জ্ঞানবাপী মসজিদ ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য যোগীর, যা বললেন ওয়াইসি
ভারতের উত্তর প্রদেশে বহুলালোচিত ঐতিহাসিক জ্ঞানবাপী মসজিদ সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ফায়ারব্রান্ড নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেছেন, এটাকে মসজিদ বললে বিতর্ক হবে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি আজ (সোমবার) বলেছেন, ‘যোগী বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন, এটা সংবিধান বিরোধী। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত আইন মেনে চলা, তিনি মুসলমানদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এ বিষয়ে মুসলিমরা হাইকোর্টে আছেন এবং দু/একদিনের মধ্যেই রায় আসতে চলেছে। ওরা সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে।’
ওয়াইসি এ সময়ে বলেন, ‘তাকে ১৯৯১ সালের আইনকে মানতে হবে। এটি তাদের একটি কৌশল। প্রশ্ন হিন্দু-মুসলমানের নয়। প্রশ্ন হল- মুখ্যমন্ত্রী আইন মানবেন কী না।’ ওয়াইসি বলেন, ‘আপনি ৪০০ বছর পিছনে যেতে চান, না দেশকে ১০০ বছর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান? এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন। এ থেকে বোঝা যায়, তারা দেশকে ৪০০ বছর পিছিয়ে নিয়ে যেতে চায়।’
উপাসনার স্থান আইনের কথা উল্লেখ করে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেন, সবাইকে এটি মানতে হবে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আইনকে অস্বীকার করতে পারেন না।
বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে বহুলালোচিত ঐতিহাসিক জ্ঞানবাপী মসজিদ সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ফায়ারব্রান্ড নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ‘এটাকে মসজিদ বললে বিতর্ক হবে। ঈশ্বর যাদের দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন তারা ওখানে গিয়ে দেখুন। মসজিদের ভিতরে ত্রিশূল কেন? আমরা তো রাখিনি। সেখানে জ্যোতির্লিঙ্গ, দেবমূর্তি রয়েছে। দেয়াল চিৎকার করে কিছু বলছে। আমি মনে করি মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসা উচিত যে একটি ঐতিহাসিক ভুল হয়েছে এবং আমাদের এটি সমাধান দরকার।’
এর পরেই ওই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ‘মিম’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি। বিশ্লেষকদের মতে, যোগীর মন্তব্যে স্পষ্ট বার্তা—অতীতের অযোধ্যার বাবরী মসজিদ-রামমন্দিরের বিতর্কের মতোই আগামী দিনে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়েও পরিকল্পনা মাফিক এগোতে চাচ্ছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’-র আবেদন মেনে শীর্ষ আদালত এবং ইলাহাবাদ হাই কোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব জরিপ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া/এএসআই)কে জরিপের কাজ চালানোর উপর স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্যে নতুন করে উত্তেজনা এবং মেরুকরণ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন রাজনৈতির বিশ্লেষক এবং বিরোধীদের একাংশ।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রমোদ তিওয়ারি এমপি আজ সোমবার বলেন, ‘লোকসভা ভোটের আগে পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা চাই বিচারাধীন এই বিষয় নিয়ে প্ররোচনামূলক মন্তব্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুক আদালত।’
২০২১ সালের আগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপী মসজিদের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়েছিলেন বারাণসী দায়রা আদালতে। দায়রা আদালত নিযুক্ত কমিটি মসজিদে জরিপ এবং ভিডিয়োগ্রাফির নির্দেশ দিয়ে পর্যবেক্ষক দল গঠন করে। এর পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলা যায় বারাণসী জেলা আদালতে।
গত ২৩ জুন জেলা আদালতের বিচারক ‘সিল’ করা ওজুখানা এলাকার বাইরে এএসআই জরিপের নির্দেশ দিলেও শীর্ষ আদালত তাতে স্থগিতাদেশ দিয়ে মামলাটি ইলাহাবাদ হাই কোর্টে পাঠায়। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট দু’পক্ষের মতামত শুনে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে। কিন্তু পরবর্তী শুনানির আগেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিতর্কিত মন্তব্য প্রকাশ্যে এলো। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।