জুলাই ২৯, ২০২৩ ০৯:৪৯ Asia/Dhaka
  • হিন্দুত্বের বিরোধিতা করলে কংগ্রেসের শেষ আশ্রয় হবে মসজিদ বা মাদ্রাসা: হিমন্তবিশ্ব শর্মা

ভারতে বিজেপিশাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, হিন্দুত্বের বিরোধিতা করলে কংগ্রেসের শেষ আশ্রয় হবে মসজিদ বা মাদ্রাসা।

কথিত ‘লাভ জেহাদ’ প্রসঙ্গে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভুপেন বরার বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে গত (বৃহস্পতিবার) তিনি ওই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি গোলাঘাটে একই পরিবারের তিনজনের হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী কথিত ‘লাভ জেহাদ’-এর ছায়া দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে রাজ্যে কংগ্রেসের সভাপতি ভুপেন বরা বলেছেন, এসব বিষয়ে  মুখ্যমন্ত্রী যতটা মনোযোগ দিচ্ছেন, তার অর্ধেকও যদি মূল্যবৃদ্ধি রোধের জন্য মনোনিবেশ করতেন তাহলে জনগণের মঙ্গল হতো।

গত (বুধবার) অসমে ২৫ বছরের যুবক নাজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তার ২৪ বছর বয়সী স্ত্রী সংঘমিত্রা ঘোষকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। স্ত্রী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকেও হত্যা করার অভিযোগ ওঠে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। 

সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরা কৃষ্ণ-রুক্মিণীর প্রেমকে লাভ জেহাদের সঙ্গে মিলিয়েছেন। ভূপেন বরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘লাভ জেহাদ আগেও ছিল, এখনও আছে। শ্রীকৃষ্ণ জোর করে রুক্মিণীকে বিবাহ করেছিলেন। ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে গান্ধারীর বিবাহের ক্ষেত্রে সম্মতি ছিল না গান্ধারীর পরিবারের লোকেদের।’ ভিন্ন সম্প্রদায়ের পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিয়ের অনেক উদাহরণ ইতিহাসে রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ভূপেন বরা।

এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য- প্রেমের সঙ্গে জেহাদের কোনও সম্পর্ক নেই। কৃষ্ণ ও রুক্মিণীর মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা হয়েছিল। সত্যিকারের প্রেমের বিয়ে হলে কাউকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হয় না। তাই এর মধ্যে থাকে না জেহাদও।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যখন একটি মেয়েকে বিয়ে করে তার ধর্ম পালটানো হয় তখনই সেটা হয়ে ওঠে ‘লাভ জেহাদ’। কৃষ্ণ কখনও রুক্মিণীর ধর্ম পাল্টে ফেলেননি।’ লাভ জেহাদের সঙ্গে ভগবান কৃষ্ণকে টেনে আনাটা গর্হিত অপরাধ বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি আরও বলেন, কৃষ্ণের প্রেমের সঙ্গে লাভ জেহাদ মেলানোয় আঘাত পেয়েছেন সনাতনীরা। তাই ভূপেনের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।  

রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘এই দলের একদন এমন অবস্থা হবে যে, মসজিদ, মাদ্রাসা ছাড়া কোথাও থাকার জায়গা পাবে না ওরা। হিন্দুদের কাছ থেকে কংগ্রেস যেভাবে দ্রুত সরে যাচ্ছে তাতে ওদের এই পরিণতিই হবে। কংগ্রেসের শেষ আশ্রয় হবে মসজিদ এবং মাদ্রাসা। আবার কখনও সেখান থেকেও ওদের বের করে দেবে ‘এআইইউডিএফ’। তখন আশ্রয়ের শেষ ঠিকানাও হারাবে কংগ্রেস। কোথাও ওদের থাকার জায়গা জুটবে না’ বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। 

এ প্রসঙ্গে আজ (শনিবার) অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর রেডিও তেহরানকে বলেন, 'আমরা আগেও বলেছি, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কথাগুলো সব সময় সাম্প্রদায়িকতায় পূর্ণ থাকে। একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে তিনি যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ করার চেষ্টা করেছেন, সেটা ঘৃণ্য ও জঘন্য। উনার হিংসামিশ্রিত ভাবমূর্তি প্রকাশ করছেন আবার। আমরা তার বক্তব্যকে ধিক্কার জানাই। একইসঙ্গে ঘটনাটাকেও ধিক্কার জানাই। কিন্তু একে কোনোভাবেই ধর্মের সঙ্গে যুক্ত  করা উচিত নয়।'  মুখ্যমন্ত্রীর কথিত 'লাভ জেহাদ' সংক্রান্ত বক্তব্যকে 'পাগলের প্রলাপ' বলেও মন্তব্য করেছেন আব্দুল মান্নান লস্কর।

প্রসঙ্গত, অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফন্ট বা ‘এআইইউডিএফ’ হল অসমের প্রভাবশালী মুসলিম নেতা মাওলানা বদরউদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন অন্যতম বিরোধী দল।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/২৯   

 

ট্যাগ