ইরান কত প্রাচীন?
(last modified Sun, 27 Apr 2025 14:13:35 GMT )
এপ্রিল ২৭, ২০২৫ ২০:১৩ Asia/Dhaka
  • ইরানের পোড়া মাটির শহরে আবিষ্কৃত মাটির তৈজসপত্র, যা বিশ্বের প্রাচীনতম অ্যানিমেশন হিসেবে পরিচিত
    ইরানের পোড়া মাটির শহরে আবিষ্কৃত মাটির তৈজসপত্র, যা বিশ্বের প্রাচীনতম অ্যানিমেশন হিসেবে পরিচিত

যখন আমরা 'ইরান' সম্পর্কে কথা বলি, তখন কেবল একটি দেশের নামই মনে আসে না; এ এমন এক দেশ যার শিকড় হাজার হাজার বছর আগে আদি মানব সভ্যতায় প্রোথিত।

প্রায় ১০,০০০ বছর আগে যখন কৃষি সমাজ গাঞ্জ দাররেহ উপত্যকা এবং জাগেহের মতো পাহাড়ে শিকড় গেড়েছিল, তখন থেকে শাহর সোখতে বা পোড়া মাটির শহর, জিরাফত, এলাম এবং প্রবল প্রতাপশালী হাখামানেশিয় সাম্রাজ্যের মতো উন্নত সভ্যতার উত্থান পর্যন্ত, ইরান সবসময় উদ্ভাবন, সংস্কৃতি এবং ক্ষমতার সিংহাসনে আরোহন করেছিল।  এই ভূমি কেবল প্রথম সরকার বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং লেখার কৌশল উত্থানের সাক্ষীই ছিল না বরং প্রতিকুল ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মুখেও এই ভূখণ্ডের অধিবাসীরা নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় অব্যাহত রেখে বিশ্ব ইতিহাসে একটি অনন্য স্থান অর্জন করেছে। পার্সটুডে-র এই প্রবন্ধে, আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক উৎসগুলোর ভিত্তিতে ইরানের ইতিহাসের গভীরে ভ্রমণ করব যাতে দেখা যাবে যে প্রাচীন মাটি থেকে আজকের আকাশচুম্বী অট্টালিকা পর্যন্ত এই ভূমি কীভাবে তার পরিচয় টিকিয়ে রেখেছে ।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা (অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০)

নব্যপ্রস্তর যুগের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে বোঝা যায় যে ইরান কৃষি কাজের প্রথম জন্মভূমিগুলোর মধ্যে একটি ছিল। কেরমানশাহের গাঞ্জ দাররেহ পাহাড় এবং কাজভিন সমভূমিতে জাগেহ পাহাড়ের মতো স্থানগুলো প্রায় ১০,০০০ বছর আগে প্রাথমিক কৃষিকাজ এবং পশুপালনের অস্তিত্ব ছিল। বলা যায়  এই মানব বসতিগুলো ছিল ইরানের সাংস্কৃতিক যুগের সূচনা পর্ব।

কেরমানশাহের গাঞ্জ দাররেহ পাহাড়

পোড়া মাটির শহর (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ সাল)

পূর্ব ইরানের সিস্তান ও বালুচেস্তানে অবস্থিত পোড়া মাটির শহরটি ৫,০০০ বছর আগে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৮০০ সাল পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, শিল্প কর্মশালা এবং এমনকি মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের প্রমাণ (যা প্রাচীনতম সভ্যতার উদাহরণ) সহ এই উন্নত শহরটি সামাজিক ও প্রযুক্তিগত সমৃদ্ধির প্রমাণ দেয়। "কৃত্রিম চোখ" (বিশ্বের প্রাচীনতম কৃত্রিম যন্ত্র, আনুমানিক ২৮০০ অব্দ) এবং বোর্ড গেমের মতো আবিষ্কৃত নিদর্শনগুলো এই সভ্যতার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির সাক্ষ্য দেয়।

পূর্ব ইরানের পোড়া মাটির শহর

ইলামি সভ্যতা (প্রায় ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ইরানের প্রথম প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি, ইলামি সভ্যতা ২৭০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের দিকে বর্তমান খুজিস্তানে আবির্ভূত হয়েছিল। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত চোগা জাম্বিল জিগুরাত ওই যুগের স্থাপত্য দক্ষতার প্রমাণ এবং এটি ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে নির্মিত হয়েছিল। ইলামের রাজধানী শুশু-এ ৪২০০ খ্রিস্টপূর্বের বসতি স্থাপনের নিদর্শন রয়েছে। সেখানে প্রাক-ইলামি ফলকের নিদর্শন রয়েছে যা সেই যুগে প্রথমিক লেখার পদ্ধতির প্রমাণ বহন করে।

চোগা জাম্বিল জিগুরাত

জিরাফত সভ্যতা (প্রায় ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

আধুনিক কেরমানে জিরাফত সভ্যতা প্রায় ২৫০০-২২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিকশিত হয়েছিল এবং এটি এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে পরিচিত। কেনার দাররে বা কেনার উপত্যকা এবং ইয়াহিয়া পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে অজানা লিপি এবং খোদাই করা ক্লোরাইট পাত্রের মতো কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা এই অঞ্চলের সাথে মেসোপটেমিয়া এবং ভারতের সাথে ব্যাপক যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়। ইরানের এই সভ্যতাকে কেউ কেউ পূর্ব ও পশ্চিমের সভ্যতার মধ্যে "যোগসূত্র" বলে অভিহিত করেন।

জিরাফত সভ্যতা

হাখামানেশিয় সাম্রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০-৩৩০)

সাইরাস দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠিত হাখামানেশিয় সাম্রাজ্য ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ইরানকে একটি একক রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। ৫১৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে নির্মিত আনুষ্ঠানিক রাজধানী পার্সেপোলিসে  অবস্থিত প্রসাদগুলোর ডিজাই ও কারুকর্য ছিল  চোখ ধাঁধাঁনো। সাইরাসের সমাধি (খ্রিস্টপূর্ব ৫৩০ এর দিকে) সহ পাসারগাদ কমপ্লেক্স এই সাম্রাজ্যের বিশালত্বের প্রমাণ এবং "ইরান" নামের সার্থকতা প্রদর্শন করে যা প্রাচীন ফার্সি আরিয়ানাম থেকে এসেছে, যার অর্থ "আর্যদের ভূমি")।

 পার্সেপোলিস জাতির প্রবেশদ্বার

পরবর্তী সময়কাল

এরপর পার্থিয়ান (খ্রিস্টপূর্ব ২৪৭-২২৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং সাসানীয় (২২৪-৬৫১ খ্রিস্টাব্দ) এর মতো পরবর্তী সাম্রাজ্যগুলো এই উত্তরাধিকারের অব্যাহত ধারা। বিশাপুর (সাসানীয়, তৃতীয় শতাব্দী) এর বেস-রিলিফ সহ এবং সেসিফোন (পার্থিয়ান-সাসানীয় রাজধানী) এর মতো স্থানগুলি ইরানের স্থায়ী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের প্রমাণ। ইসলামী যুগে নতুন স্তর তৈরি হয়েছিল, যেমন ইমাম রেজার মাজার (খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীর পর থেকে), যদিও এগুলো আরও নতুন।

মাশহাদে ইমাম রেজা (আ.)-এর মাজার

পার্সটুডে/এমআরএইচ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।