নভেম্বর ১২, ২০২৩ ১১:২৫ Asia/Dhaka
  • রেডিও তেহরানের রংধনু আসরে থাকে শিক্ষণীয় বিষয় ও বার্তা

মহাশয়, হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশবের দিনগুলোতে কার না ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। 'সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি -----।' শৈশবের দিন অনেক মধুময় হয়। ছোটবেলার আনন্দ বড় হলে পাওয়া যায় না। বড় হলে বোঝা যায় ছোটোবেলার আনন্দ। তাই সবাই ছোটোবেলায় ফিরে যেতে চায়। 

আমরা আমাদের ছোটোবেলায় যেমন পড়াশোনা করেছি তেমনি মনের আনন্দে খেলাধুলা, দুষ্টুমি, ছুটোছুটি, হইহুল্লোড় কোন কিছুই বাদ যায়নি। কিন্তু আজকের ছেলে-মেয়েদের সেই সুযোগ আছে কি? আচ্ছা যদি আমরা আমাদের শৈশবে একান্তই ফিরে যেতে না পারি, আমরা কি আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে তাদের হারিয়ে যাওয়ার শৈশব ফিরিয়ে দিতে পারি না?

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমাদের ফুলের মতো সন্তানদের শৈশব বলে কিছু থাকছে না। তারা হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার জগতে। আমরা শুধু আমাদের সন্তানদের শিক্ষার মাঝে তাদের ডুবিয়ে রাখছি। কিভাবে ভালো রেজাল্ট করবে তা নিয়েই তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছি পড়াশোনার এক বিশাল ভাণ্ডার। তিন বছরে পা দিতে না দিতেই তাদের দিয়ে দিচ্ছি কেজি স্কুলে, বাসায় রেখে দিচ্ছি টিউটর। এই পড়ার মাঝে তারা হারিয়ে ফেলছে তাদের রঙিন শৈশব। পাথরের দালানকোটায় বন্দী তাদের ছেলেবেলা। তাদের কাছে এখন শৈশবের খেলা মানে স্মার্টফোনে গেইম খেলা বা কার্টুন দেখা। এভাবেই তারা বড় হচ্ছে। কিন্তু একটা জিনিস চিন্তা করুন তো আমরা কি এমন শৈশব কাটিয়েছি? 

আমরা এমন শৈশব কাটাইনি। আমরা বড় হয়েছি ছোটাছুটি করে। প্রকৃতির মুগ্ধ ছোঁয়ায় বড় হয়েছি। আমাদের শৈশব ছিল আনন্দের। বন্ধুদের সাথে নানান খেলায় মেতে বড়  হয়েছি। তবে বলুনতো, আমাদের সন্তানকে কেন এমন শৈশব থেকে বঞ্চিত করব? তারাও তো সুন্দর শৈশবের স্মৃতি মনে ধারণ করার অধিকার রাখে। সুতরাং চলুন, প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আমরা আমাদের সন্তানের সুন্দর শৈশব ভরিয়ে তুলি। সুস্থ সুন্দর বিনোদনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠুক তাদের ভবিষ্যৎ। তবেই তারা গড়ে তুলবে, আদর্শ সমৃদ্ধ দেশ। গড়ে তুলবে শান্তির ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব।

আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই শৈশবের দিনগুলো রূপকথার জগতে কেটেছে। সিন্ড্যারেলা, স্নো হোয়াইট, বেঙ্গমা-বেঙ্গমী, সুয়োরানী-দুয়োরানী অথবা পক্ষীরাজের ঘোড়া। রূপকথার প্রতিটি চরিত্র আমাদের জীবনে ছিল চরমভাবে বাস্তব। আজ নষ্টালজিয়ার মেমোরি লেন ধরে যখন হাঁটতে থাকি, তখনও বারবার এই রূপকথার জগৎ আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। রূপকথার গল্প একটি বাচ্চার মানসিক বিকাশে কতটা ইতিবাচক অথবা কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা সত্যিই তর্ক-সাপেক্ষে। কিন্তু একটা কথা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে এই রূপকথা যতোই মিথ্যে বা বিভ্রমের এক জগত হোক না কেন, আজ কিন্তু রূপকথার জন্যই আমাদের শৈশবটা আমাদের কাছে এতো প্রিয়।

রূপকথা নিঃসন্দেহে ফ্যান্টাসি আর বাস্তবতার সীমারেখাকে ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। একটি বাচ্চা তার ছোটোবেলায় রূপকথার জগৎটাকে সত্যি বলে মনে করতে থাকে। তার মনে হয় সিন্ডারেলাকে তার সৎ মা সৎ ভাই বোনের অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে হবে। দুয়োরানীর দুঃখ দেখে তার মন প্রাণ কেঁদে ওঠে। দৈত পুরীর রাক্ষস বধ করার উদ্দেশ্যে রাজপুত্রের সাথে সেও ঘোরায় চেপে পাড়ি দেয়। রূপকথার গল্পগুলো কিন্তু একটা বাচ্চাকে ভালো খারাপের পার্থক্য করতে শেখায়। ছোটবেলা থেকেই একটা বাচ্চা বুঝতে শেখে যে ভালো কাজের যেমন পুরস্কার পাওয়া যায় সবসময়, তেমন ই খারাপ কাজের জন্য শাস্তি বরাদ্দ রয়েছে। আর এই মূল্যবোধ কিন্তু আজীবন একটি মানুষের সাথে থাকে।

বাস্তব জীবনের সাথে অবশ্যই রূপকথার জগতের আকাশ-পাতাল পার্থক্য রূপকথার জগতে শুধুই সাদা আর কালো সেখানে ধূসর বর্ণের কোন স্থান নেই কিন্তু একটি বাচ্চা যদি ছোটবেলা থেকেই চরম বাস্তবতার সম্মুখীন হয় যদি ছোটবেলা থেকেই তাকে বোঝানো হয় যে জীবন সবসময় ভালো কাজে পুরস্কার পাওয়া যায় না অথবা beauty আর beast-এর লড়াইয়ে আজকাল সিন্ড্যারেলারই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে তাহলে তার শিশুমনে কী প্রভাব পড়তে পারে, ভেবে দেখুন একবার।

এই পৃথিবীর সম্পর্কে তার ধারণা,  তার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মূল্যবোধ গুলোই তো তৈরি হবে না।  যে পৃথিবীতে তাকে সামনের বহু বছর কাটাতে হবে তার সম্পর্কে প্রথমেই এত রুঢ় ও কঠিন সত্যের প্রকাশ করা হলে তার প্রভাব ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। এমনিতেই আজকাল বর্তমান প্রজন্মের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের জীবনে রূপকথার খুব একটা স্থান আছে বলে মনে হয় না। টেকনোলজি আর বাস্তবতার মেলবন্ধনে তাদের শৈশব আমাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। তবুও যেটুকু ইনোসেন্স আজও আছে, সেটুকুই না হয় বাঁচিয়ে রাখলাম। এটা খুব ভালো লাগে যে রেডিও তেহরানের মতো একটি আন্তর্জাতিক বেতার দীর্ঘদিন ধরে 'রংধনু আসর' নামে একটি অনুষ্ঠান শিশু-কিশোরদের জন্য প্রচার করে আসছে। এই অনুষ্ঠানে তারা রূপকথা উপকথার বিভিন্ন গল্প সুন্দরভাবে তুলে ধরে আর তার শিক্ষণীয় বার্তা এতো সুন্দর থাকে,  তাতে করে শিশু-কিশোরদের কাছে তা খুবই শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকে। যেমন গত ৯ নভেম্বর রংধনু অনুষ্ঠানে "কবুতর ও আবু তিমার"-এর এক অপূর্ব সুন্দর গল্প তুলে ধরা হলো। এই গল্পগুলোতে যেমন থাকে বিনোদন আর গাজী আব্দুর রশিদ ও আখতার জাহানের উচ্চারণে তা শ্রবণ আস্বাদনে এক আলাদা মাত্রা পেয়ে থাকে। ঠিক তেমনি তার ভিতরে থাকে নীতিকথা যা আমাদের সন্তানদের বিশেষ বার্তা নিতে সাহায্য করে। এর সাথে থাকে শিশুদের আবৃত্তি কিংবা গান যা শিশুদের কাছে আনন্দের বৈকি। তাই সকল শ্রোতাবন্ধুর কাছে বিনীত অনুরোধ- নিজ নিজ সন্তানদের 'রংধনু' অনুষ্ঠান শুনতে দিন, শুনতে অনুপ্রাণিত করুন। আর তাদের শৈশবে আনন্দানুভূতির কিয়দংশ ফিরিয়ে দিন।

 

ধন্যবাদান্তে---

বিধান চন্দ্র সান্যাল

বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১২

 

 

ট্যাগ