জানুয়ারি ০৬, ২০২৪ ১৪:৫৪ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজকের আসরে আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি গল্প। গল্পটি হলো:

পার্বত্য উপত্যকায় একটা কোয়েল বসবাস করতো। এই কোয়েলটি দেখতে অন্য কোয়েলদের তুলনায় বেশ সুন্দর এবং অভিজাত ছিল। এতো বেশি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ছিল যে শিকারীদের দৃষ্টিতে পড়ে গেল। শিকারীরা যে-কোনো কৌশলে ওই কোয়েলটিকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলো। এমনকি শিকারী পাখিরা পর্যন্ত তাকে পেতে চাইতো। 

কিন্তু এই কোয়েলটি ছিল বেশ চালাক এবং বুদ্ধিমান। তার নাম ছিল 'খোশরু'। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়াবে 'সুন্দর চেহারা'। আমরা খোশরু বলেই তাকে ডাকবো। খোশরু তার জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে অচেনা-অজানা কোনো পাখির সঙ্গে এক জায়গায় বসতো না। একদিন সে তার বাসার কাছেই মন প্রাণ খুলে ইচ্ছেমতো গান গাচ্ছিলো। ওই গান শুনতে পেয়েছিল আকাশ দিয়ে উড়েড় যাওয়া একটি বাজপাখি। নীচে তাকিয়ে সে খোশরু'কে দেখতে পেলো এবং তার গান শুনে বাজপাখির হৃদয় ভরে গেল। এমন ভালোই লাগলো তার কাছে যে সে একেবারে খোশরুর প্রেমেই পড়ে গেল। কোনোভাবেই সে খোশরুকে ফেলে রেখে সামনের দিকে যেতে পারলো না। 

খোশরুকে দেখে বাজপাখি মনে মনে বললো: সবারই একজন সদয় এবং উদার মনের বন্ধু প্রয়োজন পড়ে। এই কোয়েলটির সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব পাতাতে পারতাম তাহলে কতোই না ভালো হতো। ওকে দেখে, ওর সঙ্গে জীবন কাটিয়ে আমি আমার সকল দু:খ-বেদনা ভুলে থাকতে পারতাম। উড়ন্ত অবস্থায় এইসব ভাবতে ভাবতে বাজপাখি আস্তে করে নীচে নেমে এলো এবং ধীরে সুস্থে কোয়েলের দিকে গেল। খোশরু বাজপাখিকে দেখেই ভয়ে তার ছোটো দুটি পা টিপে টিপে দুই পাথরের ফাঁক দিয়ে ভেতরে লুকিয়ে আশ্রয় নিলো। বাজপাখি ওই গর্তের মুখে এসে প্রশান্ত কণ্ঠে বললো: হে সুন্দর কোয়েল! আমাকে ভয় পেও না! আমি তোমার বন্ধু এবং তোমাকে আমি ভালোবাসি।

আগে তো তোমার ওই রূপ-সৌন্দর্যের ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম। এখন তোমার সকল রূপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে চাচ্ছি বন্ধু হতে। কোয়েল সময় না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রূঢ় কণ্ঠে বললো: হে মহাবীর! তুমি আমাকে ছেড়ে এখান থেকে চলে যাও! তোমার কাজ হলো শিকার করা। যাও! অন্য কোনো বোকা প্রাণী খুঁজে নাও! আমাকে তুমি প্রতারিত করতে পারবে না। বাজপাখি বললো: হে কোয়েল! তুমি যেভাবে বলছো, কোয়েলের তো অভাব নেই, আমারও কাজ হচ্ছে শিকার করা-ঠিকই আছে। কিন্তু প্রতারণা করা, কাউকে ফাঁদে ফেলা তো দুর্বলদের কাজ। আমার যে শক্তিমত্তা, তাতে কাউকে তোষামোদ করার প্রয়োজন পড়ে না। শিকার করা যদি আমার উদ্দেশ্য হতো তাহলে খুব সহজেই অন্য কোনো কোয়েলকে শিকার করতে পারতাম। 
জি, কোয়েলকে বাজপাখি বলছিল: প্রকৃত সত্য হলো তুমি আমার মন কেড়ে নিয়েছো। মন চায় তোমার বন্ধু হই। তোমার সঙ্গে জীবন কাটাই। কোয়েল বললো: সত্যও যদি বলে থাকো কিংবা আমার আচরণে যদি মুগ্ধ হয়ে থাকো তারপরও এটা আমাদের বন্ধুত্বের কোনো কারণ হতে পারে না। আমি নিশ্চিত তোমার প্রেম দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। কেননা তুমি হচ্ছো শিকারী পাখি আর আমি যে-কোনো মুহূর্তে তোমার জন্য সুস্বাদু ভোজে পরিণত হবো। সুতরাং আমাদের মাঝে বন্ধুত্বের চিন্তাটা অযৌক্তিক। পানি আর আগুন যেমন একত্রে বাস করতে পারে না তেমনি আমাদের সহাবস্থানেরও ধ্বংসের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে। বাজপাখি বললো: তুমি খুব ভালো করেই জানো আমার খাবারের জন্য তেমন চিন্তা করতে হয় না। সে কারণে তোমার কোনোরকম ক্ষতি করার কোনো কারণই নেই। আমরা বন্ধু হলে তোমার ভালো ফায়দাও হতে পারে।

প্রথমত আমার স্বজাতিরা তোমার কোনো ক্ষতি কখনোই করবে না বরং সম্মান করবে। দ্বিতীয়ত, আমার বাসাটা উঁচু গাছের মাথায় মনোরম এবং আরামদায়ক জায়গায়। তোমাকে আমি সেখানে নিয়ে যাব। সেখান থেকে তুমি মরু-প্রান্তরকে তোমার পায়ের নীচে দেখতে পাবে। তৃতীয়ত আমি তো শক্তিশালী। সবসময় তোমার জন্য সর্বোত্তম খাবার এবং ঘরের আয়োজন করবো। সারাদিন তোমাকে আমি যেসব জায়গায় নিয়ে যাবো তোমার সঙ্গীরা সেসব জায়গায় যাবার জন্য সবসময় প্রত্যাশা করে কিন্তু যেতে পারে না। সবমিলিয়ে আমি তোমার পরিপূর্ণ খুশির জন্য সবকাজ করবো। তুমিই একমাত্র কেউ যাকে আমি পছন্দ করি। আমাকে হতাশ করো না। 

কোয়েল পাখি বাজপাখির ভালোবাসার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল। তার অন্তরটা গলে গেল। বললো: ঠিক আছে। তবে তুমি যেহেতু পাখিদের সেরা হয়ে আমাকে ভালোবাসো, এমনও তো হতে পারে আমাদের এই সুখ-আনন্দ দেখে কারো হিংসা হতে পারে। তখন সে চেষ্টা করবে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে এবং পরস্পরের প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে। এরকম পরিস্থিতিতে কী করবো আমরা? কিংবা যদি কোনো কারণে আমার ওপর তোমার রাগ হয় এবং আমাকে কষ্ট দিতে চাও, তখন তো কেউ তোমাকে বাধা দিতে পারবে না। সে কারণে আমার জণ্য এটাই ভালো নিজের সুন্দর প্রশান্ত জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকি, কোনোরকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম না দিই।

বাজপাখি বললো: প্রিয় আমার! কী সব আজক আজব কথা বলছো। আমি কথা দিচ্ছি কারো কথায় আমি কান দেবো না। তোমাকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখবো এবং কখনোই কষ্ট দেবো না। বাজপাখির এতোসব মিষ্টিকথা আর প্রতিশ্রুতির কথায় মন গলে গেল কোয়েলের। শেষ পর্যন্ত পাথরের ফোকর থেকে বেরিয়ে এলো। কোয়েল আবারও বাজপাখির দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনরাবৃত্তি করতে বললো। বাজপাখি আবারও কথা দিলো এবং ভালোবেসে তার বিস্তৃত দুই পাখার মাঝখানে বসিয়ে পার্বত্য চূড়ার গাছের মগডালে তার বাসায় নিয়ে গেল।#

পার্সটুডে/এনএম/৬/১২২

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ

ট্যাগ