মণিপুর- সহিংসতার ৪৮ তম দিন ; গুলিতে আহত সেনা জওয়ান
ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের চলমান সহিংসতার মধ্যে এবার সশস্ত্র জনতার গুলিবর্ষণের ফলে এক সেনা জওয়ান আহত হয়েছেন।
গতকাল (রোববার)দিবাগত গভীর রাতে পশ্চিম ইম্ফলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। আহত ওই জওয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। আজ (সোমবার) সেনা সূত্রে প্রকাশ, ১৮/১৯ জুন রাতে কান্তো সাবাল থেকে চিংমাং গ্রামের দিকে একদল জনতা গুলি চালায়, যাতে একজন জওয়ান আহত হয়। গোলযোগপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনীর ফ্ল্যাগমার্চ চলছে। গতকাল রোববারও আনফাল উপত্যকায় ফ্ল্যাগমার্চ করেছে সেনাবাহিনী।
অশান্ত মণিপুর প্রসঙ্গে আজ (সোমবার)ছত্তিশগড়ের ডিএক্সার ও রেডিও তেহরানের শ্রোতা আনন্দ মোহন বাইন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো ঘটছে, এবং আমাদের যারা কর্মকর্তা আছে, তারা যেন শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে না দেখেন। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব প্রয়োজন। এটা তো অনেক দিন হয়ে গেল। সাধারণ মানুষ যেভাবে হতাহত হচ্ছে, যেভাবে মারা যাচ্ছে, যেভাবে রক্ত ঝরছে, তার প্রতিকার দরকার। কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এটাকে মেনে নিতে পারবে না। সেজন্য যারা কর্মকর্তা আছেন, সরকারি যে সমস্ত চ্যানেল আছে সবার চেষ্টা করা উচিত, যেকোনো ভাবে যত শিগগিরি এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা। এটা খুব দরকার।’
এদিকে, রাজ্যটিতে চলমান সহিংসতার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৃথিবীর একমাত্র মাদার বাজারে নীরবতা বিরাজ করছে। এখানে শুধু নারীরাই দোকান বসান। বাজারে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। নারীরা বলছেন, এই সহিংসতা যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। এতে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। ইম্ফলের এমা কাইথাল অর্থাৎ মাদার মার্কেট ৫০০ বছরের পুরনো। এটি বিশ্বের একমাত্র বাজার যা শুধুমাত্র নারীরা চালায়। এখানে প্রায় পাঁচ হাজার নারী দোকানি রয়েছেন। মেইতেই সম্প্রদায়কে সংরক্ষণ সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নে তাদেরকে ‘তফসিলি উপজাতি’র মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে গত ৩ মে থেকে মণিপুরে মেইতেই সম্প্রদায় এবং উপজাতীয় কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। চলমান ওই সহিংসতা নিয়ে দেশ জুড়ে ৫৫০টি সামাজিক সংগঠন এবং সমাজকর্মী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, অবিলম্বে সব পক্ষকে সংঘর্ষ বন্ধ করতে হবে। তারা মণিপুর ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা ওই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে নীরবতা ভাঙতে বলেছেন। কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের বিভাজনমূলক রাজনীতির কারণে আজ মণিপুরের একটা বড় অংশ জ্বলছে বলে সমাজকর্মীরা মন্তব্য করেছেন।
গত (বৃহস্পতিবার) রাতে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের পূর্ব ইম্ফলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটে। ২৫ মে ওই বাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়। ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সরাসরি ‘ডাবল ইঞ্জিন’ (কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যে বিজেপি সরকার) সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে মন্তব্য করেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’ তার রেশ কাটতে না কাটতেই পরদিন হামলা করা হয়েছে রাজ্যের বন ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মন্ত্রী থঙ্গম বিশ্বজিৎ সিং-এর প্রধান কার্যালয় এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি এ সারদা দেবীর বাড়ি লক্ষ্য করে। গত (বুধবার) সন্ধ্যায় পশ্চিম ইম্ফলে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী নেমচা কিপজেনের সরকারি বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি একাধিক থানা এবং গুদামঘরও।
এদিকে, শিবসেনা মণিপুরের সহিংসতার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দলটির মুখপত্র ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘সেখানে কেন 'ডাবল ইঞ্জিন' সরকার ব্যর্থ হলো এবং কেন সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা গেল না, তার জবাব এবার ক্ষমতাসীন দলের দেওয়া উচিত। সহিংসতায় জ্বলছে মণিপুরের মানুষ, গত দেড় মাস ধরে তারা তাদের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে বেঁচে আছে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী এই গুরুতর সংকট নিয়ে একটি কথাও বলছেন না! কুকি চরমপন্থীদের হামলায় মণিপুরে হিন্দুরা মারা যাচ্ছে এবং নকল হিন্দুত্বের দাম্ভিক তথাকথিত পরাশক্তি সম্পন্ন সরকার চোখ বন্ধ করে এই রক্তপাত দেখছে! দেশজুড়ে ‘হিন্দু জনআক্রোশ মোর্চা’ বের করা শাসক দল, তারা কী মণিপুরে হিন্দুদের গণহত্যা দেখছে না? মণিপুরের হিন্দু কী 'হিন্দু' নয়?’ এভাবেই প্রশ্ন তুলেছে হিন্দুত্ববাদী শিবসেনা।
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।