শ্রোতাদের মতামত
'মুঘল যুগ বাদ দিয়ে ভারতের ইতিহাস কি পুরোটা জানা সম্ভব?'
মহাশয়, ৯ এপ্রিল রেডিও তেহরানের অনলাইন সংস্করণ পার্সটুডেতে প্রকাশিত "মুঘল আমলের অধ্যায়গুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করছে সরকার: তবে ভারতের ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না: ডা. ফারুক আবদুল্লাহ" শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আমার এই পত্রের অবতারনা।
নানা ভাষা, নানা পরিধানের মানুষ যুগ যুগ ধরে ভারতবর্ষে ঐক্য সূত্রে গ্রোথিত হয়ে আছে। শক, হূণ, পাঠান, মোগল এক দেহে লীন হয়ে গেছে। তারা সবাই আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। তাদের ভাষা, ধর্ম, আচারের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই তারা ভারতীয়। স্থাপিত হয়েছিল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। ভারতবাসী তার উপলব্ধিতে ও শিক্ষায় খুঁজে পেয়েছিল জাতীয়তাবাদের বীজ মন্ত্র। ঐক্য সাধনেই ভারত বর্ষ সূর্যের এক নাম।
দ্বাদশ শ্রেণিতে ইতিহাসে আর পড়তে হবে না মুঘল সাম্রাজ্য। ইতিহাস বই থেকে গোটা অধ্যায় বাদ দিল এনসিইআরটি। অর্থাৎ দেশের যে সমস্ত স্কুলে ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-র বই পড়ানো হয়, সেখানে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়বে মুঘল সাম্রাজ্যের অধ্যায়। আর সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
এনসিইআরটি'র তরফে সিলেবাসে ঠিক কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে? কিংস এবং ক্রনিকলস; মুঘল কোর্ট (সি. 16 এবং 17 শতক)-এই অধ্যায়টি দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, হিন্দি পাঠ্যপুস্তক থেকেও বেশ কিছু কবিতা ও অনুচ্ছেদও বাদ পড়তে পারে। ২০২৩-২৪ সাল থেকেই এই পরিবর্তনগুলো বলবৎ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইতিহাস ও হিন্দি বই ছাড়া, দ্বাদশ শ্রেণির 'সিভিকস' বইয়ের বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তন করছে এনসিইআরটি। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বই থেকে 'আমেরিকান হেজিমনি ইন ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স' এবং 'দ্য কোল্ড ওয়ার এরা'- নামের দুটি অধ্যায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণীর 'স্বাধীনতার পরে ভারতীয় রাজনীতি' থেকে 'জনপ্রিয় আন্দোলনের উত্থান' এবং 'এক পক্ষের আধিপত্যের যুগ' নামে দুটি অধ্যায়ও পরিবর্তন করা হয়েছে।
আবার দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক 'স্বাধীনতার পরে ভারতীয় রাজনীতি' থেকে 'জনপ্রিয় আন্দোলনের উত্থান' এবং 'এক পক্ষের আধিপত্যের যুগ' নামে দুটি অধ্যায়ও মুছে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি দশম এবং একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকেও পরিবর্তন করা হয়েছে, যেমন 'গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্য', 'জনপ্রিয় সংগ্রাম ও আন্দোলন' এবং 'গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ' বিষয়ক অধ্যায়গুলি দশম শ্রেণির বই 'গণতান্ত্রিক রাজনীতি-২' থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট বদলগুলি যে বাস্তবেই হতে চলেছে, সেবিষয়ে মেনে নিয়েছেন এনসিইআরটি'র এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এনসিইআরটি'র স্কুলের সিলেবাস কমানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর। পড়ুয়াদের সার্বিক বিকাশের জন্য সিলেবাস অর্ধেক কমানো উচিত মত দেন তিনি। সেসময় ২০১৯-এর শিক্ষাবর্ষ থেকে এনসিইআরটি'র সিলেবাস অর্ধেক ছাঁটা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ইতিহাসের সিলেবাস থেকে কেন শুধু মুঘল সাম্রাজ্যের মতো অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে, সেবিষয়ে কোনও যুক্তি পাওয়া যায়নি। যদিও এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
বিরোধীদের অভিযোগ, সারা দেশে গৈরিকীকরণের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে অর্ধসত্য পরিবেশন করে পড়ুয়াদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। এই ইতিহাস বিকৃতি অল্প বয়স থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভেদ-বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার বীজ বপন করতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষামহলের।
কিছু শিক্ষাবিদ প্রশ্ন তুলেছেন, মুঘল যুগ বাদ দিয়ে ভারতের ইতিহাস কি পুরোটা জানা সম্ভব?
দেশের জাতীয় শিক্ষানীতি এমন হবে যাতে শিক্ষার্থীগণ জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। তাদের মধ্যে জন্ম নেবে সংহত হওয়ার চেতনা। মোগল যুগকে অস্বীকার করে আমরা কি সেই জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হবার শিক্ষা দিতে পারব?
ধন্যবাদান্তে
বিধান চন্দ্র সান্যাল
বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।