পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে আমেরিকার যেকোনো সিদ্ধান্ত মোকাবেলায় প্রস্তুত ইরান
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে তার দেশের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতায় একটি বাক্যও কম কিংবা বেশি করা যাবে না।
উত্তরাঞ্চলীয় তাবরিজ সফর শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাজি করানোর জন্য ইউরোপীয় দেশগুলো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, "ইউরোপীয়রা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাজি করানোর জন্য নিজ পকেটের অর্থ খরচ করে সফর ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে ইরানি জাতির পকেটের অর্থ খরচ করে ট্রাম্পকে রাজি করানোর কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই।" তিনি বলেন, " যতদিন ইরানের স্বার্থ নিশ্চিত থাকবে ততদিন তেহরানও পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকবে।
আগামী ১২ মে'র মধ্যে মার্কিন সরকার পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকবে কিনা সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। তাই সময় শেষ হওয়ার আগেই ইউরোপের কর্মকর্তারা পরমাণু সমঝোতায় সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য ট্রাম্পকে রাজি করাতে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা ও দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও আগামীকাল (শুক্রবার) পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখতে ট্রাম্পকে রাজি করানো এবং এর প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্য ওয়াশিংটন যাবেন বলে কথা রয়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলো ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন দিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাদের ইচ্ছামতো চুক্তিতে যদি পরিবর্তন আনা না হয় তাহলে তিনি এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাবেন। তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে হুমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা অগ্রিম বলা কঠিন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট গতকাল (বুধবার) জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের এক সমাবেশে বলেছেন, "আমরা জানি না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন কিন্তু অভ্যন্তরীণ কিছু কারণে এ চুক্তি থেকে তার বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বহুবার বলেছেন, আমেরিকা যদি পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে তাদেরকে এর জন্য চড়া মূল দিতে হবে। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর ইউরোপীয় কর্মকর্তারাও যদিও আমেরিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলে তাহলে তারাও ইরানের পক্ষ থেকে কঠিন জবাব পাবে। ইরানের কর্মকর্তারা আরো বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা নিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে তারা কোনো আপোষ করবে না। এ অবস্থায় পরমাণু বিষয়ে আমেরিকা যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন তা ইরানের নীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফও আমেরিকার বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৬