ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধ কেন তীব্রতর হয়েছে?
১২ দিনের যুদ্ধের পর ইহুদিবাদী ইসরাইলি শাষকগোষ্ঠী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতিমূলক এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করার পাশাপাশি কিছু ইউরোপীয় দেশও তেহরানের ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে।
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তেল আবিব এবং ওয়াশিংটন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতিমূলক এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করেছে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলি শাসক গোষ্ঠী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা পরিচালিত মানবিক, অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত ক্ষতির কোনও চিত্র বা পরিসংখ্যান প্রদান না করেই কমান্ডারদের হত্যা এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার উল্লেখ করে নিজেদেরকে যুদ্ধের বিজয়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই প্রসঙ্গে ইরানের সমাজে ভীতি ও সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করার জন্য বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের আক্রমণের অসংখ্য ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এই পদ্ধতির পাশাপাশি কিছু ইউরোপীয় দেশ রাজনৈতিক চাপের আকারে ইরানের বিরুদ্ধে চাপের আরেকটি দিকও অনুসরণ করছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলবেনিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, সুইডেন এবং চেক প্রজাতন্ত্রের সরকারগুলোা একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে দাবি করে যে তাদের ভূখণ্ডে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দ্বারা ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তারা। ফরাসি এবং আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে এমন বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে: "ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় ব্যক্তিদের হত্যা, অপহরণ এবং হয়রানির জন্য ইরানি গোয়েন্দা পরিষেবাগুলোর প্রচেষ্টার বিরোধিতা করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ। এই পদক্ষেপগুল আমাদের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।"
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে এই মনস্তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক যুদ্ধের লক্ষ্য কী?
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল ইরানি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা মনস্তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক যুদ্ধ ব্যবহার করে আলোচনার টেবিলে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক ছাড় পেতে চাইছে। মনস্তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক যুদ্ধ হল সামরিক যুদ্ধের একটি সম্প্রসারণ এবং ধারাবাহিকতা। এখন, এই দেশগুলো ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কর্মকর্তাদের জন্য মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
জ্ঞানীয় যুদ্ধের আরেকটি লক্ষ্য হল এই ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক বিজয়কে বিকৃত করে ত্রুটিগুলি তুলে ধরা। অন্য কথায়, তারা ত্রুটিগুলি তুলে ধরার এবং ইরানি সমাজের জনমতের মধ্যে যুদ্ধের পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের জন্য মানসিক অস্থিরতা এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্বেগ এমনভাবে তৈরি করা যায় যা মানুষের জীবনকে ব্যাহত করে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধের আরেকটি লক্ষ্য হল জাতীয় সংহতিকে লক্ষ্যবস্তু করা। ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা যখন সামরিক আক্রমণ চালাচ্ছিল, তখন ইরানি জনগণের বিভিন্ন অংশ, জাতিগত গোষ্ঠী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী আন্দোলন, এমনকি সরকারের কিছু সমালোচক দেশের ভেতরে এবং বাইরে জাতীয় মর্যাদা রক্ষার একটি সাধারণ অনুভূতি নিয়ে সমর্থনের ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিল। এটি ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং এখন তারা এই সংহতিকে দুর্বল করার এবং আবারও ইরানে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে।
এই যুদ্ধগুলোর আরেকটি লক্ষ্য হল ইরানোফোবিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইহুদিবাদী সরকার এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ পূর্বে কয়েক দশক ধরে ইরান-বিদ্বেষী কৌশল অনুসরণ করে আসছে, কিন্তু এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এখন, মিথ্যা নিরাপত্তা দাবি করে তারা আবারও বিশ্বব্যাপী ইরান-বিদ্বেষী কৌশল অনুসরণ করতে চাইছে।
পরিশেষে, ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিক যুদ্ধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধ থেকে বিশ্বব্যাপী জনমতকে সরিয়ে নেওয়া। এই প্রসঙ্গে,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং আরো কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ইরানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন এবং হাস্যকর অভিযোগের পুনরাবৃত্তিকে স্পষ্টভাবে অধিকৃত ফিলিস্তিনে গণহত্যা থেকে জনমতকে সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।#
পার্সটুডে/এমবিএ/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।