ইরানে নারীর মর্যাদা ইস্যুতে পশ্চিমা অপপ্রচার চ্যালেঞ্জ করেছে ইতালির নারীরা
(last modified Sat, 14 Sep 2024 11:50:57 GMT )
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ ১৭:৫০ Asia/Dhaka
  • ইরানে নারীর মর্যাদা ইস্যুতে পশ্চিমা অপপ্রচার চ্যালেঞ্জ করেছে ইতালির নারীরা

পার্সটুডে- 'সাংস্কৃতিক সংলাপ এবং সহযোগিতার আলোকে ইরান ও ইতালির নারী' শীর্ষক একটি সম্মেলন ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ইতালি ও ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ইটালিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্সটিটিউট।

পার্সটুডে জানাচ্ছে, ইতালির ইন্ডিপেনডেন্ট ইন্সটিটিউট সম্মেলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছে, ইরানি নারীরা সংস্কৃতি ও ধর্মের মাধ্যমে নিপীড়িত বলে পশ্চিমা মিডিয়ায় যে প্রচার চালানো হয় তা সত্যি নাকি এটা একটা বড় ধরণের অপপ্রচার- এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে। ইরানি নারীদের নিয়ে ইতালীয় কবি এলিরাবেটা পামেলা'র লেখা একটি কবিতা দিয়ে সম্মেলনটি শুরু করা হয়। ইতালির ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্সটিটিউটের পরিচালক ফ্রান্সেস্কো লাবোনিয়া এই সম্মেলন প্রসঙ্গে বলেছেন, ইতালিতে এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয় এবং দেশটি আমেরিকানাইজেশনের সমস্যায় ভুগছে। এ অবস্থায় নারীর প্রতি ইতালির দৃষ্টিভঙ্গিটা যান্ত্রিক। 

ফ্রান্সেস্কো লাবোনিয়া ইরান সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ইরানে নারীদের পোশাকের বৈচিত্র্য এবং নারীর প্রতি পুলিশের সম্মানজনক আচরণের বাস্তব অভিজ্ঞতা তিনি সবার সামনে বর্ণনা করেন।

ইতালি প্রবাসী ইরানি অধ্যাপক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক হানিয়া তুর্কিয়ান ইসলামে নারীর অবস্থান এবং ঐতিহ্য ও আধুনিকতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন এই সম্মেলনে। তিনি বলেন, ইরান ইস্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইরান সম্পর্কে আলোচনা করা এখানে যেন  অনেকটা নিষিদ্ধ। আমি ইরানের আলাদা একটা চিত্র উপস্থাপন করতে চাই। ঐতিহ্যগত ও আধুনিক- এই উভয় দিক থেকেই সমাজে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অতীত থেকে চলে আসা রীতি ভালো নাকি আধুনিকতা ভালো-এই প্রশ্নটাই অবান্তর। তবে ধর্মের সংস্পর্শে যে মডেলটি সমাজে গড়ে উঠেছে তা বেশি পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, ইরানে পাহলভি রাজতন্ত্রের পতনের পর নারীদের ভূমিকা জোরালো হয়েছে এবং ইসলামী বিপ্লব সমাজের নানা ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা জোরদারে উৎসাহ দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতি, গড় আয়ু, শ্রমবাজার ও ক্রীড়াঙ্গনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানি নারীদের ভূমিকা যে বিপ্লব বিজয়ের আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে তা স্পষ্ট হয় বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে।

সিসিলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ও আইন অনুষদের অধ্যাপক আনা ভালভো এই সম্মেলনে বলেন, পশ্চিমা সমাজ নারী স্বাধীনতা ও উন্নয়নের মডেল উপস্থাপন করলেও তা কেবলি লোকদেখানো। পশ্চিমা সমাজে নারীকে পণ্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এটা একটা বাস্তবতা। 

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্সটিটিউটের সদস্য উইলমা জিনোলা  তার বক্তৃতা 'স্বাধীনতার ধারণা সংক্রান্ত অস্পষ্টতা' নিয়ে কথা বলেন। তিনি পশ্চিমা সমাজের স্বাধীনতাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমে প্রথম ধাপে রয়েছে লাগামহীন স্বাধীনতা। পরবর্তী ধাপে স্বাধীনতার প্রতিযোগিতা যা অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগবাদের প্রতিযোগিতায় নিয়ে যায়।

ইরানের 'নেগিন তেজারাত ফেরদৌস' ট্রেডিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারজান হুশিয়ার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি বলেন, ইরানের নারীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এই অঙ্গনে দক্ষতাও অর্জন করেছে ইরানি নারীরা।

তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী নারীর সংখ্যা বেড়েছে। ব্যবস্থাপনা ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী নারীর সংখ্যাও বেড়েছে।  কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর উল্টো চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইরানে নারীদের অধিকার পুরুষের সমানতো বটেই; বাড়তি বিষয় হলো নারীদের পেছনে রয়েছে তাদের স্বামী, বাবা ও ভাইদের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা।#  

পার্সটুডে/এসএ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ