আইএস'র নৈরাজ্য ও সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতি সম্পর্কে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিবের জবাব
-
আহমাদিয়ান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব ড. আলী আকবর আহমাদিয়ান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর কর্ম ও কীর্তি সংরক্ষণ ও প্রচার সংস্থার ওয়েব সাইট খামেনেয়ী ডট আই আর-কে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন।
তিনি এই সাক্ষাতকারে বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব ড. আলী আকবর আহমাদিয়ান বলেছেন, জনগণ জাতীয় নিরাপত্তার স্তম্ভ। জনগণ ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে অস্তিত্ব দিয়েছে, বিজয়ী করেছে এবং জনগণই এই বিপ্লবকে টিকিয়ে রেখেছে। 'জাতীয় নিরাপত্তা' ইস্যুকে ঘিরে যে সমস্ত তত্ত্ব উত্থাপিত হয় তা জনগণকে ঘিরেই। এখানে জনগণ বলতে সব মানুষ; কারণ সব মানুষ বিপ্লব করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূলে রয়েছে ইসলামী বিপ্লবের (বর্তমান) নেতার তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক অবস্থান। দুই-তিন বছর আগে এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, জনগণকে বাদ দিলে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কোনো অর্থ থাকে না এবং জনগণ ছাড়া এটা অস্তিত্বহীন। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর মতে, ধর্ম ভিত্তিক গণতন্ত্রের অর্থ হলো ইসলাম ধর্ম মতে মানুষ তার সমাজ এবং তার নিজস্ব বিষয়াদির পরিচালক।
সিরিয়া ইস্যুতে তিনি বলেন, আমরা সিরিয়ার সরকারকে ক্ষমতায় বসায়নি; আসাদ পরিবারের সরকার আমাদের (বিপ্লবের) আগে থেকেই ছিল, এটি শক্তিশালী ছিল। ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিষয়ে আপোষহীনতা এবং আমেরিকা ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিষয়ে আমাদের সাথে তাদের অভিন্ন অবস্থানের কারণে আমাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ ছিল এবং পারস্পরিক সমর্থন ছিল।
গত এক দশকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য দেশের সীমানার বাইরে সরাসরি সামরিক সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে বা সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। ইরানের এই উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই কিছু বিধি বা নিয়মের ভেতর দিয়েই হয়েছে। কী নিয়মে এটা করা হয়েছে?
প্রথম নীতি হলো বিজাতীয়দের মোকাবেলায় দেশ, জনগণ ও জাতীয় স্বার্থকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো, কারো বিরুদ্ধে আগ্রাসনের সূচনাকারী হব না। আমরা এটা করি নি। তৃতীয় নীতি হল অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। নিজের আদর্শবাদী অবস্থান থাকার পরও এমনকি কখনো কখনো গোটা বিশ্বই মোদের মাতৃভূমি- এমন শ্লোগানকে গুরুত্ব দেওয়ার পরও তিনটি শর্ত পূরণ না হলে কখনোই জাতীয় স্বার্থেও অন্য দেশে হস্তক্ষেপ করেনি।
এগুলো হলো- প্রথমত সংশ্লিষ্ট সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে হবে। সিরিয়া এবং ইরাক উভয় দেশেই আমাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য এই দুই দেশের তৎকালীন সরকার আমাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, আমন্ত্রণকারী দেশের জনগণের মোকাবেলায় অবস্থান না নেওয়া। যেকোনো সরকার আমাদেরকে সেদেশে যাওয়ার জন্য জানালো এবং আমরা চলে গেলাম এমনটি নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো সরকার যদি সেদেশের জনগণের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের জন্য সেদেশে আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানায় তাহলে আমরা অবশ্যই এমন কাজ করব না। আমরা এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
তৃতীয়ত, নিশ্চিতভাবে জাতীয় স্বার্থ বা আদর্শের উপস্থিতি। আমাদের সুনির্দিষ্ট জাতীয় স্বার্থ বা সুনির্দিষ্ট আদর্শের বিষয়টি থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে, মজলুমদের রক্ষা করাটা আমাদের নীতি-আদর্শের অংশ। যদি কোন জাতি নিপীড়িত হয় এবং এর আগে যে দু'টি শর্তের কথা উল্লেখ করেছি যে দুটি শর্ত যদি পূরণ হয় তাহলে সেখানে আমাদের না যাওয়ার কোনো কারণ নেই, কারণ এটি আমাদের ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ব।
ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে সামরিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক কেবল গত এক দশকে নয়, এর আগেও ছিল। সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতির কারণ কী? পরবর্তীতে ইরানের সামরিক উপস্থিতি কমে যাওয়ার কারণ কী?
সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা ছিল এই অঞ্চলের বাকি আরব দেশগুলোর শাসন ব্যবস্থার মতোই। আসাদ পরিবারের ইতিবাচক এবং স্বতন্ত্র দিকটি ছিল এই যে, তারা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চাপের পাশাপাশি মিত্র, পরিচিতজন এবং শত্রুদের চাপের মুখেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষার দৃঢ় অবস্থান থেকে পিছপা হয়নি। তারা যদি এ ক্ষেত্রে একটু নমনীয় হতো, তাহলে তাদেরকে এসব ঘটনার কোনোটিই মোকাবেলা করতে হতো না। প্রতিরোধ করার কারণেই তাদেরকে মূল্য দিতে হয়েছে, এত কিছু ঘটার পেছনে এটাই কারণ। তবে সিরিয়ার সাবেক সরকার ইহুদিবাদের বিরোধী হওয়ার পাশাপাশি সেদেশের শাসন ব্যবস্থার কিছু অংশে জনগণের সঙ্গে অপছন্দনীয় আচরণ দেখা গেছে এবং এটি সরকার ও সিরিয়ার জনগণের একটি অংশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ হাফেজ আসাদের সময় থেকে সর্বদাই ইরান সামাজিক ও জনপ্রিয় তৎপরতার জন্য পরামর্শ দিয়েছে এবং চেষ্টা চালিয়েছে।
কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে তৃতীয় একটি ঘটনা ঘটে এবং তা হলো আইএসআইএস বা আইএসের উত্থান; আইএসআইএস'র নৈরাজ্য। আমাদের অবশ্যই আইএসআইএসের আমলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আচরণকে তার আগের সময়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। হ্যাঁ, দায়েশ বা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছি। আমরা সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে সেভাবেই যুদ্ধ করেছি।#
পার্সটুডে/এসএ/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।