জুন ২৩, ২০২১ ১৫:৪৫ Asia/Dhaka
  • দোহায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগ: সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে কোন দেশই তাদের করদ রাজ্য নয়

সৌদি আরব চার বছর আগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। এবার চার বছর পর দোহায় রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে সৌদি আরব।

২০১৭ সালের জুন থেকে সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরব ক্রমেই সম্প্রসারণকামিতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং তারা কাতারের মতো ছোট ছোট আরব দেশ ও ইয়েমেনের মত দুর্বল দেশগুলোকে রিয়াদের আজ্ঞাবহ করে করতে চায়। এসব ছোট ছোট ও দুর্বল আরব দেশগুলো বাহ্যিকভাবে স্বাধীন হলেও সৌদি আরব চায় এ দেশগুলোর পররাষ্ট্র নীতি ও কার্যক্রম রিয়াদের ইচ্ছে মত চলবে। মোটকথা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব অন্য আরব দেশগুলোকে তাদের অধীনস্থ মনে করে যারা কিনা স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকলেও তাদের পররাষ্ট্র নীতি অবশ্যই রিয়াদের ইচ্ছে অনুযায়ী চালাতে হবে। বাহরাইনের মত দেশের সরকার বহু আগেই সৌদি আরবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এবং রিয়াদ যা বলে সে অনুযায়ী তারা কাজ করে। কিন্তু অপর ক্ষুদ্র দেশ কাতার সরকার নিজস্ব স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধরে রেখেছে এবং তারা কোনোভাবেই সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণে চলতে প্রস্তুত নয় বরং রিয়াদের নীতির প্রতি কাতার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এমনকি সৌদি আরবসহ আরো তিনটি দেশ অর্থাৎ মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচণ্ড চাপ উপেক্ষা করে কাতার সরকার নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রেখেছে। শেষ পর্যন্ত কাতারের ব্যাপারে সৌদি আরবের নীতিতে পরিবর্তন আসে এবং কাতারের ব্যাপারে ব্যর্থতার বিষয়টিও রিয়াদ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।

যাইহোক অনেক নাটকীয়তার পর সৌদি আরব শেষ পর্যন্ত দোহায় নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত মানসুর বিন খালেদ বিন ফারহান আলে সৌদ কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নিজের পরিচয় পত্র পেশ করেছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কাতারে রাষ্ট্রদূত পাঠানোর ব্যাপারে সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্ত কয়েকটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। চলতি জুন মাসে সৌদি আরবের নতুন রাষ্ট্রদূত কাতারে ফিরে গেল। এর আগে ২০১৭ সালের জুনে সৌদি আরবের সাবেক রাষ্ট্রদূত দোহা ত্যাগ করেছিলেন। দুটি ঘটনাই ঘটেছে জুন মাসে। দোহায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত পাঠানোর বিষয়টিকে কাতার সরকারের জন্য সাফল্য  এবং রিয়াদের জন্য ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রদূত পাঠানোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে সৌদি সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল ছিল। সৌদির শাসকবর্গ এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে কোন দেশই সৌদি আরবের করদ রাজ্য নয় এবং সব দেশেরই নিজস্ব স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রয়েছে। এ কারণে কাতারসহ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের নীতি সংশোধনের চেষ্টা করছে রিয়াদ। কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে কাতারের ব্যাপারে সৌদি নীতির ব্যর্থতা থেকে এটাও প্রমাণিত হয়েছে বর্তমান যুগে স্বেচ্ছাচারিতাকে কেউ মেনে নেয় না। কোন কোন দেশ অন্য দেশের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা কিংবা নিজের নীতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য ওই দেশগুলোর সাথে মোড়লিপনা সুলভ আচরণ করে। কিন্তু কাতারের মতো একটি ছোট্ট দেশের ব্যাপারে সৌদি নীতির ব্যর্থতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে এ অঞ্চলে সৌদি আরবের কোনো প্রভাব নেই এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন।#

পার্সটুডে/এমআর/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ