ইয়েমেনে সৌদি আরবের ভয়াবহ গণহত্যা: নীরব আন্তর্জাতিক সমাজ
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i102788
ইয়েমেনের মধ্যাঞ্চলীয় সা'দা প্রদেশ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় হুদায়দা শহরে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের পাশবিক বিমান হামলায় অন্তত ৭৭ জন নিহত ও প্রায় ২৩০ জন আহত হয়েছে।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
জানুয়ারি ২২, ২০২২ ১৭:০৯ Asia/Dhaka

ইয়েমেনের মধ্যাঞ্চলীয় সা'দা প্রদেশ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় হুদায়দা শহরে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের পাশবিক বিমান হামলায় অন্তত ৭৭ জন নিহত ও প্রায় ২৩০ জন আহত হয়েছে।

চলতি নতুন বছর শুরু হওয়ার পর সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাড়াটে সেনাদের সাথে ইয়েমেনি যোদ্ধাদের বেশ ক'টি বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত ন্যাশনাল সালভেশন সরকারের অনুগত সেনারা সম্প্রতি আমিরাতের অস্ত্রবাহী একটি জাহাজ ইয়েমেনের পানিসীমা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়। ইয়েমেনিদের এ সাফল্য সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের জন্য আরেকটি পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ইয়েমেনি যোদ্ধারা কিছুদিন আগে আমিরাতের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিল। আমিরাত অস্ত্রবাহী জাহাজ পাঠানোর পর ইয়েমেনিরাও আবুধাবির বিরুদ্ধে 'অপারেশন হারিকেন ইয়েমেন' নামেরে এই অভিযান চালিয়েছিল।

কিন্তু সৌদি আরব গতকাল ইয়েমেনের কারাগার ও বেসামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে তা গণহত্যা এবং স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। এ গণহত্যার মাধ্যমে সৌদি আরব দু'টি লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছে। প্রথমত, আমিরাতের বিরুদ্ধে ইয়েমেনিদের সাম্প্রতিক অভিযানের প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেছে সৌদি আরব। মূলত রিয়াদ এটা দেখানোর চেষ্টা করেছে যে ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই এবং তারা ঐক্যবদ্ধ। অর্থাৎ ইয়েমেন যুদ্ধে আমিরাতের পক্ষ থেকে আরো বেশি সহযোগিতা পাওয়ার আশায় সৌদি আরব এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

সৌদি আরবের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে ইয়েমেনিদেরকে সতর্ক করে দেয়া ও তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। রিয়াদ এ বার্তায়ই পৌঁছে দিতে চেয়েছে যে সৌদি আরব অথবা আমিরাতের বিরুদ্ধে হামলা চালালে ইয়েমেনিদেরকে কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মুহাম্মাদ আল বাখাইতিও বলেছেন, ইয়েমেনিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই ছিল সৌদি জোটের এ ন্যক্কারজনক হামলার মূল উদ্দেশ্য। 

তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সৌদি আরব ইয়েমেনের সা'দা প্রদেশ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় হুদায়দা শহরে এতোবড় গণহত্যা চালানোর পরও আন্তর্জাতিক সমাজ ও পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তি সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। অথচ ইয়েমেনিরা গত সপ্তাহে যখন আমিরাতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল তখন নিরাপত্তা পরিষদসহ পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো ঠিকই আনসারুল্লাহকে নিন্দা জানিয়েছিল। অথচ বেসামরিক মানুষজনের ওপর সৌদি গণহত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজ টুশব্দটিও করছে না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন এক টুইটর্বার্তায় সৌদি আগ্রাসনের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ না করে বলেছেন, ইয়েমেন সংঘাতের অবসান ঘটা উচিত এবং কূটনৈতিক উপায়ে এ সংকট অবসানের জন্য আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাই। অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস সৌদি অপরাধযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে বেসামরিক মানুষজন ও স্থাপনার ওপর হামলা বন্ধ করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি গতকাল সৌদি গণহত্যার বিষয়ে তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কোনো কোনো ব্যক্তির এসব বক্তব্য বিবৃতি কেবলই দায়সারা গোছের এবং ইয়েমেনিদের রক্ষায় কেউ  এগিয়ে আসছে না। ফলে সৌদি আরব আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।#        

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।