শহীদ জেনারেল গোলাম আলী রশীদ সম্পর্কে কী জানি?
(last modified Sat, 28 Jun 2025 13:20:14 GMT )
জুন ২৮, ২০২৫ ১৯:২০ Asia/Dhaka
  • শহীদ জেনারেল গোলাম আলী রশীদ সম্পর্কে কী জানি?

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলী রশিদ দেশের প্রতিরক্ষা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জেনারেল গোলাম আলী রশিদ গত ১৩ জুন তারিখে ইরানের কিছু সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক স্থাপনায় ইহুদিবাদী সরকারের আক্রমণে শহীদ হন। পার্স টুডে-র এই নিবন্ধে জেনারেল রশিদের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলী রশিদ 

জন্ম

সরদার গোলাম আলী রশিদ ১৯৫৩ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের দেজফুলে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন কামার এবং তার মা ছিলেন একজন গৃহিণী এবং তার ৬ বোন এবং ২ ভাই ছিল। রশিদ ১৯৮২ সালে বিয়ে করেন এবং তার বেশ কয়েকটি সন্তান ছিল। ইহুদিবাদী সরকারের বাড়িতে আক্রমণে সরদার রশিদের সাথে তার এক সন্তান শহীদ হয়।

শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলী রশিদ 

শিক্ষা

তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক ভূগোলে বিএ এবং এমএ এবং তারবিয়াত মোদারেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক ভূগোলে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল "প্রতিরক্ষা কৌশল প্রণয়নে ভূ-রাজনৈতিক কারণের ভূমিকা"। রশিদ জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইমাম হুসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য ছিলেন।

শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলী রশিদ 

ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের আগে

জেনারেল রশিদ তার যৌবনে পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন এবং ১৯৭৬ এবং ১৯৭৭ সালে শাসকগোষ্ঠীর নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং এক বছরের জন্য কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। কারাগারে, তিনি মোহসেন রেজাই এবং আলী শামখানির সাথে দেখা করেন যারা পরে ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের উচ্চপদস্থ কমান্ডার হয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে, তাকে আবার ইসফাহানে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এবার তেহরানে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে তিনি আরও এক বছর কারাগারে কাটান। মুক্তির পর, তিনি মানসুরুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে তার কার্যক্রম চালিয়ে যান, যা দেজফুল, আহভাজ এবং খোররামশাহর শহরে ধর্মীয় জঙ্গি বাহিনীর ইউনিয়ন দ্বারা গঠিত হয়েছিল।

শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলী রশিদ 

বিপ্লবের বিজয় এবং পবিত্র প্রতিরক্ষা

ইসলামি বিপ্লবের বিজয় এবং বিপ্লবী গার্ড বাহিনী গঠনের পর জেনারেল রশিদ দেজফুল আইআরজিসির গোয়েন্দা ও অপারেশনের উপ-পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পবিত্র প্রতিরক্ষার সময় তিনি বেশিরভাগ প্রধান অভিযানে আইআরজিসির একজন সিনিয়র কমান্ডার হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৩ সালে খাইবার অপারেশনের একই সময়ে খাতামুল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর সেনাবাহিনী এবং আইআরজিসির মধ্যে একটি যৌথ কৌশলগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয় এবং জেনারেল রশিদ এই সদর দপ্তরের কাঠামোর মধ্যে সামরিক অভিযান পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

শহীদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলাম আলী রশিদ 

কৌশলগত দায়িত্ব

সামরিক চাকরির সময় জেনারেল রশিদ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন যার মধ্যে ছিল ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আইআরজিসি জয়েন্ট স্টাফের অপারেশনস বিভাগের ডেপুটি এবং ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের গোয়েন্দা ও অপারেশনস বিভাগের ডেপুটি। ১৯৯৯ সালে তিনি মেজর জেনারেল পদে সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৭ বছর ধরে এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার আদেশে জেনারেল রশিদকে খাতাম আল-আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং তার শাহাদাত পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। একই সময়ে তিনি সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিবালয়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

বিপ্লবের নেতা এবং ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের সাথে জেনারেল রশিদ

বিজয়ের পুরষ্কার প্রাপ্তি

তিনি ইরানের প্রতিরক্ষা কৌশল বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন যা দেশের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছিল। জেনারেল রশিদ ভবিষ্যতের যুদ্ধের বৈশিষ্ট্যের আলোকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণাত্মক শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং প্রতিরক্ষামূলক-আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই অগ্রগতির মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলায় সামরিক সক্ষমতা জোরদার করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সর্বোচ্চ নেতার কাছ থেকে বিজয়ের পুরষ্কার প্রাপ্তি এই ক্ষেত্রে তার অসামান্য সেবার প্রমাণ।

জেনারেল রশীদ

নিষেধাজ্ঞা

২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ গোলাম আলী রশিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মেজর জেনারেল রশিদ গাজায় ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধ সম্পর্কে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণের উপর আক্রমণে আমেরিকা ইসরায়েলি অপরাধীদের স্পষ্ট সহযোগী।

পার্সটুডে/এমবিএ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।