ইরাক থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সেনাজোটের পলায়ন কি আসন্ন?
(last modified Sun, 25 Feb 2024 13:06:59 GMT )
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১৯:০৬ Asia/Dhaka

ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাসিম আলআরাজি বলেছেন, সব ইরাকি রাজনৈতিক দল তাদের দেশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশী সেনা জোটের উপস্থিতির অবসান ঘটানোকে জরুরি মনে করছে। 

গতকাল বাগদাদের আন্তর্জাতিক সংলাপ সম্মেলনের অবকাশে এই মন্তব্য করেছেন কাসিম আল আরাজি। তিনি বলেছেন, ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার ব্যাপারে এই বাহিনী ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এমন সময় এসব কথা বলেছেন যখন ইরাকের রাজনৈতিক দলগুলো আবারও ইরাক থেকে মার্কিন ও পশ্চিমা সেনাদের প্রত্যাহারের দাবি জোরদার করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রধান সহযোগী মার্কিন সরকারি সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় ইসরাইল ও মার্কিন বিরোধী এক ইরাকি প্রতিরোধ গ্রুপের শীর্ষ পর্যায়ের কমান্ডার শহীদ হলে ওই দাবি আবারও জোরদার করে ইরাকের সব রাজনৈতিক দল ও ধারা।    

প্রশ্ন হল ইরাকের সব রাজনৈতিক ধারা সেদেশ থেকে সব বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে একমত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক সেনাজোটের উপস্থিতির অবসান শিগগিরই ঘটবে কিনা। 

ইরাকের সংসদ সেদেশ থেকে সব বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের আইন পাস করেছিল চার বছর আগে যখন সেখানে সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ের কিংবদন্তীতুল্য সফল নায়ক হিসেবে খ্যাত ইরানি জেনারেল কাসেম সুলায়মানি এবং ইরাকের গণবাহিনী হাশদ্‌ আশ শাবি বা পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সের উপ-প্রধান আবু মাহদি আল মুহান্দিস ২০২০ সালের তেসরা জানুয়ারি মার্কিন এক সন্ত্রাসী হামলায় শাহাদত বরণ করেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। 

ইরাকের সংসদ বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের আইন পাস করা সত্ত্বেও মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক সেনাজোট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তাসহ নানা অযৌক্তিক ও মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে ও অনেকটা গায়ের জোরে  ইরাকে সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি মার্কিন সরকার বেশ কয়েকবার ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া হবে বলে চুক্তি স্বাক্ষর করেও পরে বার বার ওই চুক্তি এবং প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করছে। অথচ ইরাকে দায়েশ বা কথিত আইএস সন্ত্রাসীরা বহু বছর আগে পরাজিত হয়েছে। 

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শিই-আ' আস সুদানিও (محمد شیاع السودانی) কিছুকাল আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ও কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছিলেন, ইরাকের মাটিতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক সেনাজোটের উপস্থিতি গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে এবং খুব শিগগিরই এই সেনাদের উচিত ইরাক ত্যাগ করা। বহুজাতিক ওই জোটের সেনারা পর্যায়ক্রমে ইরাক ত্যাগ করবে বলে বাগদাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে কিছুকাল আগে ইরাক সরকার ঘোষণা করেছিল।

আসলে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে উপর্যুপরি ইরাকি ও সিরিয় প্রতিরোধ-যোদ্ধাদের হামলার প্রেক্ষাপটে মার্কিন সরকার ইরাক থেকে সেনা ফিরিয়ে নেয়ার আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছিল। ইরাকে এখনও পশ্চিমা বহুজাতিক জোটের প্রায় ২৫০০ সেনা অবস্থান করছে। তারা ইরাক ও সিরিয়ায় বেশ কয়েকটি ঘাঁটি গেড়ে সেখান থেকে নানা অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে এবং তাদেরকে আবারও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মার্কিন মদদে গড়ে-ওঠা দায়েশ এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। ইরাকে মার্কিন সেনাদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হল আইন আল আসাদ।

ইরাকি জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যদি এদের বিতাড়নের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত তাদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। তাই এটা স্পষ্ট ইরাকিদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে আফগানিস্তানের মত ইরাক থেকেও পশ্চিমা সেনাদের পিছু হটা বা পলায়ন ঘটা অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। #

পার্সটুডে/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ