জার্মানির বার্লিনে ইরানের বিপ্লব বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কথিত সমাবেশের নেপথ্যে
(last modified Sun, 23 Oct 2022 12:34:44 GMT )
অক্টোবর ২৩, ২০২২ ১৮:৩৪ Asia/Dhaka

ইরানের সাম্প্রতিক গোলযোগ ও সহিংসতায় সমর্থন দেওয়ার অজুহাতে কথিত ইরান বিরোধী সর্বাত্মক সমাবেশ আয়োজনের জন্য পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পর অবশেষে আজ শনিবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এই সমাবেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে  এখানে বেশ কিছু ভাড়াটে সদস্য এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেমন কমলেহ এবং ডেমোক্রেট, আহভাজিয়া, বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী  গোষ্ঠী, মোনাফেকিন গোষ্ঠী এবং পাহলভিপন্থীদের উপস্থিতি। ওই সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা তাদের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে তারা তাদের সত্যাকারের পরিচিতি বিশ্বের সামনে এমনভাবে উন্মোচিত করেছে যেখানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে বিভক্ত করে  বিভিন্ন জাতিগত রাষ্ট্র গঠনে তাদের মিথ্যা ও কাল্পনিক দাবির বিষয়টি ফুুটে উঠেছে। অন্যদিকে এই সমাবেশ থেকে প্রকাশিত ছবিতে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর কুখ্যাত পতাকা কিছু ভাড়াটিয়া সদস্যের হাতেও দেখা গেছে যার মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে বিপ্লব বিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি তেল আবিবের সমর্থন রয়েছে।

কমলেহ এবং আল-আহবাজিয়ার-এর মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাহলভিপন্থী ও মোনাফেকিনদের ব্যাপক উপস্থিতি আবারও প্রমাণ করেছে যে তাদের লক্ষ্য কেবল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে উৎখাত করা নয় বরং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলোর একটি ইরানকে ভেঙে ফেলা। 

ইসলামী বিপ্লবের বিজয় এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের শুরু থেকেই বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতার দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে এই গোষ্ঠীগুলো ব্যাপক বিদেশী সমর্থন নিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থাকে দুর্বল ও উৎখাত করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া  এসব গোষ্ঠী কুর্দিস্তান, খুজেস্তান এবং সিস্তান ও বেলুচিস্তানের মতো অঞ্চলের মানুষের বিরুদ্ধে সব ধরনের অপরাধ করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং তারা সবসময় শত্রুর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে।

কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পরপরই ইরানের কুর্দি অঞ্চলে কেবল বিচ্ছিন্নতাবাদের পতাকা উড়াইনি বরং  ইরানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের সময় তারা ইরাকের বাথ সরকারকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল এবং শত্রুর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল।এছাড়া খুজেস্তানে আরব বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আহভাজিয়ারা বিপ্লবের পরপরই ইরানের এই তেলসমৃদ্ধ প্রদেশে সব ধরণের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।  এই গোষ্ঠীটি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের সময়ও সরাসরি ইরানী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইরাকি বাথ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে। অন্যদিকে জইশ আল-আদল গ্রুপ (জৈশ আল-জালুম) আঞ্চলিক শক্তিগুলার আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তায় সিস্তান ও বেলুচিস্তানের বিভিন্ন অংশে সশস্ত্র হামলা ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে এবং এই প্রদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অসংখ্য অপরাধযজ্ঞ চালিয়েছে। 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোনাফেকিন গোষ্ঠী ও পাহলভি রাজতন্ত্রপন্থীরা নিজেরকে ইরানের জাতীয় ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সমর্থক দাবি করলেও বাস্তবে তারা এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী দলে যোগ দিয়েছে। ইরান বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর পতাকার পাশে রাজতন্ত্রপন্থিদের পতাকা প্রদর্শন এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতীক ও পতাকা একে অপরের পাশে স্থাপন করার মাধ্যমে বিপ্লব বিরোধীদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার প্রতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

আরেকটি বিষয় যা উল্লেখ করা উচিত তা হল কুর্দিস্তান এবং পশ্চিম আজারবাইজানে কোমলে ও ডেমোক্রেট, খুজেস্তানে আল-আহভাজিয়া এবং সিস্তান ও বেলুচিস্তানে জইশ আল-আদল (জিশ আল-জালম) গোষ্ঠীগুলো মাহসা আমিনির মৃত্যুকে পুজি করে কিছু শহর ও অঞ্চলে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছে। তারা অজ্ঞাত লোকদের উস্কে দেয়ার পাশাপাশি স্টেশনে হামলা, সরকারি স্থাপনা এবং সম্পত্তিতে আগুন দেওয়া এবং সশস্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে সরাসরি ভূমিকা পালন করেছে। কোমলে গ্রুপের নেতা ইব্রাহিম আলিজাদেহ একটি ক্লিপ প্রকাশ করে এসব উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করার এবং ইরানে সাম্প্রতিক দাঙ্গা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করার কথা স্বীকার করেছেন।#

পার্সটুডে/ এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ