জানুয়ারি ০৫, ২০২৪ ১৮:১০ Asia/Dhaka
  • ‘হালাল’ সনদসহ পণ্য বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা: উত্তর প্রদেশ সরকারের কাছে জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হালাল শংসাপত্রসহ পণ্য বিক্রয়, সংরক্ষণ এবং বিতরণ নিষিদ্ধ করার বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে দু’টি পৃথক আবেদনে উত্তর প্রদেশ সরকার এবং অন্যদের কাছে জবাব চেয়েছে।

উত্তর প্রদেশে হালাল প্রত্যয়িত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার এবং হালাল শংসাপত্র প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি আবেদনে আজ (শুক্রবার) সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশ সরকারকে নোটিশ জারি করেছে।  

চেন্নাই-ভিত্তিক হালাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এবং জমিয়তে উলামায়ে মহারাষ্ট্রের দায়ের করা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের অধীনে রিট আবেদনের শুনানি করেছেন  বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার সমন্বিত একটি বেঞ্চ। দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব চেয়েছে আদালত। 

আবেদনে, উত্তর প্রদেশ সরকারের উৎপাদন, বিক্রয়, সংরক্ষণ-এর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আবেদনকারীরা সাফাই দেন, এই নিষেধাজ্ঞা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং প্রতিষ্ঠিত শংসাপত্র প্রক্রিয়াগুলোকে দুর্বল করে। এতে আইনি বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করা হয়েছে। ‘হালাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ উত্তর প্রদেশ সরকার এবং এফএসএসএআইয়ের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে অভিহিত করেছে এবং আবেদনে সাফাই দিয়েছে যে এই সিদ্ধান্তটি সমগ্র দেশকে প্রভাবিত করবে, তাই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়া উচিত। 

আবেদনকারীরা হালাল সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরেরও বিরোধিতা করেছেন। শুনানির শুরুতে, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার সমন্বিত বেঞ্চ আবেদনকারীদের ইলাহাবাদ হাইকোর্টের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু আবেদনকারীর আইনজীবী সাফাই দেন যে এই সিদ্ধান্ত সমগ্র দেশে প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, হালাল প্রত্যয়িত পণ্য বিক্রি ছাড়াও উত্তর প্রদেশ সরকার তাদের স্টোরেজও নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে অন্যান্য রাজ্যেও এই পণ্যগুলোর সরবরাহকে প্রভাবিত করছে। শুধু তাই নয়, এখন অন্যান্য রাজ্যেও এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার দাবি উঠতে শুরু করেছে, তাই সুপ্রিম কোর্টেই শুনানি হওয়া উচিত। 

প্রসঙ্গত, গত বছর ১৮ নভেম্বর জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে,  উত্তর প্রদেশের ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএসডিএ) কার্যালয় হালাল শংসাপত্রসহ  খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ এবং প্রসাধনী বিক্রয় এবং স্টোরেজ নিষিদ্ধ করেছিল। আদেশে এটি জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। আরও বলা হয়েছিল যে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট, ২০০৬-এর অধীনে, কোনও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এ জাতীয় শংসাপত্র দিতে পারে না। এই কাজটি শুধুমাত্র ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অর্থাৎ এফএসএসএআই দ্বারা করা যেতে পারে।  

এ ক্ষেত্রে, হালাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, জমিয়তএ উলেমায়ে হিন্দ হালাল ট্রাস্ট, হালাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এবং জমিয়ত উলেমা মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লক্ষনৌয়ের হজরতগঞ্জ থানায় একটি এফআইআরও নথিভুক্ত করা হয়েছিল।

আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টে সাফাইতে বলেছেন, এই সব করে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে হয়রানি করা হচ্ছে। যদি লোকেরা ধর্মীয়কারণে হালাল প্রত্যয়িত পণ্য ব্যবহার করতে চায় তবে এটি অন্য মানুষের স্বার্থকে প্রভাবিত করে না।  অন্যদিকে, হালাল পণ্যের বিরোধিতাকারীরা দাবি করে আসছে যে এই ধরণের সার্টিফিকেশন অবৈধ। এই সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মোটা টাকা নেওয়া হয় এবং সেই টাকা দেশবিরোধী কাজে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ।  

যদিও ১৯৭৪ সালে ভারতে প্রথমবারের মতো হালাল শংসাপত্র চালু হয়েছিল। ভারতে হালাল সার্টিফিকেশনের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা নেই। কিছু বেসরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান এই ধরনের সনদ ইস্যু করে। 

প্রসঙ্গত, ইসলাম অনুযায়ী হালাল সনদ দেওয়া হয়। হালাল সার্টিফিকেশন এমন পণ্য হিসেবে বোঝা যেতে পারে যা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা ব্যবহার করতে পারে। মুসলিমরা শুধুমাত্র হালাল পণ্য ব্যবহার করে। হালাল প্রত্যয়িত হওয়ার অর্থ হল মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় এই জাতীয় পণ্য খেতে পারে।  

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির সিনিয়র নেতা গিরিরাজ সিং হিন্দুদের হালাল মাংসের পরিবর্তে ঝাটকা মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, হিন্দুদের বলি প্রথায় ঠিক যেভাবে এক কোপে বলি দেওয়া হয়, সেটাই হল ঝাটকা। সনাতন হিন্দুরা একসময়ে এই বলির মাংসই খেতো। কিন্তু এখন মুসলিমদের দোকান থেকে মাংস কিনে খায়। মুসলিমরা যেভাবে জবাই করে তা হল হালাল। এই হালাল মাংস হিন্দুদের ধর্মবিরোধী বলেও মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ফায়ারব্র্যান্ড নেতা গিরিরাজ সিং।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ