নভেম্বর ০৯, ২০২০ ২২:৩২ Asia/Dhaka
  • ফরাসি 'বাক-স্বাধীনতা'র স্বরূপ, হলোকাস্ট ও মহানবীকে (সা) ব্যঙ্গ করার রহস্য

বাক-স্বাধীনতার নামে ফ্রান্সে মহানবীকে ( সা.) হেয় ও অপমান করে কার্টুন বা ব্যঙ্গ-চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে বিশ্ব জুড়ে যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তারই প্রেক্ষাপটে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উযমা খামেনেয়ি এবং প্রাক্তন মালয় প্রধানমন্ত্রী ড: মাহাথির মোহাম্মদের বক্তব্য ও আহ্বানের মাঝে দুস্তর ব্যবধান ও মৌলিক পার্থক্য দৃশ্যমান।‌

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি ফ্রান্সে মহানবীকে (সা.) হেয় করে কার্টুন ও ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ফ্রান্সসহ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার তরুণ ও যুব সমাজকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, পাশ্চাত্যের দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ইসলাম-ফোবিয়া বা ইসলাম-আতঙ্ক ও ইসলামের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রচেষ্টায় ও প্রচারণায় কান দেয়া ও প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। বরং তাদের উচিত নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানার ও গবেষণার চেষ্টা করা।

আর মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শাসণামলে ফ্রান্স যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ মুসলমানকে হত্যা করেছিল সেজন্য এবং মহানবীকে ( সা.) অবমাননা ও হেয় করে ফ্রান্সে কার্টুন ও ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করার জন্য মুসলমানরা ফ্রান্সের জনগণকে হত্যা করার অধিকার রাখে। আর এ কারণে টুইটার কর্তৃপক্ষ মাহাথিরের অ্যাকাউন্ট বাতিল ও বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার অ্যাকাউন্টও পাশ্চাত্যের তরুণ যুবকদের উদ্দেশ্যে চিঠি দেয়ার জন্য ইন্স্ট্রাগ্রাম কর্তৃপক্ষ বাতিল ও বন্ধ করে দিয়েছে !! (অবশ্য ইনস্ট্রাগ্রামে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার অন্য একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় কয়েক ঘণ্টা পর) আর এ থেকে খুব স্পষ্ট হয়ে যায় পাশ্চাত্যের দাবিকৃত বাক-স্বাধীনতার প্রকৃত স্বরূপ ও উদ্দেশ্য।

অথচ ফ্রান্সের লঘু-মস্তিষ্ক প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন বাক-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ঐ জঘন্য ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শনের পক্ষে কথা বলেছেন ও সাফাই গেয়েছেন। আর ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব-লুটেরা ও বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারের স্বর্গরাজ্য ব্রিটেনও ফ্রান্সের অপরিণামদর্শী প্রেসিডেন্টের নীতি অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। আর ব্রিটেন তা তো করবেই। কথায় বলে সব রসুনের গোড়া এক।

এই ব্রিটেনই ১৯৮৮ সালে মহান রাসূলুল্লাহ সা. ও ইসলামকে নিয়ে তীব্র কটাক্ষ, অবমাননা ও হেয় করে লেখা মুরতাদ সালমান রুশদির দ্য স্যাটানিক ভার্সেস নামক কুখ্যাত ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী বই প্রকাশ করে তাকে সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছিল তথাকথিত বাক- স্বাধীনতার ধুয়ো তুলে ও দোহাই দিয়েই।

গালিগালাজ ব্যঙ্গ- বিদ্রূপ হচ্ছে যুক্তি-প্রমাণের মোকাবেলায় ইতরদের প্রধান ও সর্বশেষ অস্ত্র

আসলে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও ইসলাম ফোবিয়া ( ইসলামের ব্যাপারে ভয়ভীতি ) তৈরির ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে কোনো অভিন্নতা নেই। ওরা সব এক। তাই ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ও সুইডেন ইত্যাদির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। সমগ্র বিশ্ব জগতের রহমত, দয়ার নবী, মানবতার নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয় রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতবা ( সা. ) এবং যুক্তি, শান্তি, ন্যায় , কল্যাণ ও মুক্তির পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলাম ও বিশ্ব মানবতার হিদায়াতের মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সুমহান প্রামাণ্য অকাট্য দলিল ও যুক্তির কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিকভাবে পরাজিত ও দেউলিয়া পাশ্চাত্য শেষ হাতিয়ার ও রক্ষাকবচ হিসেবে গায়ে পড়ে ঝগড়া - বিবাদ, অভদ্রতা, অসভ্যতা, অশালীনতা, অসহিষ্ণুতা, গালিগালাজ, ব্যঙ্গ- বিদ্রূপ, দ্বন্দ্ব - সংঘাত ও সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার পথই বেছে নিয়েছে।

আসলে বিশ্বব্যাপী এমনকি পাশ্চাত্যেও ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রসার ঐ পশ্চিমা দেশগুলোর জালেম সরকার ও দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে বলেই তারা এ ধরণের ঘৃণ্য জঘন্য ন্যক্কারজনক অযৌক্তিক-অনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাদের আশা এতে করে যদি শেষ রক্ষা হয় অর্থাৎ পাশ্চাত্যের অমুসলিম অধিবাসীদের মনে ইসলাম ফোবিয়া ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ উস্কে দিয়ে পাশ্চাত্যে ক্রম-প্রসারমান ইসলামের অগ্রযাত্রা ও অগ্রগতি থামিয়ে দেয়া যায়।

হযরত মুহাম্মদ ( সা.) এর মতো মহামানবকে হেয় ও অবমাননা করে আঁকা ব্যঙ্গচিত্র কি আসলে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সিদ্ধ বা জায়েয ( বৈধ ) করা যাবে? এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্গ চিত্র কি সুস্থ মন-মানসিকতার পরিচায়ক নাকি তা অসুস্থ অনুদার সংকীর্ণ অসভ্য অভদ্র ছোটলোকি মন-মানসিকতা ও হীনমন্যতারই পরিচায়ক? ব্যঙ্গ-চিত্র প্রকাশের অর্থ কারো প্রতি অন্তরের চরম ঘৃণা প্রকাশ এবং গায়ে পড়ে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, খুনাখুনি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া এবং সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়িয়ে ও উস্কে দেয়া ছাড়া আর কিছু কি? আর এ ধরণের আচরণ ও কার্যকলাপ যদি বাক স্বাধীনতা হয় তাহলে পুরো পাশ্চাত্যকে বুনো, অসভ্য ও অভদ্র, হীন, নীচ ও ইতর বলেই অভিহিত করা উচিত।

তবে পাশ্চাত্যের অনেকেই যারা তাদের সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এহেন জঘন্য ঘৃণ্য অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদী তাদের কথা অবশ্য ভিন্ন। আর পাশ্চাত্যেরই এক স্বনামধন্য লেখক বিশ্বের মানব জাতির ইতিহাসে সর্ব বিখ্যাত এক শত মহা-মনীষীর জীবনী, কর্মকাণ্ড ও অবদান নিয়ে লেখা গ্রন্থ 'দ্য হান্ড্রেড'-এ মহানবীকে ( সা.) মানবজাতির সর্বকালের সফল ও শ্রেষ্ঠ ১ নং মনীষী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁকে ( সা.) সকল মনীষীর শীর্ষে স্থান দিয়েছেন। হযরত মুহাম্মাদের ( সা.) নাম ও তাঁর সসুমহান আদর্শ মিটিয়ে ফেলার কোনো শক্তিই নেই এ নিখিল বিশ্বে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তাঁর (সা.) স্মরণ ও যিকরকে সর্বদা সমুন্নত রেখেছেন এবং রাখবেনই : (( ওয়া রফা'না লাকা যিকরাক্ )) وَ رَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَاكَ

(( আর আমরাই আপনার স্মরণকে উন্নীত করেছি। - পবিত্র কুরআন ))

তাই কতক অখ্যাত-কুখ্যাত ইতর-বদমাশের এহেন জঘন্য কাজ ও ঘৃণ্য আচরণের চরম মাশুল ও দণ্ড ফ্রান্সের সাম্রাজ্যবাদী রক্তপিপাসু জালেম বিবেক হীন লম্পট দুর্নীতি পরায়ণ দেউলিয়া ম্যাক্রোন সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে এই জঘন্য ঘৃণ্য অমানবিক অন্যায়ের সমর্থন দেয়ার জন্য । আর এ জন্য শীঘ্রই এই চরম ঋণগ্রস্ত দেউলিয়া ফরাসী সরকারকে অনুতপ্ত হতেই হবে। (ইতোমধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা না করলেও ম্যাক্রন কিছুটা পিছু হটে সুর নরম করেছেন এবং বলেছেন শার্লি এবদো'র কার্টুন প্রকাশের সঙ্গে তার সরকারের সম্পর্ক নেই, যদিও আগে বলেছিলেন যে ইসলাম সংকটে রয়েছে এবং বাক-স্বাধীনতার অধিকার-বলে এ ধরনের ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ অব্যাহত থাকবে!)

বাক-স্বাধীনতার মতো পাশ্চাত্যের কতকগুলি ফাঁকা অন্তঃসারশূন্য কিছু মুখরোচক বুলি, তত্ত্ব ও পরিভাষা আছে যেগুলো দিয়ে পাশ্চাত্য সবার চোখে ধুলো দেয়ার ও মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করে করে। তবে পাশ্চাত্যের ভেল্কিবাজি ও জারিজুরির দিন শেষ হয়ে গেছে। তাই সারা মুসলিম-বিশ্ব আজ ফ্রান্সের এ জঘন্য ঘৃণ্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঈমান ও আত্মসম্মানবোধ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও রোষানলে ফেটে পড়েছে। এ জঘন্য অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়াও জঘন্য ঘোরতর অন্যায়। কেউ কি তার পিতা-মাতার মতো আপনজনকে গালি দেয়া, অবমাননা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা হলে বিদ্রূপ ও গালিগালাজকারীকে ছেড়ে দেবে ?!! আর হযরত রাসূলুল্লাহ ( সা. ) মুসলমানদের কাছে জন্মদাতা পিতামাতার চেয়েও বেশি প্রিয়, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত, নিকটবর্তী তথা সবচেয়ে বেশি প্রিয়, নিকটবর্তী, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ও আপন অর্থাৎ তাদের রূহানী পিতা।

 ((পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে : নবী النَّبِیُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ

( সা.) মুমিনদের নিজেদের চেয়ে মুমিনদের বেশি নিকটবর্তী ও তাদের উপর বেশি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ( أَوْلَىٰ ) ))

তাই কতিপয় মানবেতর ব্যক্তি মহানবীকে ( সা.) হেয় ও অপমান করলে মুসলমানরা যে রাগে দুঃখে ও ক্ষোভে ফেটে পড়বে না এবং অবমাননাকারীদেরকে শায়েস্তা ও শাস্তিদান করবে না তা কি কল্পনা করা যায় ? !! আর এ কেমন বাক-স্বাধীনতা যা বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের হৃদয়কে দু:খ-ভারাক্রান্ত, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ করছে? এ ধরণের বস্তাপচা বাক-স্বাধীনতার এক পয়সাও মূল্য নেই।

মহানবীর (সা) প্রতি অবমাননায় ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় মদদের প্রতিবাদে মুসলিম বিশ্বের ফরাসি পণ্য বর্জন জোরদার হচ্ছে 

 

ফ্রান্স যদি মুক্ত-চিন্তা ও বাক-স্বাধীনতার ধ্বজাধারী ও সূতিকাগার হয় তাহলে ফ্রান্স কোন্ যুক্তিতে হলোকাস্ট বিরোধী বক্তব্য এবং লেখালেখি নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে পারল? মহান আল্লাহ পাককে ও তাঁর সম্মানিত রাসূলকে ( সা: ) অবমাননা করে ব্যঙ্গ চিত্র অংকন ও প্রচার করা হলে তা হয় বাক-স্বাধীনতা! আর এতে বাঁধা দিলে অথবা এর প্রতিবাদ করা হলে তা হবে একদম "বাক-স্বাধীনতা" বিরোধী!

ফ্রান্সে হলোকাস্ট বিরোধী বক্তব্য দেয়া ও লেখালেখি করা অত্যন্ত মারাত্মক দণ্ডনীয় অপরাধ যা দমন ও শাস্তি যোগ্য ; আর তাই ফ্রান্সে হোলোকাস্টের বিরুদ্ধে লেখালেখি করলে ও বক্তব্য রাখলে সাথে সাথে লেখক ও বক্তাকে জেলে পাঠানো হয় যা হচ্ছে ফ্রান্সের তথাকথিত বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নীতিরই বিরোধী। এই হলো ফ্রান্সের বাক-স্বাধীনতার প্রকৃত স্বরূপ যা সত্যি স্ববিরোধিতামূলকও বটে !! আর ফরাসী সরকারের কাছে বাক-স্বাধীনতার সীমা-পরিসীমা বা রেড লাইন হচ্ছে বিতর্কিত হলোকাস্ট ইস্যু!

হলোকাস্টের কল্প-কাহিনী ও বাক-স্বাধীনতার নামে দ্বিমুখী নীতি

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি নাকি ৬ মিলিয়ন ইহুদীকে গ্যাস-চেম্বারে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল যা হলোকাস্ট নামে প্রসিদ্ধ। অনেক গবেষক ও ইতিহাসবিদের মতে এই হলোকাস্ট সত্য নয় এবং অনেক গবেষক ও ইতিহাসবিদ আবার এ ঘটনা বাস্তবে ঘটার ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পাশ্চাত্য বিশেষ করে ফ্রান্স এ ঘটনাকে ধ্রুব সত্য বলে গ্রহণ করেছে ও এ বিষয়টি সকল তর্ক, সন্দেহ এবং গবেষণার ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত-বাস্তবতা বলে মেনে নিয়ে যে কেউ এর বিরোধিতা ও অস্বীকার করবে তাকে জেল ও জরিমানার সম্মুখীন হওয়ার আইনও পাস করেছে।

 আর এই বিতর্কিত হলোকাস্টের ধুয়ো তুলেই ফিলিস্তিনে সেখানকার আসল অধিবাসীদের উচ্ছেদ ও বিতাড়িত করে মেকি-রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইলের গোড়াপত্তন করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে; আর ইসরাইলের প্রতিষ্ঠায় পাশ্চাত্য বিশেষ করে ব্রিটেন , ফ্রান্স , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মদদ করেছিল জায়নবাদীদেরকে।

তাই এখন বোঝা গেল যে নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ ( God, ভগবান, ঈশ্বর, খোদা ), নবী - রাসূল, ধর্ম ও ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস, নীতি-নৈতিকতা, আখলাক ( শিষ্টাচার ), শালীনতা, মান-সম্ভ্রমহানি ইত্যাদি ফ্রান্সের তথাকথিত বাক-স্বাধীনতার সীমা-পরিসীমা ও রেড লাইন নয়; বরং এর রেড লাইন হচ্ছে বিতর্কিত হলোকাস্ট যার সত্যতা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত ও নিরূপিত হয়নি। স্মর্তব্য যে প্রায় দুই দশক আগে ফরাসী দার্শনিক পণ্ডিত মরহুম ড: রোজার গারোদীকে বাক-স্বাধীনতার প্রবক্তা ও ধ্বজাধারী ফরাসী সরকার হলোকাস্ট সম্পর্কে ভিন্নধর্মী মত প্রকাশ করে বই লিখার অপরাধে কারাদণ্ড ও বিরাট পরিমাণ অর্থ জরিমানা করেছিল !!!

হলোকাস্টের মতো এ সব বিতর্কিত বিষয় বাক স্বাধীনতার সীমা-পরিসীমা বা রেড-লাইন হওয়া বাঞ্ছনীয় না ধর্ম, শালীনতা, নীতি-নৈতিকতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, আখলাক ( চারিত্রিক নীতিমালা ) , শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়ানো ও অশান্তির আগুন নির্বাপিত করার জন্য উস্কানিমূলক ও অবমাননাকর বক্তব্য, কথা ও কর্মতৎপরতা এই বাক স্বাধীনতার চৌহদ্দি ও রেড লাইন হওয়া বাঞ্ছনীয়? কোনটা? পাশ্চাত্য বিশেষ করে ফ্রান্সের এ ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। আর এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে তথাকথিত বাক-স্বধীনতার ঘূর্ণাবর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে ফ্রান্সের মতো দেশগুলো।

তাই কোনো অনৈতিক-অযৌক্তিক গর্হিত অন্যায় কাজে বাধাদানকে কেন বাক স্বাধীনতা / স্বাধীনতা পরিপন্থী বলে গণ্য করা হবে ?? এ কেমন বিচার? এটা কি ফ্রান্সের কপট-দ্বিমুখী আচরণ নয় ?

পরিশেষে এ কথা বলতে হয় পাশ্চাত্য বিশেষ করে ফ্রান্স এ ধারণার বশবর্তী হয়ে এ জঘন্য ঘৃণ্য অন্যায়ের আস্কারা দিচ্ছে যে খুব সম্ভবতঃ মহানবীর ( সা.) ব্যক্তিত্ব, ভাবমূর্তি, সম্মান ও শ্রদ্ধা ব্যঙ্গ চিত্র এঁকে বিনষ্ট করে তাঁকে বিশ্ববাসীর কাছে খেল-তামাশার পাত্র বানিয়ে ও হালকা করে উপস্থাপন করতে পারলেই বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে ফ্রান্সে ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রসার সম্পূর্ণ বন্ধ যদি নাও হয় তবে এতে ভাটা ফেলা সম্ভব হবে এবং মুসলমানরাও তখন মনের শক্তি ও ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এই ক্যারিকেচার ও ব্যাঙ্গ চিত্র প্রদর্শনের টার্গেটই হচ্ছে মহানবীর ব্যক্তিত্বের ধ্বংস সাধন যা অতীতে তাত্ত্বিক সমালোচনা, সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করে ও জটিল প্রশ্ন উত্থাপনের মাধ্যমেও সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সময় মুসলিম মনীষী ও আলিম উলামা এ গুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং দিয়েছেনও।

মহানবীর (স) অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

 

তাই এখন পাশ্চাত্য বিশেষ করে ফ্রান্স বাক-স্বাধীনতার গোঁজামেলে তত্ত্বের ছত্রছায়ায় ব্যঙ্গ-চিত্র প্রদর্শনের মতো এই অনৈতিক অযৌক্তিক অশালীন অবমাননাকর ও মানহানিকর পদ্ধতি প্রয়োগ করে পবিত্র ইসলাম ধর্ম ও মহানবীর (সা.) ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র এঁটেছে তা নস্যাৎ করা প্রত্যেক মুমিন মুসলিম নর-নারীর ধর্মীয় ঈমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য। অবমাননা, মান সম্ভ্রমহানি, বেয়াদবি, অসভ্য অভদ্র অশালীন আচার আচরণ, ব্যক্তিত্বহানি ও ব্যক্তিত্ব হত্যা বা চরিত্র হনন - এগুলো হচ্ছে বাক স্বাধীনতার রেড-লাইন বা চৌহদ্দি ও সীমা-পরিসীমা যা অতিক্রম করা হবে অবশ্যই শাস্তিযোগ্য ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ কথা কি লঘু মস্তিষ্ক ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন ও তার সতীর্থদের মাথায় আছে?

পুনশ্চ: ফ্রান্সের জনসংখ্যার শতকরা ৬০.৪ ভাগ হচ্ছে বেজন্মা ( জারজ )। যেহেতু দেশটির বেশিরভাগ অধিবাসী বেজন্মা সেহেতু এ দেশটি বিশেষভাবে মহানবীর সা. শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছে। এখন থেকে ফ্রান্সকে বেজন্মাদের দেশ বা বাস্টার্ড'সল্যান্ড ফ্রান্স বললে অত্যুক্তি হবে না। কেবল জারজরাই পারে মাসূম-নবী, রাসূল ও ইমামদের বিরুদ্ধে এ ধরণের জঘন্য শত্রুতায় লিপ্ত হতে।

লেখক: মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান, ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক

পার্সটুডে/এমএএইচ/৯


 

 

ট্যাগ