কেন দায়েশ প্রতিরোধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিল, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নয়?
(last modified Wed, 17 Apr 2024 12:32:50 GMT )
এপ্রিল ১৭, ২০২৪ ১৮:৩২ Asia/Dhaka
  • কেন দায়েশ প্রতিরোধ শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিল, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নয়?

পার্সটুডে-পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গেরিলা গ্রুপ তৈরির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল।

ওই গোষ্ঠিটির নাম আইএসআইএস বা দায়েশ। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি মূলত প্রতিরোধ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। যেমন তারা ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং ইরানের বিরুদ্ধেই ধ্বংসাত্মক অভিযান চালায়। অথচ এই দেশগুলোর প্রতিরোধ শক্তির মূলমন্ত্র ছিল পশ্চিম এশিয়া থেকে আমেরিকার সামরিক বাহিনী এবং তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে অপসারণ করা।

তদন্তে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চলমান অপরাধ এবং লেবানন ও সিরিয়ায় হামলাসহ ইরানি কনস্যুলেটে হামলার পর এ অঞ্চলে যুদ্ধ সম্প্রসারণের ইহুদিবাদী প্রচেষ্টার সাথে আইএসআইএস সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংসাত্মক আচরণের মিল রয়েছে।

এই গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জটি এখন সামনে এসেছে, ইসরাইল কি পশ্চিম এশিয়ার প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা সম্পন্ন করতে চাচ্ছে? যে প্রকল্পটি এর আগে আইএসআইএস বাস্তবায়ন করেছিল।

এছাড়াও, কিছু ভার্চুয়াল অ্যাক্টিভিস্টের মধ্যে এই প্রশ্নটিও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে যে- কেন আইএসআইএস আপাত ইসলামী স্লোগান এবং আদর্শ ধারণ করা সত্ত্বেও মুসলিম বিরোধী ইসরাইলের দিকে একটি গুলিও ছোঁড়েনি?

সিরিয়া ও ইরাকের মতো ইসলামি নামের দেশগুলোই কেন তাদের টার্গেট ছিল? কেন পরিচিত কিছু আরব দেশ যেমন জর্ডান এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল কেন তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল না?

এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রকাশিত ভিডিওগুলো পরীক্ষা করলে একটি সত্য বেরিয়ে আসে। সেটা হলো নিঃসন্দেহে ভিডিও এবং মিডিয়া প্রযোজনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পেশাদার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে দায়েশকে বিবেচনা করা যায়। মানুষ পুড়িয়ে মারা বা হত্যা করার দৃশ্যগুলো যেরকম পেশাগতভাবে শুটিং করা হয়েছিল, সেগুলো হলিউডের সিনেমার দৃশ্যগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।

আইএসআইএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিশাল গাড়ি বহরের দৃশ্য

এই দৃশ্যগুলো বিন্যাসের জন্য আর্থিক এবং মিডিয়া শক্তির প্রয়োজন ছিল যা কেবলমাত্র বৃহৎ ফিল্ম এবং মিডিয়া সংস্থাগুলোই বহন করতে পারে। এর অর্থ হল আর্থিক, রাজনৈতিক গণমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়েই পেশাদারি বৈশিষ্ট্যসহ সন্ত্রাসবাদের একটি নয়া সংস্করণ গঠিত হয়েছে আইএসআইএস বা দায়েশ নামে।

যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উপনিবেশবিরোধী প্রতিরোধের প্রবাহকে আল-কায়েদার মতো ধ্বংস করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে পশ্চিমা শক্তিগুলোর উপস্থিতির ন্যায্যতার পক্ষে অবস্থান নেবে ।

হিলারি ক্লিনটন তার এক বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন যে আইএসআইএস বা দায়েশ আমেরিকার চিন্তা এবং পরিকল্পনার ফসল। বরাবরই ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন  ট্রাম্প। 

ইরাকের নেইনাভা শহরে আইএসআইএসের বোমা হামলা

দায়েশ তাদের সম্প্রসারণবাদী নীতি এবং আমেরিকার উপস্থিতিকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য এ অঞ্চলে আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মডেল হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। উপরন্তু, এই গোষ্ঠীটি বিশ্বের কাছে ইসলামের পরিবার-ভিত্তিক ধর্মের একটা বিকৃত সংজ্ঞা ও স্বরূপ তুলে ধরেছে।  

এই অঞ্চলের ভূগোল পরিবর্তনের জন্য ২০০০ সালে কিছু বিশ্বশক্তি 'নতুন মধ্যপ্রাচ্য' গড়ার নামে যে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করার জন্য আইএসআইএস বা দায়েশের সৃষ্টি হয়েছিল।

ওই পরিকল্পনায় আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী দেশগুলাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

অনেকের কাছে আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে কেন দায়েশ ইসলামের নামে মুসলমানদের হত্যা করে অথচ ইহুদিবাদীরা তাদের শত্রু নয়!

আইএসআইএসের ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি ছিল ইরাক ও সিরিয়ার ঐতিহাসিক মসজিদ এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা

প্রকৃতপক্ষে, আইএসআইএস-এর মতো গোষ্ঠীগুলির পরিকল্পনায় যে মূলনীতি পালন করা হয়েছিল তা হলো কোনোভাবেই আমেরিকা কিংবা তাদের মিত্র শক্তির কোনও ক্ষতি করা যাবে না। তাই আইএসআইএস ইরাক, সিরিয়া এবং কখনও কখনও লেবাননে যুদ্ধ করে ধ্বংস এবং হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল কিন্তু ইসরাইলি ভূখণ্ডে কিংবা তাদের আঞ্চলিক মিত্র জর্ডানে তারা পা রাখেনি।

এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে ইরানের প্রতিরোধকামী চিন্তা এবং আঞ্চলিক আলোচনার প্রভাবে আইএসআইএস মোকাবেলার জন্য নতুন একটি মডেল তৈরি করা হয়েছিল। ইরাক ও সিরিয়ায় জনপ্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলনের মডেল তৈরি করা হয়। ওই প্রতিরোধ শক্তি দুই দেশেরই সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। লেবাননের প্রতিরোধ বাহিনী হিজবুল্লাহও এই প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম মডেল। ইরানের বিখ্যাত সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির মতো অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং পরামর্শে আইএসআইএস-এর সেই ভূগোল শেষ পর্যন্ত চিরতরে ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

যাই হোক, তখন থেকেই জোর দেওয়া হয়েছে যে দায়েশের উৎখাত এবং স্থায়ী পতনের জন্য এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আদর্শিক ভিত্তি ধ্বংস করা প্রয়োজন। তাদের ওই তাত্ত্বিক আদর্শ দৃশ্যত কিছু ইসলামী দেশ থেকেই গৃহীত হয়েছিল যেসব দেশ পরোক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র।

মেহেদী আজিজির ডায়েরি থেকে নেওয়া / মেহের-নিউজ

আইএসআইএসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রধান কমান্ডার সরদার কাসেম সোলেইমানি

পার্সটুডে/এনএম/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন

ট্যাগ