ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি কে?
(last modified Tue, 15 Apr 2025 14:58:23 GMT )
এপ্রিল ১৫, ২০২৫ ২০:৫৮ Asia/Dhaka
  • নাতি কোলে নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি
    নাতি কোলে নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি

পার্সটুডে-সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি একজন ইরানি কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদ। ১৪০৩ সাল থেকে তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ইরানের ১৪তম সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক এবং ৫+১ গ্রুপের সাথে ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচক দলের সদস্য ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এবং মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক উপ-পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। পার্সটুডে'র এই নিবন্ধে আমরা তাঁর জীবনের ওপর সংক্ষিপ্ত নজর দেযওয়ার চেষ্টা করবো।

জন্ম

আব্বাস আরাকচি ১৯৬২ সালের ৫ ডিসেম্বর তেহরানের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ৩ বোন এবং ৩ ভাই রয়েছে। ভাইদের বেশিরভাগই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সক্রিয়। তাঁর দাদা একজন কার্পেট ব্যবসায়ী ছিলেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। ভাইদের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

শিক্ষা

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক চিন্তাধারার ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে।

সাইয়েদ আব্বাস আরাকচির তারুণ্য

সন্তানাদি

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বিবাহিত এবং তাঁর তিন সন্তান (দুই ছেলে এক মেয়ে) রয়েছে।

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির স্ত্রী অরেজো আহমাদভান্দ,
সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির ছেলে

 

আরাকচি এবং তার নাতি

রণাঙ্গনে উপস্থিতি

ইরানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ইরানের বিরুদ্ধে ‌ইরাকের বাথ সরকারের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আরাকচি ইতোপূর্বে তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ‌অংশগ্রহণের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন।

আরাকচির যুদ্ধে অংশগ্রহণের ছবি, ডান দিক থেকে প্রথমে দাঁড়ানো

লেখালেখি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ আব্বাস আরাকচির লেখা দুটি বই: 'দ্য পাওয়ার অফ নেগোসিয়েশন' এবং 'ইরানিয়ান তাইশি'।

আরাকচির লেখা বই

সম্মাননা

জাপান সরকার কর্তৃক অর্ডার অফ দ্য শাইনিং সান, গোল্ডেন স্টার এবং সিলভার স্টার প্রাপ্তি, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে জাতীয় মেধা ও ব্যবস্থাপনা পদক প্রাপ্তি, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে স্বর্ণপদক লাভ, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গবেষক হিসেবে মনোনয়ন লাভ এবং রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অসংখ্য প্রশংসাপত্র প্রাপ্তি।

দায়িত্ব পালন

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি ১৯৯৯ সালে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ইসলামী সহযোগিতা সংস্থায় ইরানি মিশনের প্রধান হিসেবে প্রথম অফিসিয়াল পদ গ্রহণ করেন। ইরানের এই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ফিনল্যান্ডে ইরানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৩ সালে তিনি এক বছরের জন্য ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ বিভাগের প্রধান হন। 

আরাকচির একটি ছবি

আরাকচি ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে তিনি জাপানে ইরানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে টোকিও যান এবং চার বছর ই পদে ছিলেন। ২০১৩ সালে আরাকচি প্রথমে কিছু সময়ের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন এবং তারপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আরাকচি

ক্ষেত্র ইরান এবং ট্রাম্পের পারমাণবিক কূটনীতি পরীক্ষাক্ষেত্র ওমান

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাকচির নেতৃত্বে ওমানে আমেরিকা ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনাকে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সম্ভাবনা মূল্যায়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি

একাদশ সরকারের ক্ষমতায় আসার পর এবং ইরানের পারমাণবিক আলোচনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের পর, আরাকচি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচক দলের সদস্য হন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের পর, ৫+১ গ্রুপের সাথে পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় ইরানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে বিবেচিত হন। তারপর জুলাই ২০১৫ সালে ইরান এবং ৫+১ গ্রুপের মধ্যে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA) নামে পরিচিত পরমাণু সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়।

সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি

কিন্তু যুদ্ধ এবং আস্থাহীনতার ছায়ায় সংলাপ

তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা যখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন ওমানে আরাকচির সাথে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ হুইটকফ। ট্রাম্প ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বাতিল করতে চান। যদিও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ইরানের ন্যায্য অধিকার। আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে অবরুদ্ধ ইরানি সম্পদের মধ্য থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার  মুক্ত করার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। আলোচনার ভেতরেই আবার সামরিক হামলার হুমকিও অব্যাহত রয়েছে।#

পার্সটুডে/এনএম/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।