জানুয়ারি ০১, ২০২৪ ১৩:০৯ Asia/Dhaka

ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের শেষ দিনে তার মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনকে বরখাস্ত করেছেন।

নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে এলি কোহেনকে সরিয়ে দেয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথম কারণটি কোহেনের খারাপ পারফরম্যান্সের সাথে সম্পর্কিত। গাজা যুদ্ধের তৃতীয় মাস শেষ হতে চলেছে। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী বিশ্ব জনমতের পাশাপাশি বিশ্বের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে চাপের মধ্যে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কোহেন যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের কোনো অর্জনের বিষয়ে অন্য দেশকে জানাতে সফল হননি। এই কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে জনগণের ব্যাপক উপস্থিতিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

দ্বিতীয় কারণটি গাজা যুদ্ধের আগে সম্পর্কিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। গত ২৭শে আগস্ট এলি কোহেন ইতালিতে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন। কিন্তু এই বৈঠকটি ক্যামেরার আড়ালে ছিল না এবং এর ফলে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা আল-মংঘোশ তার দেশের জনগণের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়ায় তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার পর লিবিয়ায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে ইহুদিবাদী সরকার ও লিবিয়ার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ প্রক্রিয়া চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ইহুদিবাদী মিডিয়া এই ঘটনাকে তথ্য সুরক্ষায় কোহেনের দুর্বলতার জন্য দায়ী করে এবং তাকে বরখাস্ত করার দাবি জানায়।  কিন্তু নেতানিয়াহু তখন তা করেননি এবং এখন, বিরোধ তীব্র হওয়ার পর তিনি কোহেনকে বরখাস্ত করেছেন।

এলি কোহেনকে অপসারণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে

প্রথম লক্ষণ হল নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার মধ্যে মতপার্থক্যের অস্তিত্ব অনুভব করা যাচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে কোহেনের অপসারণ গাজা যুদ্ধের সময় হয়েছে যা একটি বিরল পদক্ষেপ। এছাড়া, কয়েকদিন আগে এবং বরখাস্তের সম্ভাবনার খবর প্রকাশের পরে কোহেন তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এবং ইয়েডিয়ট আহারোনট পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "আমি সরকারের চুক্তিকে সম্মান করি। তবে যুদ্ধের সময় এটি করা ঠিক নয়। আমি নেতানিয়াহুর জেদের কারণ বুঝতে পারছি না।" এই মন্তব্যটিও বিরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করছে। জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদক জিল হফম্যান লিখেছেন যে "নেতানিয়াহু ইসরাইলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটিকে অসম্মান করেছিলেন যাতে কোনো উন্নয়নে কোহেনের কোনো ভূমিকা না থাকে এবং নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।"

দ্বিতীয় লক্ষণ হল গাজা যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেওয়া। আজ কোহেনের বরখাস্তের পর, তিনি হিব্রু রেডিও ১০৩-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, "বর্তমান পরিস্থিতির দায় সরকারের। যুদ্ধ শেষে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং সব দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহি করতে হবে। এই বক্তব্য যুদ্ধে পরাজয়ের স্বীকৃতি।

তৃতীয় লক্ষণটি হল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা। কোহেনকে আজ নেতানিয়াহু বরখাস্ত করেছেন এবং নেতানিয়াহু যুদ্ধের পরে  তার মন্ত্রিসভার পতনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করবেন  এবং এমনকি তার রাজনৈতিক জীবনও শেষ হবে এমন প্রত্যাশাও জোরদার হচ্ছে। ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন এবং তার পদত্যাগের দাবি করছেন। এটি এমন সময় হচ্ছে যখন ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী গাজার সঙ্গে একটি অসম যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখার জন্য নেতানিয়াহু তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন গাওয়ারসহ আরও অনেক মন্ত্রীকে অপসারণ করবেন এমন সম্ভাবনা কম নয়।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ