ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩ ১৮:১৩ Asia/Dhaka

অবরুদ্ধ গাজা উপ্যতায় যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকায় আগ্রাসী ও বর্বর ইহুদিবাদী ইসরাইলি বাহিনীর পরাজয় ঘটেছে বলে এরইমধ্যে ইসরাইলের কিছু কর্মকর্তা বলতে শুরু করেছেন।

ইসরাইলের সাবেক সেনাপ্রধান ড্যান হালুতজ বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর কাছে ইসরাইল পরাজিত হয়েছে। তিনি গত (মঙ্গলবার) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইল পরাজিত হয়েছে; এখন তেল আবিব একমাত্র যে বিজয়টি অর্জন করতে পারে তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া।তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পদত্যাগ করলে সেটিই হবে আমার দৃষ্টিতে বিজয়ের একমাত্র স্বরূপ।” এছাড়া ইহুদিবাদী ইসরাইলি নেসেটের আগের মেয়াদে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা কমিটির প্রধান আভোর শালেহও স্বীকার করেছেন যে হামাসকে ধ্বংস করার ক্ষমতা ইসরাইলের নেই। 

এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পরাজয়ের লক্ষণ কী?

প্রথম লক্ষণ হলো যুদ্ধ দীর্ঘায়িত  হওয়া। এখন পর্যন্ত গাজা যুদ্ধের ৮২ দিন পেরিয়ে গেছে এবং এটি আরো কতদিন স্থায়ী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধের দীর্ঘতম সময় ছিল ৫১ দিন যা ২০১৪ সালে পরিচালিত হয়েছিল। গাজায় এমন একটি যুদ্ধ চলছে যেখানে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর ক্ষমতা এক নয় এবং হামাসের তুলনায় ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা অনেক বেশি। যাইহোক যুদ্ধের ৮২ দিন পরেও গাজায় আগ্রাসনে ইসরাইল তাদের কোনো সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

দ্বিতীয় লক্ষণ এই যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষে বিপুল সংখ্যক সেনা হতাহত হওয়ার পাশাপাশি নিখোঁজ সৈন্যদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সাবেক চিফ অফ স্টাফ ড্যান হালুতজের মতে, এখন পর্যন্ত আমাদের ১৩০০ জনেরও বেশি নিহত এবং ২ হাজার  ৪০০ জনকে অপহরণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এসেছে, তবে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ২ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র বিজয় অর্জিত হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা।

ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ব্যর্থতার তৃতীয় নিদর্শন হলো হামাসের বিরুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জনের স্বপ্ন পূরণ না হওয়া। যুদ্ধের শুরুতে ইহুদিবাদী সরকার ঘোষণা করেছিল যে হামাসকে ধ্বংস করা যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। টানা ৮২ দিন গাজায় ভয়াবহ বিমান এবং আর্টিলারি হামলা চালিয়ে হামাসকে ধ্বংস করতে পারে নি বরং হামাসের শক্ত প্রতিরোধের মুখে ইহুদিবাদীরা এখন নিজেরাও স্বীকার করতে শুরু করেছে যে হামাসকে ধ্বংস করা যাবে না। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর রিজার্ভ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ইসহাক ব্রিক হামাসের টানেলের শক্তির প্রশংসা করে বলেছেন: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং বিশ্লেষকদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। হামাসের টানেলের কোনো সমাধান নেই। আমাদের বাহিনীর হাতে নিহত হামাস বাহিনীর সংখ্যা খুবই কম। তিনি আরো বলেন, হামাসের টানেল ধ্বংস করতে কয়েক বছর সময় লাগবে এবং তা করতে গিয়ে আরো বিপুল সংখ্যক ইসরাইলি সেনা নিহত হবে। 

গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পরাজয়ের চতুর্থ লক্ষণ হল দখলকৃত অঞ্চলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের তীব্রতা। কিছু ইহুদি কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়েছেন যে অভ্যন্তরীণ মতরিবোধ এমন পর্যায়ে যেতে পারে যে তা সশস্ত্র সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ড্যান হালুতজ এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল রাস্তায় রাস্তার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যার একপাশে থাকবে বেন গোয়ারের চরমপন্থি মিলিশিয়ারা।  

যাইহোক অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় তিন মাস ধরে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলন বলেছে, দখলদার ইসরাইল এখন পর্যন্ত গাজায় তার একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে হামাসকে নির্মূল করার ইহুদিবাদী স্বপ্ন কখনও বাস্তবায়িত হবে না বলে প্রত্যয় জানিয়েছে এসব প্রতিরোধ আন্দোলন।#      

পার্সটুডে/এমবিএ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

                                

ট্যাগ