বাড়তি প্রটোকল বন্ধ ইস্যুতে যৌথ বিবৃতি ও মার্কিন দ্বিমুখি পদক্ষেপ
(last modified Fri, 19 Feb 2021 11:20:31 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১ ১৭:২০ Asia/Dhaka

ইরানের সংসদে একটি বিল পাস করা হয়েছে এই মর্মে যে, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ইরান সরকার স্বেচ্ছায় পরমাণু সমঝোতার বাড়তি প্রটোকল বাস্তবায়ন স্থগিত করে দেবে। আপাত দৃষ্টিতে ইরানের দেওয়া ওই হুমকি বাস্তবায়নের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ওয়াশিংটনের দ্বিমুখি আচরণ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাইডেন সরকার গতকাল তার তথাকথিত সদিচ্ছা প্রদর্শনের কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘে মার্কিন চার্জ ডি অ্যাফায়ার্স-রিচার্ড মাইলস-নিরাপত্তা পরিষদকে একটি চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে তিনি তথাকথিত 'স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম' সক্রিয় করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে সমস্ত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরোপ করার ব্যাপারে ট্রাম্প সরকারের অবস্থান থেকে সরে আসার কথা ব্যক্ত করেছেন।

অপরদিকে, আমেরিকা বলেছে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে তারা নিউইয়র্কে ইরানি কূটনীতিকদের আসা-যাওয়ার ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা সীমাবদ্ধতাগুলো হ্রাস করবে। পাশাপাশি গতকাল মার্কিন উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি আমেরিকাকে আমন্ত্রণ জানায় তাহলে তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে। এর আগে ইইউর একজন সিনিয়র কর্মকর্তাও বলেছিলেন যে তিনি এ জাতীয় একটি বৈঠকের আয়োজন করতে প্রস্তুত। এই বৈঠকে ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক এইসব পদক্ষেপের পাশাপাশি ওয়াশিংটন ইরানের প্রতি চাপ এবং হুমকিও অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ইউরোপীয় ত্রোইকা অর্থাৎ- জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন- গতরাতে এক ভার্চুয়াল কনফারেন্স করেন। ওই কনফারেন্সের পর তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।  

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রিচার্ড মাইলস

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় বাড়তি প্রোটোকল বাস্তবায়ন স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক। সেইসঙ্গে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আইএইএ'র পরিদর্শন সীমাবদ্ধ করার পদক্ষেপকে "বিপজ্জনক" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি হোয়াইট হাউজে গেলে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসবেন। কিন্তু  তাঁর সরকার গঠিত হবার প্রায় একমাস পরেও তিনি এ বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেন নি। উল্টো বরং ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ব্যর্থ নীতিই অনুসরণ করছেন।

আসলে আমেরিকা সম্পর্কে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির বক্তব্যই যথার্থ। তিনি বলেছিলেন আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না। সেই সংশয় থেকেই সম্প্রতি তিনি বলেছেন: এবার আমরা অপর পক্ষের কথা কিংবা প্রতিশ্রুতি শুনে কাজ করব না, তাদের কাজ ও পদক্ষেপ এবার আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য এরইমধ্যে যৌথ ওই বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জারিফ বলেছেন: আমেরিকা ও ইউরোপের অসহযোগিতার কারণেই তেহরান পরমাণু সমঝোতার বাড়তি প্রটোকল বাস্তবায়ন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ইউরোপের তিন দেশ ও আমেরিকাকে অবশ্যই পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষক যোশেফ সিরিনসিয়নের কথাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন: বাইডেন যদি ইরানের ওপর ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ব্যর্থ নীতি সংশোধন না করেন তাহলে পরমাণু সমঝোতা হাত ছাড়া হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।#

পার্সটুডে/এনএম/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ