাহিনী ‘সিআরপিএফ’-এর একজন কমান্ডো ও একজন আয়কর কর্মকর্তা।
গতকাল (শুক্রবার) দিবাগত গভীর রাতে চূড়াচাঁদপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বাড়িতে ছুটি কাটাতে আসা এক ‘সিআরপিএফ’ কমান্ডোকে। অন্যদিকে, মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিসের এক আয়কর কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের পক্ষ থেকে ছুটিতে থাকা মণিপুরের জওয়ান ও কর্মকর্তাদের অবিলম্বে নিকটবর্তী শিবিরে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ (শনিবার) ইম্ফল উপত্যকায় জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। দোকান ও বাজার পুনরায় খুলেছে এবং রাস্তায় গাড়ি চলতে শুরু করেছে। একজন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেন, মোট ১৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু লোককে সেনা ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী চুড়াচাঁদপুর, মোরেহ, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের কাছ থেকে রজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশ কয়েক দফায় খোঁজখবর নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এদিকে, সরকারিভাবে রাজ্যটিতে হতাহতের খবর জানানো না হলেও বেসরকারি সূত্রে প্রকাশ, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত এবং প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। হাসপাতাল সূত্রকে উদ্ধৃত করে আজ (শনিবার) গণমাধ্যমে প্রকাশ, মণিপুরে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৫৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৬ জনের লাশ চুড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে, আর ১৫টি লাশ ইম্ফল ইস্টে জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে আছে। এছাড়াও, ইম্ফল পশ্চিমের ল্যামফেলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস ২৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে সেনা ও অসম রাইফেলসের কমপক্ষে ১০ হাজার জওয়ানকে অশান্ত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
গত (বুধবার) মণিপুরি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর পক্ষ থেকে মেইতেই জনগোষ্ঠীর উপজাতি পরিচয়ের দাবির বিরোধিতা করে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সেখান থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছড়ায় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি গুয়াহাটি হাই কোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেই উপজাতি সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় মাঠে নামে। সেখান থেকেই সংঘাতের সূচনা বলে জানা গেছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, বিজেপি ২০২১ সালে মণিপুরে বিপুলভাবে জয়ী হয়, ২০২২ সালে একটি ‘ডাবল-ইঞ্জিন সরকার’ (কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকার) তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু ১৫ মাসেরও কম সময়ে, পুরো রাজ্য আগুনে জ্বলছে। মণিপুরে কংগ্রেস কর্মী ও নেতাদের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচকদেরও হামলা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন জয়রাম।
এদিকে, মণিপুরে সহিংসতার রেশ এ বার এসে পৌঁছেছে প্রতিবেশি রাজ্য মেঘালয়েও। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের কাছে নোংরাম হিল অঞ্চলে ‘কুকি’ এবং ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/৬