মে ০৫, ২০২৪ ১৯:০২ Asia/Dhaka
  • ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তেহরানের অভিযোগের বৈধতা সম্পর্কে ৫টি ব্যাখ্যা

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে মার্কিনীরা বারবার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে না চলার অভিযোগ করে আসছে এবং এই দাবিটিকে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে ওয়াশিংটন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ব সমাজ অধিকৃত অঞ্চলের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবের প্রতি আমেরিকানদের অমনোযোগীতাকেও বারবার প্রত্যক্ষ করেছে।

গত ১ মে হাজার হাজার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর সমাবেশে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার ভাষণে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে যা বিশেষভাবে পর্যালোচনা করা উচিত এবং বিশ্লেষণ করা উচিত। তিনি তার বক্তৃতার একটি অংশে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও ধ্বংস ছাড়া ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ চলাকালে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আমেরিকার আচরণ প্রমাণ করে যে মার্কিন সরকারকে  অবিশ্বাস করার ইরানের নীতিগত যে অবস্থান রয়েছে তা পুরোপুরি যৌক্তিক। অধিকৃত অঞ্চলের বর্তমান মাসগুলোর পরিস্থিতির দিকে নজর দিলে মার্কিনীদের দ্বিচারিতা আরো প্রকাশ পায় যেখানে আমেরিকার রাষ্ট্রনায়করা এখনও আটকে আছে।

গত ৪৫ বছর ধরে আমরা তেহরান এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে বিরোধের ধারাবাহিকতা প্রত্যক্ষ করছি। মার্কিন কর্তৃপক্ষ ক্রমাগতভাবে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রও এর পাল্টায় বিভিন্ন সমস্যা উত্থাপন করেছে। এখন, অতীতের তুলনায় বিশ্বের জনমতের রায় যা স্পষ্টভাবে সবার কাছে উন্মোচিত হয়েছে তা হল ওয়াশিংটন সম্পর্কে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তেহরান যে অবস্থান গ্রহণ করেছে তার সত্যতা, যা আমরা নীচে পরীক্ষা করব।

১. ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মতো স্বাধীন সরকারগুলোর উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি ব্যবহার করে আসছে যা গত কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধের মূল কারণ হিসেবে তেহরান তুলে ধরেছে। এখন সাম্প্রতিক মাস এবং সপ্তাহগুলোতে আমরা আমেরিকাদের দ্বৈত নীতির স্পষ্ট উদাহরণ  প্রত্যক্ষ করছি যাতে প্রমাণ হয় যে ইরান আমেরাকিকে যে অবিশ্বাস করে তার পক্ষে সম্পূর্ণ বৈধতা রযেছে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আমেরিকান সরকার সর্বদা "মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃত্বের দাবিদার" হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, বিশ্ব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দখলকৃত অঞ্চলে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে ওয়াশিংটনের নীরবতা এবং এমনকি সেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ করেছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে মার্কিন সরকার এমন আচরণ করছে যেখানে আমেরিকানরা খোদ বিভিন্ন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গাজায় ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর অপরাধের কথা বারবার স্বীকার করেছে।

২. "আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা" হল এমন একটি প্রস্তাব যা আমেরিকান কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের মুখোমুখি হওয়ার সময় বহুবার জোর দিয়েছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যাইহোক আমরা ইহুদিবাদী শাসনের সমর্থনে ওয়াশিংটনের দ্বারা এই বিষয়টি বারবার লঙ্ঘন করতে দেখেছি। এখন বিশ্বের জনমত তেল আবিবের অপরাধকে সমর্থন করার জন্য এই এলাকায় ওয়াশিংটনের দ্বৈত নীতি প্রত্যক্ষ করছে।

৩. সাম্প্রতিক দশকগুলিতে আমেরিকানরা বারবার ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া মেনে না চলার অভিযোগ করেছে এবং এই দাবিটিকে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ব অধিকৃত অঞ্চলের বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবের প্রতি আমেরিকানদের অমনোযোগীতাকে বারবার প্রত্যক্ষ করেছে।.

এই কারণেই কিছু আমেরিকান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ইহুদিবাদী শাসনের নেতাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘোষণা করার সম্ভাবনার প্রতিক্রিয়ায়, হুমকি দিয়েছিলেন যে এই বিষয়টি সত্য হলে তারা এই আদালতকে অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা নেবে। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া আমেরিকানদের দ্বৈত মানের আরেকটি স্পষ্ট প্রকাশ, যা আজকাল বিশ্বের জনমতের রায়ের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে।

৪. কয়েক বছর ধরে মার্কিন সরকার মানবাধিকারের দাবি তুলে বিশ্বের জনমতের কাছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে "মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী" হিসাবে চিহ্ণিত করার চেষ্টা করছে। গাজায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞের নিন্দায় শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিক্ষোভ অত্যন্ত  সহিংস হাতে দমন প্রত্যক্ষ করার পরও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিশ্ব এ ব্যাপারে মার্কিন সরকারের নীতি আগের চেয়ে বেশি উপলব্ধি করেছে।

আমেরিকার পুলিশ যেভাবে নিজ ছাত্রদের ছাত্রদের প্রচণ্ডভাবে মারধর করছে বা নির্যাতন করছে অন্য দেশগুলো যদি এমন কোনো কাজ করত তাহলে তারা তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুমকি দিত এবং নিজেদেরকে সেখানে মানবাধিকার  রক্ষক হিসেবে জাহির করতো।

৫- আরেকটি বিষয় যা বিবেচনায় নেওয়া উচিত তা হল ইরান সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অনেক বার  জোর দিয়ে বলেছে যে ফিলিস্তিনকে পশ্চিম এশিয়ার প্রধান ইস্যু হিসাবে বিবেচনা করা উচিত এবং  তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এখন এই অঞ্চল ও বিশ্বের অনেকেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অবস্থানের যৌক্তিকতা স্বীকার করতে শুরু করেছে ঠিক যেমন আজ তারা ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর মাধ্যমে সংঘটিত "বর্ণবাদ", "অপরাধযজ্ঞ", "শিশু হত্যা", "আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অসম্মান" ইত্যাদির প্রতি স্বীকৃতি দেয়া শুরু করেছে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ