বিপ্লব বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল
ইসলামি ব্যবস্থাই চায় ইরানি জাতি; বিনম্র শ্রদ্ধা জানালেন সর্বোচ্চ নেতা
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ইরানের তাবরিজ শহরে ১৯৭৮ সালের গণঅভ্যুত্থানের ৪৫তম বার্ষিকী পালিত হবে। ইরানে ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার প্রায় এক বছর আগে ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই গণঅভ্যুত্থান ঘটে। সেদিন শাসক গোষ্ঠীর পেটোয়া বাহিনীর হামলায় বহু মানুষ হতাহত হন।
এই দিবসকে সামনে রেখেই গতকাল (বুধবার) পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশ থেকে তেহরানে আসা হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তাবরিজ হচ্ছে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের প্রধান শহর।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ইসলামি বিপ্লব দিবসের পর এই প্রথম কোনো বড় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। এ কারণে প্রথমেই তিনি ইসলামি বিপ্লব দিবসের শোভাযাত্রায় ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণের জন্য ইরানি জাতিকে ধন্যবাদ জানান। ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর এই নেতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরণে পরম বিনয় ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, 'বিপ্লব বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় ব্যাপক উপস্থিতির জন্য ইরানি জাতির প্রতি অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি। এই উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানানোর যোগ্য আমি নই, আল্লাহতায়ালা আপনাদেরকে ধন্যবাদ দেবেন। মহান আল্লাহ আপনাদের কাজের পুরস্কার দান করুন!'
তিনি আরো বলেন, 'এ বছরের বিপ্লব বিজয়ের দিবস ছিল ঐতিহাসিক। দেশের সর্বত্র মানুষ বীরত্বগাথা সৃষ্টি করেছেন। শত্রুপক্ষের ব্যাপক প্রচার ও উসকানি এবং দেশের কিছু অংশে শূন্য ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রাও ইরানি জনগণের (বিপ্লবী) উত্তাপকে পরাস্ত করতে পারেনি এবং জনগণ ব্যাপক সংখ্যায় এবারের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছে। ১১ ফেব্রুয়ারিতে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের দিবসে ইরানি জাতির বার্তা ছিল এই যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সকল শত্রু এবং ইহুদিবাদী ও মার্কিনীদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া-সাম্রাজ্য তাদের নিজেদের বক্তব্যকে বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। ইরানি জাতির বক্তব্য অন্যদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।'
গতকালের ভাষণে তিনি কিছু অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো কেউ কেউ বলে থাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কেবল প্রতিরক্ষা বা সামরিক খাতেই জোর দিচ্ছে, অন্য খাতগুলো উপেক্ষিত। এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন- বলা হচ্ছে, আমরা কেন অস্ত্র, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। এর উত্তর হলো, প্রথমত এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। যে দেশের শত্রু আছে সে দেশকে আত্মরক্ষার কথা ভাবতে হবে। জ্ঞান-বুদ্ধিও এটাকে সমর্থন করে। ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে: ‘তোমরা তাদের মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তুত রাখো।’ দ্বিতীয়ত, প্রতিরক্ষা খাতের তুলনায় অন্যান্য খাতে কি কম কাজ হয়েছে? শিল্প, অবকাঠামো, রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণসহ এ ধরণের বিভিন্ন খাতে প্রতিরক্ষা খাতের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাজ হয়েছে।
ইরানে কিছু দিন আগেও বিদেশি শত্রুদের উসকানিতে সহিংসতা ও নৈরাজ্য ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়েছে অনেক। একইসঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কঠোরতম নিষেধাজ্ঞার পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। ইরানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে শত্রুদের গণমাধ্যম থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, 'আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সামনে স্পষ্ট দিগন্ত দেখা গেলে কিছু সময় পর আমরা তাতে পৌঁছে যাই। ইরানি জাতির শক্তি-সামর্থ্য এবং দেশের সুযোগ ও সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইনশাআল্লাহ ইরানি জাতি আরও বড় বড় সাফল্য অর্জন করবে।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ৪৪ বছরে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সর্বাত্মক শত্রুতা সত্ত্বেও ইরানের ইসলামি সরকার যে সাফল্য দেখিয়েছে তা বিস্ময়কর। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই ইসলামি এই দেশটি ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।#
পার্সটুডে/এসএ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।