ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ ১৩:৪৭ Asia/Dhaka

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদের ৯৯ নম্বর ধারা কার্যকর করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে তা হচ্ছে সেখানে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞের পরিসংখ্যান।

৯৯ ধারা অনুযায়ী, জাতিসংঘের মহাসচিবের বিবেচনায় কোনো বিষয় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে হলে তিনি বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নজরে এনে বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। ২০১৭ সালে মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে কখনো এ ধারা ব্যবহার করেননি গুতেরেস। এমনকি গত ৩৪ বছরে (১৯৮৯ সালের পর) ধারাটি ব্যবহারের প্রয়োজন মনে করেননি জাতিসংঘের কোনো মহাসচিব।

গাজা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই তিনি ৯৯ ধারা প্রয়োগ করেছেন বলে জানান গুতেরেস। নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বর্তমানে যেসব হুমকি রয়েছে, তা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।গাজার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ সরকার কী  ধরনের অপরাধজ্ঞ চালিয়েছে সেই পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টি দিলেই  জাতিসংঘের মহাসচিবের ৯৯ ধারা কার্যকর করার কারণ খোঁজে পাওয়া যায়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ১৭,৫০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এসব শহীদদের মধ্যে ৭ হাজার ৮০০টি শিশু এবং ৬ হাজারের বেশি নারী রয়েছেন। এটি এটি সরকারি পরিসংখ্যান। বেসরকারী পরিসংখ্যানে এই সংখ্যা আরো বেশি এমনকি তা ২৩ হাজারের বেশি ছাড়িয়িে যেতে পারে। কারণ যুদ্ধে নিখোঁজদের মধ্যে ৬ হাজারেরও বেশি লোক রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসব মৃতদেহ অপসারণ করা সম্ভব  হয়ে উঠছে না। 

তাছাড়া গাজা কার্যত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গাজার ৬০ শতাংশেরও বেশি বাড়ি হয় সম্পূর্ণ ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মতে, হানাদাররা ইচ্ছাকৃতভাবে ১৩০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ২০টি হাসপাতালকে অকেজো করে দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই এবং ইহুদিবাদীরা সব জায়গায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও, উত্তর গাজায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধ ছাড়াই রয়েছে এবং অব্যাহত বোমা হামলা তাদের জীবন মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলেছে। 

গাজায় সাধারণ মানুষের অব্যাহত দুর্দশা এবং ব্যাপকভাবে অবকাঠামো ধ্বংসের পরিসংখ্যান থেকে এটা সহজেই অনুমেয় যে ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলা অব্যাহত থাকলে সেখাানে আরো মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। এদিকে  জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপপরিচালক কার্ল স্কাউ গত শুক্রবার গাজা পরিদর্শনের পর বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজার অর্ধেক মানুষ অভুক্ত থাকছেন। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই। মানুষ অভুক্ত থাকছে।’ এক্সে দেওয়া পোস্টে ডব্লিউএফপির উপপরিচালক আরও বলেন, প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তার সামান্যই গাজায় ঢুকতে পারছে। এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই প্রতিদিন খাবার জোটে না। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার দিকে ইঙ্গিত করে কার্ল বলেন, গাজার পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ পৌঁছানো ‘প্রায় অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে।

এই পরিস্থিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সংস্থার সনদের 99 অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি "জোসে জাভিয়ের লোপেজ ডমিনগুয়েজ" এর কাছে একটি চিঠিতে বলেছেন, গাজার জনজীবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বসে পড়েছে সেখানে সীমিত উপায়ে ত্রাণ পাঠানোও এখন "অসম্ভব" হয়ে উঠেছে। গুতেরেসের পদক্ষেপ সত্ত্বেও, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গত রাতের  বৈঠকে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ এবং যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র আবারও ভেটো দিয়েছে। গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার পদক্ষেপের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়েৃছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ওয়াশিংটন ও ইহুদিবাদী স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ