প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা
'রেডিও তেহরানের বস্তুনিষ্ঠতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা মুগ্ধতার পরশ বিলিয়ে দেয়'
‘আইআরআইবি ফ্যান ক্লাব বাংলাদেশ'-এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৯ জন। বিজয়ীদের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো পার্সটুডেতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে। আজ প্রকাশিত হলো বাংলাদেশের রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার প্রতিযোগী মোস্তাফিজুর রহমান সাফির লেখা।
সংবাদ বিকৃতির চলমান যুদ্ধে নিদারুণভাবে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ ভরসার বিশ্বস্ত আশ্রয় খুঁজে নেয় রেডিও তেহরানে। সচেতন মানুষ মাত্রই নিজের দেশ ও সময়কে বুঝতে চায় নির্মোহভাবে। কিন্তু উপায় কই! পৃথিবীকে ইচ্ছেমত ভাগাভাগি, লুটপাট এবং স্থানবিশেষে যুদ্ধ বাঁধিয়ে নানা অশুভ শক্তি আমাদের চারপাশকে সেভাবেই দেখায়, যেভাবে ওরা দেখাতে পছন্দ করে; সেভাবেই ভাবায়, যেভাবে তারা ভাবাতে চায়। তাদের নাগপাশে আবদ্ধ মানুষের মুক্তির সম্ভাবনা মাত্রাতিরিক্ত নিরাশা মাত্র! বিপর্যস্ত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনার ক্ষীণ আলোকবর্তিকা রূপে ১৯৮২ সালে কার্যক্রম শুরু করে রেডিও তেহরান। রেডিও তেহরানের বস্তুনিষ্ঠতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বরাবরই মুগ্ধতার পরশ বিলিয়ে দেয়। সেই সাথে সংবাদ পরিবেশনের উৎকর্ষতা বাড়তি পাওনা!
রেডিও তেহরানের সাথে আমার পথচলা শুরু হয় মূলত পার্সটুডে নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে। ইরান বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য অন্বেষণকালে ওয়েবপেজটি নজরে আসে। এখানে সংক্ষিপ্ত, অথচ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা হয় বলে অল্প প্রয়াসে অধিক জ্ঞান অর্জন করা যায়। আমি এর নিয়মিত ভিজিটর হয়ে গেলাম। এরপর গুগল অ্যালগরিদম অনুযায়ী পার্সটুডের অন্যান্য নিবন্ধও সামনে আসতে লাগল। এভাবেই একদিন খুঁজে পেলাম 'পারস্যের প্রতিভা, বিশ্বের গর্ব' সিরিজটি। চমৎকার উচ্চারণ শৈলীতে পাঠক পাঠ করে চলেছেন পারস্যের খুশবু বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া মহাকৃতিজনদের জীবনালেখ্য! আমি শুনি আর মুগ্ধ হই! স্বজাতির এরূপ কৃতকর্মা গুণীদের আলোকচ্ছটায় নিজেকে রাঙিয়ে নিতে থাকলাম ক্রমাগত। একের পর এক শেষ হচ্ছিল এপিসোডগুলো। পরে জানলাম এই ধরনের আরও অসাধারণ অনুষ্ঠান রেডিও তেহরানে প্রচারিত হয় নিয়মিত। কিন্তু আমার কাছে যে কোন রেডিও নেই!
রেডিও তেহরানের অপর একটি ভালো লাগার বিষয় হলো- এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। কুইজ প্রতিযোগিতা, চিঠি লেখা প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাসহ হরেক আয়োজন চলতে থাকে সারা বছর জুড়ে। আমিও জুড়ে গেলাম এই মহা কর্মযজ্ঞের সাথে। এরপর এ ধরণেরই একটা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় হলাম দ্বিতীয়! অসম্ভব সুন্দর কিছু পুরস্কার পেলাম। প্রতি মাসেই কুইজের উত্তর পাঠাতে লাগলাম, পাঠালাম চিঠি! চিঠিগুলো প্রকাশ করা হলো আমার প্রিয় ওয়েবসাইট পার্সটুডেতে! এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়! রেডিও তেহরান শুধু সংবাদ জানার নিছক মাধ্যমে রইল না, বরং তা হয়ে উঠলো আমার ভালো লাগার একটা প্রতিষ্ঠান। রেডিও না থাকায় খুব বেশি সমস্যা হলো না। কারণ ততদিনে আমি অনলাইনে রেডিও শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি! কানে হেডফোন গুঁজে রেডিও তেহরান শুনে সময় কাটানো উপভোগ্য হয়ে উঠল। দূর তেহরান থেকে ভেসে আসা ভাষ্যকারদের কণ্ঠ আপন হয়ে উঠতে লাগল। যদিও তাদের কখনো দেখি নি, কিন্তু কণ্ঠস্বর শুনলেই মনে হয় তারা খুব আপন, খুব কাছের কোন মানুষ! প্রিয় মানুষগুলোর জাদুকরী কণ্ঠের ভেলায় সওয়ার হয়ে বিশ্ব দেখতে শুরু করলাম পরম ভালোলাগায়। আমার এখন ভাবতে ভালো লাগে যে আমি রেডিও তেহরানের একজন শ্রোতা!
রেডিও তেহরানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক যোগাযোগের গ্রুপ, পেজ এবং সামগ্রিক অর্থে একটা পরিবার। কতোটা শ্রোতাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হলে এই ধরনের সামাজিক কার্যক্রম গড়ে উঠতে পারে তা এখানে এসে দেখেছি। পরিচিত হয়েছি দেশ-বিদেশের অনেক ডি-এক্সারদের সাথে। বেতারের প্রতি তাদের অনিঃশেষ ভালোবাসা আমার মনে বিস্ময় যোগাতো প্রথমে। ধীরে ধীরে বুঝলাম এটিই তো স্বাভাবিক! আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে খানিকটা 'সেঁকেলে' হয়েও বেতার অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অধিক শ্রোতাবান্ধব এবং কম ক্ষতিকর। রেডিও তেহরান শুনে শারীরিক বা সামাজিক কোন ধরনের ক্ষতির আশংকা নেই, বরং উত্তরোত্তর উৎকর্ষতা রয়েছে। অন্তর্জালের নীল নেশায় জর্জরিত না হয়ে বরং রেডিও তেহরানের শ্রোতা হওয়া অধিক উপকার এবং সম্মানের। রেডিও তেহরান ক্রমশ উন্নতির চরম চূড়ায় পৌঁছে যাক- এই কামনা করি।
মোস্তাফিজুর রহমান সাফি
৪৩/২ মহল্লাঃ মীরের চক, থানাঃ বোয়ালিয়া
ঘোড়ামারা-৬১০০, জেলাঃ রাজশাহী।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫