যুদ্ধে প্রবেশ করলে আমেরিকার অপূরণীয় ক্ষতি হবে: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
(last modified Wed, 18 Jun 2025 12:24:37 GMT )
জুন ১৮, ২০২৫ ১৮:২৪ Asia/Dhaka
  • যুদ্ধে প্রবেশ করলে আমেরিকার অপূরণীয় ক্ষতি হবে: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আজ বুধবার দখলদার ইসরাইলের হামলার বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তাটি ইরানের রেডিও-টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে।

সেখানে তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। হাস্যকর ভাষা ব্যবহার করে আমারকে আত্মসমর্পণ করতে বলছেন।তারা এমন কাউকে হুমকি দিচ্ছে যারা তাদের হুমকিতে ভীত নয়। ইরানি জাতি হুমকিদাতাদের হুমকিতে ভীত নয়।

সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরানি জাতিকে আত্মসমর্পণ করতে বলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।ইরানি জাতি কীসের কাছে আত্মসমর্পণ করবে? আমরা কোনোভাবেই কারো আগ্রাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করব না। এটাই ইরানি জাতির যুক্তি, এটাই ইরানি জাতির চেতনা। আমেরিকা এই বিষয়ে [যুদ্ধ] প্রবেশ করলে তাতে তারাই শতভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।  আমেরিকা এ ক্ষেত্রে যা ভোগ করবে তা ইরানের ক্ষতির চেয়ে অনেক বেশি। আমেরিকা এই (যুদ্ধের) ময়দানে সামরিকভাবে প্রবেশ করলে নিঃসন্দেহে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

ইসরাইলি হামলার বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দ্বিতীয় টিভি বার্তা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মহান ইরানি জাতিকে সালাম জানাচ্ছি। প্রথমে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই তাহলো- সম্প্রতি শত্রুরা আমাদের দেশের জন্য যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে তাতে আমাদের প্রিয় জাতির আচরণ প্রশংসার দাবি রাখে। ইরানি জাতি এটা দেখিয়েছে যে, তারা ভদ্র, সাহসী এবং সময় সচেতন। ঈদে গাদিরের উৎসবের দিন জনগণ যেভাবে অংশ নিয়েছে তা ছিল এক মহা পদক্ষেপ। গত কয়েক দিনে জনগণ যেসব সমাবেশ করেছে, জুমার নামাজে অংশ নেয়ার পাশাপাশি নামাজ পরবর্তী মিছিলে যেভাবে অংশ নিয়েছে তা ইরানি জাতির বিকাশ, বুদ্ধিবৃত্তি এবং আধ্যাত্মিকতার বহিঃপ্রকাশ। এর সঙ্গে মিশে আছে সাহসিকতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের যোগ্যতা। আল্লাহর কাছে এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, তিনি এই ঈমানদার জাতিকে আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক দিক থেকে এত বেশি সক্ষমতা দান করেছেন। দখলদার ইসরাইলের হামলার সময় টিভি উপস্থাপিকা (সাহার এমামি) যে চমৎকার ও অর্থপূর্ণ কাজটি করেছেন সেটাও এখানে উল্লেখ করতে চাই: আল্লাহু আকবার ধ্বনি তোলা বিশেষকরে গোটা বিশ্বের কাছে ইরানি জাতির শক্তিমত্তা প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। এটা ছিল অনেক মূল্যবান একটা ঘটনা।  

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- ইরানের কর্মকর্তারা যখন মার্কিন পক্ষের সাথে পরোক্ষ আলোচনা করছিলেন, তখনি আমাদের দেশে ইহুদিবাদী ইসরাইল ঘৃণ্য ও বোকামিপূর্ণ হামলা চালায়। ইরানের পক্ষ থেকে সামরিক পদক্ষেপের কোনো ধরণের ইঙ্গিত ছিল না। ইহুদীবাদী ইসরাইলের এই ঘৃণ্য পদক্ষেপে আমেরিকার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রথম থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক নানা বক্তব্য থেকে দিন দিনই এই ধারণা দৃঢ় হচ্ছে। ইরানি জাতি চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের মোকাবেলায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে, যেমনটি এখন পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করে এসেছে। ইরান চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও দৃঢ় থাকবে। ইরান কারো কাছেই আত্মসমর্পণ করবে না। আমার প্রত্যাশা হলো চিন্তাবিদ, লেখক, বক্তা বিশেষকরে বিশ্ব জনমতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই বিষয়টিকে তুলে ধরবেন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের করবেন এবং সবার জন্য বিষয়টি স্পষ্ট করবেন। তারা (শত্রুরা) যেন তাদের প্রতারণাপূর্ণ প্রচারণার মাধ্যমে সত্য ও বাস্তবতাকে উল্টো ভাবে তুলে ধরার সুযোগ না পায়। দখলদার শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইল একটা বড় ভুল করেছে, একটা বড় অপরাধ করেছে, তাকে শাস্তি পেতে হবে। সে শাস্তি পাচ্ছে, এখনও শাস্তি পাচ্ছে। আমাদের জাতি এবং সশস্ত্র বাহিনী এই জঘন্য শত্রুকে শাস্তি দিয়েছে এবং এখনও শাস্তি দিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্যও পরিকল্পনা রয়েছে। কঠিন শাস্তির ফলে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ কারণে তাদের মার্কিন বন্ধুরা মাঠে নেমে কথা বলছে। এটা তাদের দুর্বলতা এবং অক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

 শেষ বিষয়টি হলো, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) হুমকির ভাষায় কথা বলা শুরু করেছেন। আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন, অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর ভাষায় ইরানি জাতিকে স্পষ্টভাবে বলছেন- আসুন আত্মসমর্পণ করুন! কেউ যখন এসব দেখে তখন আসলেই অবাক হয়ে যায়। প্রথমত কেবল তাকেই হুমকি দিতে হয় যে হুমকিতে ভয় পায়। ইরানি জাতি প্রমাণ করেছে তারা হুমকিদাতাদের হুমকিতে ভয় পায় না। ইরানি জাতি পবিত্র কুরআনের এই বক্তব্যে বিশ্বাস করে: ‘তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাকো তাহলে দুর্বল হয়ো না, মনক্ষুন্ন হয়ো না, তোমরাই (তাদের চেয়ে) ভালো অবস্থানে থাকবে।’ ইরানি জাতির আচরণ ও চিন্তায় হুমকি প্রভাব ফেলবে না।

 দ্বিতীয়ত ইরানি জাতিকে আত্মসমর্পণ করতে বলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যেসব বুদ্ধিমান মানুষ ইরানকে চেনে, ইরানি জাতিকে চেনে, ইরানের ইতিহাস জানে তারা কখনোই  এ ধরণের কথা বলতে পারে না। (ইরানি জাতি) কীসের কাছে আত্মসমর্পণ করবে? ইরানি জাতি আত্মসমর্পণ করার মতো জাতি নয়। আমরা কাউকে হামলা করিনি, কখনোই কারো হামলা মেনে নেব না। কারো হামলার কারণে আত্মসমর্পণ করব না। এটা ইরানি জাতির যৌক্তিক অবস্থান, এটাই ইরানি জাতির চেতনা। অবশ্যই মার্কিনীদের মধ্যে যারা আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত তারা জানে এই ক্ষেত্রে আমেরিকা জড়ালে শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরান যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে বহু গুণ বেশি ক্ষতির শিকার হবে তারা। তারা সামরিক দিক থেকে ময়দানে প্রবেশ করলে নিশ্চিতভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমি ইরানি জাতির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- আপনারা এই পবিত্র আয়াতটিকে মনে রাখুন। আলহামদুলিল্লাহ জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। শত্রুরা যাতে এমনটা ভাবতে না পারে যে, আপনারা ভয় পাচ্ছেন, দুর্বলতা অনুভব করছেন।

শত্রুরা যদি এটা অনুভব করে যে, আপনারা ভয় পান তাহলে তারা আপনাদেরকে ছাড়বে না। এখন পর্যন্ত আপনাদের আচরণ যেমন ছিল সেটাই দৃঢ়ভাবে অব্যাহত রাখুন। যারা সেবামূলক দায়িত্বে রয়েছে, জনগণের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, যারা প্রচার ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাই দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখুন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করুন, ‘বিজয় কেবল মহাপরাক্রশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে’। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চিতভাবে ইরানি জাতি এবং সত্য ও ন্যায়কে বিজয় দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ 

পার্সটুডে/এসএ/১৮