সাদি থেকে খৈয়াম; ইরানি কবিদের প্রতি ইরাকিদের আগ্রহ
-
ইরানি কবি সাদি এবং তার সমাধি
পার্সটুডে-বাগদাদ বইমেলার প্রধান জানিয়েছেন ইরানি প্রধান কবি ও লেখকদের প্রতি ইরাকিদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।
ইরাকি প্রকাশক ইউনিয়নের প্রধান এবং বাগদাদ বইমেলার প্রধান আব্দুলওয়াহাব আল-রাজি বলেছেন, ইরানি অনেক কবি ও লেখক ইরাকে সুপরিচিত। তিনি আরও বলেন: ইরাকি জনগণ সত্যিই মহান ইরানি কবি সাদি এবং খৈয়ামের রুবাইয়াত পছন্দ করে। ইসনা'র উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে আরও জানায়, রবিবার তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলায় আল-রাজি বলেন: ইরাকে ইরানের যেসব বই পাঠানো হয়, তার মধ্যে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং শিক্ষামূলক বই রয়েছে।
বাগদাদ বইমেলার প্রধান বলেন, বাগদাদ আন্তর্জাতিক বইমেলায় তেহরান বহু বছর ধরেই অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন: তেহরান বইমেলা বাগদাদ বইমেলার চেয়ে অনেক বড়। তেহরান বইমেলা একটি সরকারি মেলা এবং সরকার মেলার বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু বাগদাদ বই মেলা ব্যক্তিগত। কাজেই আমাদের কাজের পরিধি খুব বেশি প্রশস্ত নয়।
ইরাকে সমসাময়িক ইরানি সাহিত্য (কল্পকাহিনী এবং কবিতা উভয়ই) আরবিতে অনুবাদ করার পরিকল্পনা আছে কিনা-সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন: তেহরান বইমেলায় আমাদের উপস্থিতির সময় আরবি ভাষায় বইগুলো অনুবাদ করতে এবং প্রকাশকদের সাথে আরও সহযোগিতা করার লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করতে চাই।"
আবু মুহাম্মদ মুশাররফ আল-দীন মুসলেহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুশাররফ, যিনি "সাদী" নামে পরিচিত, তিনি সপ্তম হিজরীর একজন বিখ্যাত ইরানী কবি ও লেখক ছিলেন। এই মহান ইরানী কবির বিশেষ উপাধিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে 'কথার মাস্টার', 'কথার রাজা' এবং 'চিরকালের শেখ'। তাঁর কথার সৌন্দর্য এবং কবিতা ও গদ্যে বাগ্মীতা বিশ্বখ্যাত। সকলের কাছে তিনি সুপরিচিত। নৈতিকতা ও রহস্যবাদ সম্পর্কে সাদীর গীতিকাব্য খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। সাদীর সমস্ত রচনা, কবিতা এবং গদ্য সহ 'সাদী সমগ্র' নামক একটি বইতে সংগৃহীত হয়েছে। কিন্তু তার দুটি রচনা, 'বোস্তান' এবং 'গোলেস্তান', বই দুটি আলাদা আলাদা বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বোস্তান পদ্যে লেখা এবং গোলেস্তান পদ্য ও গদ্যে লেখা।
বোস্তানে সাদী বা সাদীনামা, কবিতার আকারে লেখা ভ্রমণ ও গল্পের একটি সংগ্রহ। এতে প্রায় চার হাজার লাইনের কবিতা রয়েছে।
এই অসাধারণ রচনায়, আমরা অনেক উক্তি, প্রবাদ এবং গল্পের মুখোমুখি হই। এসব গল্প মহাকাব্যিক প্রকৃতির এবং আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং রহস্যবাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়কে রুপকায়িত করে। এই বইয়ে আলোচিত ইতিবাচক নৈতিক গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ, সংযম, নৈতিকতা, প্রেম ও দয়া, অন্যদের প্রতি দয়া, কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি, সেইসাথে নম্রতা ও বিনয়ের মতো বিষয়সমূহ।
অসাধারণ এই রচনাটিতে দশটি অধ্যায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
প্রথম অধ্যায়: ন্যায়বিচার, বিচক্ষণতা এবং রায়
দ্বিতীয় অধ্যায়: দয়া
তৃতীয় অধ্যায়: প্রেম, মাতলামো এবং আবেগ
চতুর্থ অধ্যায়: নম্রতা
পঞ্চম অধ্যায়: তুষ্টি
ষষ্ঠ অধ্যায়: তৃপ্তি
সপ্তম অধ্যায়: শিক্ষার জগত
অষ্টম অধ্যায়: সুস্থতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
অধ্যায় ৯: অনুতাপ এবং সঠিক পথ সম্পর্কে
দশম অধ্যায়: প্রার্থনা এবং বইয়ের সমাপ্তি
সাদির গোলেস্তানকে অনেকে ফার্সি সাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী গদ্যগ্রন্থ বলে মনে করেন। এ গ্রন্থে আটটি অধ্যায় রয়েছে। এর বেশিরভাগ লেখাই ছোট এবং গল্পের মতো করে নৈতিক উপদেশ আকারে লেখা।
প্রথম অধ্যায়: রাজাদের জীবন সম্পর্কে
দ্বিতীয় অধ্যায়: দরবেশদের নীতিশাস্ত্র সম্পর্কে
তৃতীয় অধ্যায়: সন্তুষ্টির গুণাবলী সম্পর্কে
চতুর্থ অধ্যায়: নীরবতার উপকারিতা সম্পর্কে
পঞ্চম অধ্যায়: প্রেম এবং যৌবন সম্পর্কে
ষষ্ঠ অধ্যায়: বার্ধক্যে এবং দুর্বলতা সম্পর্কে
সপ্তম অধ্যায়: শিক্ষার প্রভাব সম্পর্কে
অষ্টম অধ্যায়: কথা বলার শিষ্টাচার সম্পর্কে
হাকিম আবুল-ফাতহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল-খায়ামি, যিনি ওমর 'খৈয়াম' নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন ইরানী দার্শনিক, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং কবি। ৪৩৯ হিজরীতে নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। খৈয়ামের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, প্রখর ও শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি ছিল। তিনি সাহিত্যের পাশাপাশি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, কালানুক্রম এবং সঙ্গীতেও ব্যাপক জ্ঞানী ছিল। খৈয়ামের সময় তাঁর মহান মর্যাদা এবং খ্যাতির কারণে সমসাময়িকরা তাঁকে ইমাম, দার্শনিক ও হুজ্জাতুল-হক্কে'র মতো মহান উপাধি দিয়ে প্রশংসা করতেন। তার রুবাইয়াতের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।#
পার্সটুডে/এনএম/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।