আজ রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক ফতোয়ার ৩২তম বার্ষিকী
(last modified Sun, 14 Feb 2021 11:16:04 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১ ১৭:১৬ Asia/Dhaka
  • আজ রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক ফতোয়ার ৩২তম বার্ষিকী

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.), ইব্রাহিম (আ.) ও পবিত্র কুরআনের অবমাননার অপরাধে ইমাম খোমেনী (র.) মুরতাদ রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া দিয়েছিলেন। 

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই ঐতিহাসিক ফতোয়া ঘোষণার (১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) বত্রিশতম বার্ষিকী। সেই থেকে রুশদিকে ইঁদুরের মতই গর্তে বা গোপন স্থানে বসবাস করতে হচ্ছে। 

ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর আর্থিক সহায়তাপুষ্ট ধর্মত্যাগী ও অত্যন্ত কুরুচির অধিকারী মুরতাদ সালমান রুশদির লেখা  ‘স্যাটানিক ভার্সেস বা শয়তানের পদাবলী’ নামক জঘন্য বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদীদের ওপর পুলিশি হামলায় কয়েকজন মুসলমান শাহাদত বরণ করেন। পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে নিন্দা ও বিক্ষোভ। আমেরিকা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ এবং শহরের মুসলমানরা ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। বাংলাদেশের মুসলমানরা অর্ধ-দিবস হরতালও পালন করেন।

কিন্তু বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে পাশ্চাত্য রুশদির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। (যদিও পাশ্চাত্যে ইহুদিবাদ ও কথিত হলোকাস্টের বিরুদ্ধে কথা বললে কঠোর শাস্তি পেতে হয়; সেখানে কেবল ইসলাম অবমাননার বেলায় বাক-স্বাধীনতার চেতনা জোরদার হয়ে ওঠে!) এ অবস্থায় ইরানে ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (র.) রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক ফতোয়া দেন। তার এই ফতোয়া বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের আনন্দিত করে। প্রখ্যাত সুন্নি আলেমরাও এই ফতোয়ার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বা ওআইসিও ইমাম খোমেনী (র.)’র ফতোয়ার প্রতি সমর্থন জানায়। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী রুশদির বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনীর ফতোয়াকে অপরিবর্তনযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইমামের এই ফতোয়া পবিত্র কুরআনের নির্দেশের আলোকে দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের বিধান যেমন পরিবর্তন বা বাতিল করা যায় না তেম্নি এই ফতোয়াও বাতিল বা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। 

ইরানের একটি সংস্থা রুশদির মাথার জন্য অন্তত: ২৫ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে এবং পরে এই পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে (৩৩ লাখ ডলার)। ইরানের অন্যান্য সংস্থাও রুশদিকে হত্যার জন্য পৃথকভাবে পুরস্কার ঘোষণা করে। ফলে মৃত্যুর ভয়ে আতঙ্কিত রুশদি ইঁদুরের মত আত্মগোপন করে। কখনও চলাফেরা বা সফর করতে হলে তা গোপনেই করতে বাধ্য হচ্ছে এই কুলাঙ্গার।

রুশদিকে রক্ষার জন্য প্রহরী নিয়োগসহ নিরাপত্তামূলক নানা ব্যবস্থার পেছনে ব্রিটেনকে প্রতি বছর খরচ করতে হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।  পশ্চিমা দেশগুলো রুশদির বিরুদ্ধে ইমাম খোমেনী (র.)’র ফতোয়া জারির কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পাশ্চাত্যের অনেক সরকার ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে রুশদির কারণে। কিন্তু ইরানের ইসলামী সরকার বলেছে, ইসলামী আইন অনুযায়ী প্রদত্ত এ ধরনের ফতোয়া বাতিল করার সাধ্য বিশ্বের কারো নেই।  ইসলামী আইন অনুযায়ী রুশদি যদি কখনও তওবাও করে তবুও তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে তার জঘন্য ও অমার্জনীয় অপরাধগুলোর জন্য। আর এই শাস্তি কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য।  রুশদিকে গত ২৫ বছর ধরে মৃত্যুর ভয় আর বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের ঘৃণা নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।  ‘আর পরকালের শাস্তি হবে আরো (অকল্পনীয় মাত্রায়) কঠোর।’

ভারতীয় বংশদ্ভুত ব্রিটেনের নাগরিক রুশদি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আত্মগোপন অবস্থায় রয়েছেন বলে মনে করা হয়। ব্রিটেনে লুকিয়ে থাকার পর সে কিছুকাল প্যারিসেও লুকিয়ে ছিল। কিন্তু সেখানেও স্বাভাবিক স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারেনি। সব সময় তাঁকে ঘিরে থাকত নিরাপত্তা রক্ষীরা। এমনকি প্রকাশকের দপ্তরে গেলেও তাকে পিছনের দরজা দিয়ে নেয়া হত এবং আত্মগোপনের স্থানে ফিরিয়ে আনা হত সাবওয়ে দিয়ে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ