ইয়েমেনে যুদ্ধ শেষ হলেও শিশুদের ওপর এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব অব্যাহত
ইয়েমেনে যুদ্ধ থেমে গেলেও এর কুফল এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত সাড়ে আট বছরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি-আমিরাত সামরিক জোটের আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা।
সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য আরো কয়েকটি দেশের সমর্থনে ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে ব্যাপক সামরিক আগ্রাসন শুরু হয়। হামলার পাশাপাশি দরিদ্র দেশটিকে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে অবরোধ দিয়ে রাখা হয়। এই যুদ্ধের ফলে লাখ লাখ ইয়েমেনি শিশু বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুথি আন্দোলন সমর্থিত ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকারের মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী আলী আল-দেইলামি বলেছেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি-আমিরাত জোটের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই জোটের বাহিনীর সরাসরি হামলায় আট হাজার ইয়েমেনি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহারের কারণে এখনো প্রতিদিন ৮০ টিরও বেশি শিশু মারা যায়, আর যুদ্ধে আহত হয়েছে ১১ হাজারেরও বেশি শিশু।
এছাড়া, হাজার হাজার অপূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আরেকটি ভয়াবহ দিক। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করার কারণে বছরে ৩৯ শতাংশ ইয়েমেনি শিশু অকালে জন্মগ্রহণ করছে। অর্থাৎ এভাবে বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে। শিশুদের ক্ষুধা ও অসুস্থতা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধের আরেকটি ভয়াবহ দিক। এক হিসাব দেখা গেছে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ শিশু অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন। আরো প্রায় ২২ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ছাড়াও, এতিম হয়ে যাওয়া এবং গৃহহীন হয়ে যাওয়াও যুদ্ধে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আরেকটি দৃষ্টান্ত। এরফলে মানসিকভাবে শিশুরা অসুস্থ ও ভেঙে পড়ায় তাদের ভবিষ্যত জীবন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকারের মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরিফ আল-আমেরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ইয়েমেনি শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইয়েমেনের শিশুরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বিভিন্ন অসুখে প্রাণ হারাচ্ছে, এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে দিনযাপন করছে। ইয়েমেনের মানবাধিকার কর্মী আহমেদ আবু হামরা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, যুদ্ধ ও অবরোধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব আমাদের শিশুদের ওপর বহুকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। কেননা, কিছু ইয়েমেনি শিশু তাদের গোটা পরিবারকে হারিয়েছে এবং কিছু শিশু তাদের পরিবারের কিছু সদস্যকে হারিয়েছে।
মোটকথা, ইয়েমেনের ওপর অন্যায় আগ্রাসনে দেশটি সব দিক থেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও বিশেষ করে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থাগুলো ইয়েমেনি শিশুদের রক্ষায় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ তারা শিশু নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।