অক্টোবর ১৯, ২০২০ ১৭:০৩ Asia/Dhaka

ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী পাঁচ বছর পর ১৮ অক্টোবর ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘের আরোপিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটল। এখন থেকে ইরান কোনো বাধা ছাড়াই অস্ত্র আমদানি ও রপ্তানি করতে পারবে এবং সেইসাথে দেশটির ২৩ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সফরের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল।

এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্ব সমাজের জন্য নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজ ইরানের পরমাণু সমঝোতা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব রক্ষা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত কয়েক মাসে ইরান বিরোধী দীর্ঘ মেয়াদী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নবায়নের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৫টি দেশের মধ্যে একটি দেশ বাদে আর কোনো দেশই মার্কিন প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র স্ন্যাপব্যাক ম্যাকানিজম ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা বলবত করার চেষ্টা চালায় যেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা চালুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়। কারণ পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে মার্কিন সরকার এ ব্যাপারে তৎপরতা চালানোর সমস্ত অধিকার হারিয়েছে। এ অবস্থায় ইরানের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার বিষয়টিকে ইরানের জন্য বিরাট বিজয় এবং আমেরিকার জন্য অনেক বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের বিরুদ্ধে আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মার্কিন পদক্ষেপ এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।

অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার দুটি প্রভাবের বিষয়টিকে দুদিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, এর রাজনৈতিক প্রভাব এবং নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তগুলোর আলোকে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা। এটা মার্কিন স্বেচ্ছাচারী নীতির মোকাবেলায় তাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা। ভিয়েনায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলোতে ইরানের প্রতিনিধি কাজেম গারিব আবাদি এ ব্যাপারে বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এখন থেকে কোনো দেশের সঙ্গে ইরানের অস্ত্র লেনদেনের পথে আর কোনো বাধা থাকবে না। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আইনগত আর কোনো ভিত্তি থাকল না।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেও ইরান সামরিক খাতে খুব কম অর্থ বরাদ্দ দিত। কারণ ইরানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা ও সামরিক শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। সে কারণে অস্ত্র আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বাদ দিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তির ওপর ভর করে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নির্মাণের কাজ শুরু করে ইরান। বর্তমানে অস্ত্র শিল্পে এ দেশটি চোখ ধাঁধানো সাফল্য অর্জন করেছে এবং অন্যতম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেছেন, যেসব দেশ বহিঃশক্তির আগ্রাসন থেকে আত্মরক্ষা করতে ইচ্ছুক সেসব দেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করবে তেহরান। তিনি আরো বলেন, 'আমেরিকার অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার দেশগুলো চাইলে ইরান তাদের কাছে অস্ত্র রপ্তানি করবে।' তিনি বলেন, 'বিশ্বের বহু দেশ এরইমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং আমরা কিছু দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করেছি। কাজেই অস্ত্র বিক্রি এবং সুনির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র কেনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।' ইরান তার প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্রের শতকরা ৯০ ভাগ দেশেই উৎপাদন করে বলে জানান জেনারেল হাতামি। #  

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৯    

 

ট্যাগ