ইহুদিবাদী ইসরাইল, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে কীভাবে পরাজিত করল ইরান?
(last modified Mon, 09 Sep 2024 03:58:31 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৪ ০৯:৫৮ Asia/Dhaka
  • সাগরে তেল ট্যাংকার যুদ্ধ: ইহুদিবাদী ইসরাইল, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে কীভাবে পরাজিত করল ইরান?
    সাগরে তেল ট্যাংকার যুদ্ধ: ইহুদিবাদী ইসরাইল, ব্রিটেন ও আমেরিকাকে কীভাবে পরাজিত করল ইরান?

পার্সটুডে- আন্তর্জাতিক পানিসীমায় দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে নীরবে ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ চলছিল; যে যুদ্ধের প্রধান টার্গেট ছিল সেইসব তেল ট্যাংকার যেগুলো ইরানি তেল বহন করছিল। ইরানি জাহাজগুলোতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গুপ্ত হামলার জের ধরে ইরান সাগরে অনানুষ্ঠানিক গোপন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে; যে যুদ্ধে আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ইরানি জাহাজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

একবার ভাবুন তো, আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ইরানের তেল বহনকারী বিশাল বিশাল ট্যাংকার শান্তভাবে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাচ্ছে অথচ এসব জাহাজের নাবিকরা  জানতেই পারছেন না তাদেরকে লক্ষ্য করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে শত্রুর সমরাস্ত্র। হঠাৎ করে দেখা গেল, এসব তেল ট্যাংকার একের পর এক নানা ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ১৪টি ইরানি তেল ট্যাংকার হামলার শিকার হয়েছে অথচ শুরুর দিকে কেউ জানতেই পারেনি এসব হামলার পেছনে কারা জড়িত। কিন্তু অতি দ্রুত হামলাকারীকে চিহ্নিত করতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি তৎপর হয়ে ওঠে।

কিছুদিন পর আইআরজিসি অবশেষে সব রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়।  এই বাহিনীর অনুসন্ধানে উঠে আসে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নাম।  ইহুদিবাদীরা অত্যন্ত জটিল ও রহস্যজনক কৌশল অবলম্বন করে ইরানের তেল রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করা। কিন্তু ইহুদিবাদীদের মনে ছিল না, তারা ইরানের মতো এক শক্তিশালী শত্রুর সঙ্গে সাগরে খেলতে নেমেছে।

আইআরজিসি শত্রুকে সনাক্ত করার পর প্রথম যে কাজটি করে সেটি হলো, সরাসরি ইহুদিবাদী ইসরাইলের তেল ট্যাংকারে আঘাত হানা। ইরান একের পর এক ইসরাইলি তেল ট্যাংকারে হামলা চালাতে থাকে; ইরান যখন পঞ্চম ইসরাইলি জাহাজে হামলা চালায় তখন তেল আবিবের টনক নড়ে এবং যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার পরিস্থিতি বদলে যায়। ইহুদিবাদীরা ইরানের শক্তিমত্তা ও দৃঢ় সংকল্প উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। তারা পশ্চাদপসরণ করে এবং অবশেষে তেল ট্যাংকার যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। ততদিনে অবশ্য ইসরাইলের ১২টি জাহাজ ইরানি হামলার শিকার হয়েছে।

তবে এর মাধ্যমে ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। এরইমধ্যে একদিন খবর আসে ব্রিটিশ সরকার জিব্রাল্টার প্রণালিতে ইরানের একটি তেল ট্যাংকার আটক করেছে। ওই ঘটনার ব্যাপারেও ইরানের জবাব ছিল অত্যন্ত কঠোর ও সময়োপযোগী। ইরান পারস্য উপসাগর থেকে ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার স্টেনা ইম্পেরোকে আটক করে। ইরানের এ পদক্ষেপের জের ধরে ব্রিটিশরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় এবং ইরানের আটক তেল ট্যাংকারটি ছেড়ে দেয়। পাশ্চাত্যের হাতে গ্রিসে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। গ্রিস উপকূল থেকে ইরানের দু’টি তেল ট্যাংকার আটক করার পর ইরানও গ্রিসের দু’টি ট্যাংকার আটক করে। এবারও প্রতিপক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হয়।

ইরানের হাতে আটক ব্রিটিশ তেল ট্যাংকার স্টেনা ইম্পেরো

তবে এই যুদ্ধের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্তটি শুরু হয় তখন যখন মার্কিন সরকার ভেনিজুয়েলাগামী ইরানি তেল ট্যাংকারগুলোকে পথিমধ্যে আটক করার হুমকি দেয়। এ সময় আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি আইআরজিসির নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল তাংসিরির সঙ্গে দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন।

এই দুই কমান্ডার মার্কিন তেল ট্যাংকার আটকের মহড়া করার পরিকল্পনা হাতে নেন। এরপর তারা ওয়াকটকির মাধ্যমে ঘোষণা দেন যে, তারা মার্কিন তেল ট্যাংকারগুলো আটক করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এর ফল দাঁড়াল এই যে, মার্কিনীরা ইরানের দৃঢ় সংকল্প ও প্রস্তুতির বিষয়টি জেনে যায়। ফলে তারা তাদের হুমকি থেকে সরে যায় এবং ইরানি তেল ট্যাংকারগুলো নির্বিঘ্নে ভেনিজুয়েলায় পৌঁছে যায়।

এতক্ষণ যেসব ঘটনা উল্লেখ করা হলো সেগুলো ছিল একটি বিশাল যুদ্ধের খণ্ড খণ্ড কিছু চিত্র মাত্র। যে যুদ্ধে ইরান শত্রুদের প্রকাশ্য ও গোপন হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিজের জাহাজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। আর এসব ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, সাগরও নীরব যুদ্ধের উপযুক্ত ক্ষেত্র হতে পারে। কিন্তু যে যুদ্ধেও প্রতিরোধ ও দৃঢ় সংকল্প হতে পারে বিজয়ের চাবিকাঠি।#

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/ ৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ