কোলকাতায় বিজেপির সদর দফতরের সামনে শিখদের বিক্ষোভ প্রদর্শন
(last modified Wed, 21 Feb 2024 12:19:36 GMT )
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪ ১৮:১৯ Asia/Dhaka
  • কোলকাতায় বিজেপির সদর দফতরের সামনে শিখদের বিক্ষোভ প্রদর্শন

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতায় হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সদর দফতরের বাইরে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।

গতকাল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে রাজ্যে শিখ সম্প্রদায়ের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে খালিস্তানি বলে কটাক্ষ করার অভিযোগ উঠেছে। সন্দেশখালি যাওয়ার পথে, ধামাখালিতে শুভেন্দু অধিকারীকে আটকায় পুলিশ। সেখানেই বচসার সময় আইপিএস কর্মকর্তা যশপ্রীত সিংকে খালিস্তানি বলে কটাক্ষ করার অভিযোগ ওঠে। ওই ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিজেপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের মতে, এটা যেই বলে থাকুন, অন্যায় করেছেন। তবে রাজ্য বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে, দলের নেতারা কেউ ওই মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে, বাংলায় বিজেপির একমাত্র শিখ এমপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিং অহলুওয়ালিয়া আজ (বুধবার) বলেন, ‘এক জন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে কখনো ‘খালিস্তানি’ বলা যায় না। এটা অন্যায়! যিনিই বলে থাকুন তিনি মূর্খ! তিনি ভারতের স্বাধীনতা থেকে এ পর্যন্ত দেশের জন্য শিখ সম্প্রদায়ের অবদান জানেন না।’

এদিকে, গতকাল থেকেই ওই ইস্যুতে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। আজও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কোলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শিখ সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গুরমিত সিং নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন,  আমরা চাই এ নিয়ে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ক্ষমা চান।'  আজ কোলকাতার  মহাত্মা গান্ধী রোডের গুরুদ্বার থেকে প্রতিবাদ মিছিল করেন তারা। মুরলিধর সেন লেনে বিজেপি দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন। এসময়ে তারা শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করার দাবিতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

বিজেপি’র শিখ নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেছেন,  তিনি রাজ্য, দেশ এবং বিদেশ থেকে অনেক ফোন পাচ্ছেন। তিনি এ নিয়ে তদন্তেরও আবেদন জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, 'বাংলার বিজেপি নেতারা একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে খালিস্তানি বলে অপমান করেছেন। আমি এর নিন্দা জানাই। তারা বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত নয়। আমরাও সন্দেশখালী যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়া হয়। এর মানে এই নয় যে কোনো কর্মকর্তাকে তার ধর্মের ভিত্তিতে টার্গেট করা উচিত। আইপিএস যশপ্রীত সিং নিশ্চয়ই এমন কথায় অপমানিত বোধ  করছেন। কংগ্রেসও বাংলা পুলিশের সমালোচনা করে, কিন্তু আমরা এমন মন্তব্য করি না। এ জন্য বিজেপির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, পুলিশ কর্মকর্তা যশপ্রীত সিংকে বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়,  আমি পাগড়ি পরা বলেই আপনারা আমাকে খালিস্তানি বলছেন? নাকি  আপনি এটাই শিখেছেন? একজন পুলিশ কর্মকর্তা যদি পাগড়ি পরে সততার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে, তাহলে সে কী আপনার জন্য খালিস্তানি হয়ে যাবে?  আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। আমি শুধু আমার কাজ করছি. আমি কী আপনার  ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছি? আমার ধর্মের সম্পর্কে কথা বলছেন কেন?  

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ইস্যুতে বিজেপিকে টার্গেট করে এক বার্তায় বলেছেন, বিজেপির মতে পাগড়ি পরিহিত সকলেই খলিস্তানি! বিজেপির বিভেদমূলক রাজনীতি সংবিধানের  মধ্যেও ঢুকে পড়ল আজ। এরা শিখদের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও আত্মত্যাগকে ভুলে গেছে। কেউ যদি বাংলার সামাজিক সম্প্রীতি শান্তি ভঙ্গ করার চেষ্টা করে, তাহলে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ওই ইস্যুতে বিজেপিকে টার্গেট করে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এমপি এক বার্তায় বলেছেন, ' রাজনীতির বাজার সাজাতে গিয়ে, বিজেপি যে ঘৃণার চাষ করছে, তার বিষ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিষে অন্ধ হয়ে যাওয়া লোকজন না কৃষক দেখছে, না জওয়ান, না খাকির সম্মান। দেশবাসী আইপিএস কর্মকর্তা যশপ্রীত সিংয়ের সঙ্গে আছে।'  

প্রসঙ্গত, ভারতের শিখদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নাম– খালিস্তান মুভমেন্ট বা খালিস্তান আন্দোলন। ভারতের পাঞ্জাবে ১৯৮০-র দশকে এ আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এর জের ধরে অনেক সহিংসতা হয়েছিলো এবং মৃত্যু হয়েছিলো বহু মানুষের। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানের পর ওই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিদেশে অভিবাসী শিখদের একটি অংশ ওই দাবিতে তাদের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।#        

 

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।