যে কারণে ইরানে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এতো গুরুত্বপূর্ণ
আগামী শুক্রবার ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর যত প্রতিকুল পরিস্থিতিই বিরাজ করুক না কেন সুষ্ঠুভাবে এ পর্যন্ত সমস্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনেই নয়া পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে এবং এসব পরিবর্তন আশা ও উদ্দীপনা নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
সাতজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি পেয়েছেন। তবে এরই মধ্যে দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রার্থীদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও এমনকি নির্বাচনী বিতর্কে প্রার্থীরা একে অপরকে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বললেও কতগুলো বিষয়ে তারা সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন। প্রতিটি প্রার্থীই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনে জিততে পারলে অভ্যন্তরীণ সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে চেষ্টা করবেন। তারা ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের ভাব-মর্যাদা ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। মার্কিন কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরানের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় সব প্রার্থীই তাদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বা কর্মসূচি বাস্তবায়নযোগ্য বলে দাবি করছেন।
তারা সবাই শক্তিশালী সরকার গঠন করে সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষা ও শক্তি অর্জন এবং পূর্ণ উদ্যমে দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনার কথা বলছেন। একইসঙ্গে তারা পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয় ও বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় তুলে ধরার পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিজেদের বিপ্লবী লক্ষ্য ও মূল্যবোধ রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জনসমর্থন লাভের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিজয় অর্জন এতোটা সহজ নয়। বিশেষ করে তারা সবাই জনগণের প্রধান দাবি অর্থাৎ জীবনমান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘব, চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, গৃহ সংকট কমিয়ে আনা, দুর্নীতি উৎখাত করা এবং সমাজে বিরাজমান বৈষম্য দূর করা প্রভৃতি বিষয়ে একমত পোষণ করলেও কেবলমাত্র আগামী নতুন সরকার পরিচালনার পদ্ধতি বা ধরন নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জনগণের মূল সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন সরকার গঠিত হলেও বহু ক্ষেত্রে তাদের ভুল নীতি ও দুর্বল পরিচালনা পদ্ধতির কারণে অনেক প্রতিশ্রুতিই তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ কারণে মুদ্রাস্ফীতি, জরুরি পণ্যের ঘাটতি, জাতীয় উৎপাদন ও অর্থনীতিতে ধ্বস নামে এবং এর প্রভাব বর্তমানে দেশব্যাপী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং তারা এ অবস্থার পরিবর্তন চায়। আগামী ১৮ জুন শুক্রবার অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইরানের সার্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে নির্বাচনে জনগণের উপস্থিতি কম হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এটাও ভাগ্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণে বিরাট ভূমিকা রাখবে। নির্বাচনে জনগণের সক্রিয় উপস্থিতি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, 'কখনো কখনো একটিমাত্র ভোটও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা যেন কেউ না ভাবে আমার একটি ভোটের কিইবা মূল্য আছে। কখনো কখনো একটি বা কয়েকটি ভোটও দেশের ভাগ্য নির্ধারণে বিরাট প্রভাব ফেলে।'
যাইহোক, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বিজয়ী প্রার্থী যে চিন্তাধারারই হোক না কেন সঠিক কর্মপন্থা নিয়ে যদি তারা অগ্রসর না হয় তাহলে কোনো লক্ষ্যই তারা অর্জন করতে পারবে না। এসব কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত ইরানের এবারের নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৬