মে ২৭, ২০২৪ ২১:১৬ Asia/Dhaka
  • ইরানের মাশহাদ শহরে শহীদ প্রেসিডেন্ট রায়িসির শোকানুষ্ঠানে জনগণের বিপুল উপস্থিতি
    ইরানের মাশহাদ শহরে শহীদ প্রেসিডেন্ট রায়িসির শোকানুষ্ঠানে জনগণের বিপুল উপস্থিতি

ক্ষমতার সমীকরণ কেবল বাহ্যিক বড়াই বা অহংকার, শক্তির দাপট বা বলদর্পিতার আতঙ্ক ও পরাশক্তির ইমেজ বা ভাব দিয়েই প্রকাশ পায় না। ইরানের মুসলিম জাতির ইসলামী বিপ্লবের সময় ও এর পরবর্তী ঘটনাগুলোতেও প্রতিরোধ ও বিজয়ের অনন্য সাফল্য অর্জন এর অন্যতম দৃষ্টান্ত।

পবিত্র কুরআনের সুরা ফুসিলাতের ত্রিশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

 

إِنَّ الَّذینَ قالوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ استَقاموا تَتَنَزَّلُ عَلَیهِمُ المَلائِکَةُ أَلّا تَخافوا وَلا تَحزَنوا وَأَبشِروا بِالجَنَّةِ الَّتی کُنتُم توعَدونَ

 

নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।

এই আয়াতের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি এবং ইরানি জাতি সম্পর্কে তিনি যে দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এখানে তুলে ধরছি:

মহান আল্লাহর দাসত্ব

সাম্প্রতিক ও দৈনন্দিন ঘটনা-প্রবাহ মন ও চিন্তা-চেতনাকে ব্যাপকভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আত্মা। তাই আধ্যাত্মিক ধবংসযজ্ঞের এই মহাক্ষতি পূরণের জন্য 'আল্লাহ আমাদের প্রভু'-এই স্বীকারোক্তি বার বার উচ্চারণ করা ও তাঁর বিধি-বিধানের সামনে নতজানু হয়ে সবক্ষেত্রে সার্বিক দাসত্ব করার চেষ্টা জরুরি। বিষয়টি অনেক বড় ব্যাপার হলেও যথেষ্ট নয়। তাই দরকার এতে অবিচল বা দৃঢ় থাকা।

দৃঢ়তা বা অবিচলতা

আর এ জন্যই ওই আয়াতে আল্লাহকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নেয়ার কথা উল্লেখের পর মহান আল্লাহ বলেছেন, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকতে হবে। -এই নীতি ও পথের ওপর অবিচল থাকলেই তাদের জন্য নেমে আসবে আল্লাহর ফেরেশতারা। এক মুহূর্তে আমি আল্লাহর দাস বা আল্লাহ আমার প্রভু –এ কথা বললেই ফেরেশতা নেমে আসবেন না। এ কথা বলা যত সহজ হলেও কাজে পরিণত করা অনেক কঠিন। বিশ্বের নানা ঘটনা-প্রবাহ, ঘূর্ণিপাক, বিদ্রুপ ও পরিহাস এবং অন্যায্য শত্রুতার মুখে এই পথে টিকে থাকা সহজ নয়। ফলে তারা থেমে যায়। অনেকে কেবল থেমেই যায় না। তারা পিছু হটে বা বিপরীত পথ ধরে।

যেসব মানুষের নেই ভয় ও দুঃখ

মানুষ যখন কোনো কিছুই হারায় না তখনই দুঃখিত ও উদ্বিগ্ন হয় না। প্রথমত মহান আল্লাহর দাসত্বে অবিচলতার পথে আসে অনেক সাফল্য। দ্বিতীয়ত মানুষ যদি এ পথে কিছু হারায়ও তবুও তা খোদায়ি দায়িত্ব পালনের পথে হারায় বলে তার বিবেক ও মন প্রশান্ত থাকে। যেমন শহীদ পরিবার নিজ সন্তানদের আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার কারণে হারানোর বেদনা অনুভব করা সত্ত্বেও একইসাথে আনন্দিত ও প্রফুল্লও থাকে।

ইরানি জাতির দৃঢ়তা ও এর সুমিষ্ট সুফল  

ক্ষমতার সমীকরণ কেবল বাহ্যিক বড়াই বা অহংকার, শক্তির দাপট বা বলদর্পিতার আতঙ্ক ও পরাশক্তির ইমেজ বা ভাব দিয়েই প্রকাশ পায় না। ইরানের মুসলিম জাতির ইসলামী বিপ্লবের সময় ও এর পরবর্তী ঘটনাগুলোতেও বিশেষ করে ইরানের ওপর ইরাকের সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধেও ইরানিদের প্রতিরোধ ও বিজয়ের অনন্য সাফল্য অর্জন এর অন্যতম দৃষ্টান্ত। সাদ্দাম ওই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল মার্কিন সরকারের সহায়তায়।

বর্তমানেও ইরান দৃঢ়তা ও অবিচলতা বজায় রেখেছে এবং এর ফলে বিজয় অর্জন করছে তারা। ইরানের বিরুদ্ধে যেসব চাপ দেখা যায়- যেমন, প্রচারণাগত চাপ, রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক চাপ, শত্রুদের মাধ্যমে দেশের ভেতর থেকেই বিশ্বাসঘাতকতামূলক নানা চাপ ইত্যাদি- এসবই এ কারণে যে ইরানি জাতি পবিত্র কুরআনের এ বাণী তথা 'নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে'- এই ঘোষণা দিয়েছে সুস্পষ্টভাবে খোদায়ি বিধানের ওপর ভরসা করে যাতে নিজ বৈধ অধিকার আদায় করা যায় ও বিজাতীয়দের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা যায় এবং এর ওপর অবিচল রয়েছে সর্বোচ্চ দৃঢ়তা নিয়ে।

ইরানি জাতির এই দৃঢ়তার কারণে মার্কিন বলদর্পিতা ও এর পরাশক্তিসুলভ প্রতাপ আর দাপট বিলুপ্ত হয়েছে জাতিগুলোর চোখের সামনে এবং জাতিগুলো জেগে উঠেছে, তারা হয়ে উঠেছে নির্ভিক ও সাহসী। আর এই দৃঢ়তা ও অবিচলতার কারণেই মহান আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে বরকত ও রহমত নাজিল করছেন- তথা তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না বা মন-ভাঙ্গা হয়ো না, চিন্তা করো না- ফলে আমরা দেখছি যে ইরানি যুবকদের হৃদয়ে শত্রুর প্রতি কোনো ভয় নেই।

প্রেসিডেন্ট রায়িসির শাহাদাতে তেহরানের শোক সমাবেশের একাংশে একদল ইরানি নারী 

মহান আল্লাহ অকাট্য ওয়াদা দিয়েছেন যে, 'নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।' অর্থাৎ আল্লাহর পথে অবিচল থাকলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষের ভয় ও দুঃখ দূর করেন ও তাদেরকে সাফল্য দান করেন। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহর পথ। আল্লাহর পথে চলার অর্থ মানে এই নয় যে কেবল ঘরের এক কোণে বসে ইবাদাত করা। আল্লাহর পথ মানে মানুষকে সৌভাগ্যের দিকে এগিয়ে নেয়া। ইরানি জাতি এই পথই বেছে নিয়েছে। এ পথ ন্যায়ের, দৃঢ়তার, খোদায়ি দাসত্বের, মানুষের সাম্যের, ভ্রাতৃত্বের, সব সুন্দর নীতি ও নৈতিকতার ও গুণের এবং সব মানবীয় মহত গুণের। আর তারা এই পথের ওপর অনঢ় রয়েছে। আর এ জন্য তারা নানা কষ্ট সহ্য করছে ও শত্রুদের ভয় করছে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহ এই প্রতিরোধের ও ধৈর্যের সুমিষ্ট নানা প্রতিদান আস্বাদন করাবেন।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।   

 

ট্যাগ