আগস্ট ০২, ২০২৩ ১২:৩০ Asia/Dhaka
  • অসমে বজরং দলের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির, রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ভারতে বিজেপিশাসিত অসমে উগ্রহিন্দুত্ববাদী বজরং দলের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে আজ (বুধবার) অসমের সাবেক বিধায়ক নাদওয়াতুত তামীর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাওলানা আতাউর রহমান মাজার ভুঁইয়া রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এটা বজরং দলের সাম্প্রদায়িক ইস্যু। সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অযথা ইস্যু খাড়া করে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এটা করা হচ্ছে। অন্য কিছু নয়।’

‘এজন্য অসম পুলিশের ডিজিপি মঙ্গলদৈয়ের এসপিকে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং সেই অনুযায়ী এফআইআর হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। ঘটনার তদন্ত চলছে’ বলেও মন্তব্য করেন অসমের সাবেক বিধায়ক নাদওয়াতুত তামীর সংগঠনের  কেন্দ্রীয় কমিটির  সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র মাওলানা আতাউর রহমান মাজারভুঁইয়া।     

মাওলানা আতাউর রহমান মাজারভুঁইয়া

জানা গেছে, ২৭ জুলাই থেকে চার দিনের কর্মসূচিতে অসমের মঙ্গলদৈ মহর্ষি বিদ্যামন্দিরে অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।

এতে রাজ্যের ২৮টি জেলার ৩৫০ জন যুবককে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই শিবিরে বন্দুক-ধনুক, লাঠি চালনা থেকে শুরু করে শারীরিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। মূলত আচমকা আক্রমণের জবাবে নিজেকে বাঁচাতে কীভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে হয় সেটাই শেখানো হয়। এছাড়াও কথিত ‘লাভ জেহাদ’-এর ঘটনা বন্ধ  করতে হাতে-কাজে লেগে পড়ার ব্যাপারেও শিবিরে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।  

বজরং দলের এক কর্মকর্তার বক্তব্য- ভারতে হিন্দুরা প্রচণ্ড বিপদের মধ্যে আছেন। হিন্দু মা-বোনেরা সুরক্ষিত নন। গোটা দেশজুড়ে চলছে ‘লাভ জেহাদ’-এর মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা। হিন্দুদের  সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্রীয় বজরং দল অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

তিনি সাফাইতে বলেন, হিন্দু সমাজের প্রতি আসা সঙ্কট মোকাবিলা করতে এ ধরণের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করছে রাষ্ট্রীয় বজরং দল। বিশেষ করে লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ৬/৭ বছর আগে লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই আইনের কোনও নামগন্ধই নেই। সেজন্য ডিসেম্বরের মধ্যে লাভ-জেহাদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন হবে। তাদের মূল লক্ষ্য লাভ জেহাদের মোকাবিলা করা সহ ভারতবর্ষকে হিন্দু রাষ্ট্র করা বলেও জানান বজরং দলের এক কর্মকর্তা।

জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় বজরং দল এভাবে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। তামুলপুর, হোজাই, ধুবড়ি, নলবাড়ি ও মঙ্গলদৈতে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ছাউনি রয়েছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪০০ ক্যাডার অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে।      

এ প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন ‘আমসু’র প্রশ্ন- মাদ্রাসায় যদি সরকার বুলডোজার চালাতে পারে, তাহলে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া স্কুলটিতে কবে বুলডোজার চালানো হবে? 

বিধায়ক অখিল গগৈ বলেছেন, খুব শিগগিরি ধর্মের নামে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হবে রাজ্যে। মণিপুর সদৃশপরিবেশ সৃষ্টি হবে। এরজন্য দায়ি হবে সরকারই।  তিনি আরও বলেন, যে স্কুলে অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ হয়েছে, সেই স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি মঙ্গলদৈয়ের প[উলিশ সুপারকে সাসপেন্ড করা উচিত। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার পদত্যাগ দাবি করেছেন অখিল গগৈ।  

সিপিএমের অসমের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রকাশ তালুকদারের দাবি, বিজেপি সেখানে ক্ষমতায় আসার পরে এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে।  

‘এআইইউডিএফ’-এর বিধায়ক রফিকুল ইসলাম প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন। 

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, ‘২০১৭ এবং ২০১৯ সালেও অনুমতি ছাড়াই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল বজরং দল। কিন্তু তখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বুলেন, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে যেখানে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, সেই সময়ে এ ধরণের প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে একাংশ প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। হিন্দুদের দুরবস্থার জন্য ‘একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ’ দায়ী বলে বিভিন্ন মহলের তরফে প্রচার করা হচ্ছে। বজরং দলও তাই করছে। এজন্য অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণ শিবির জরুরি বলছে ওরা। কিন্তু সবকিছু জানার পরও স্থানীয় প্রশাসন চোখবুজে রয়েছে। সেজন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া।      

জানা গেছে, অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ