পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইলের পানি সন্ত্রাস: ইসরাইল বিরোধী কর্মকাণ্ড ঠেকানোই উদ্দেশ্য
১৮৯৭ সালের আগস্ট মাসে সুইজারল্যান্ডের বাযেল শহরে অনুষ্ঠিত ইসরাইলের প্রথম কংগ্রেস সম্মেলনে বলা হয়েছিল যে পানি ছাড়া ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বর্তমানে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী সরাসরি সন্ত্রাসী ও নিরাপত্তা বিরোধী হুমকি সৃষ্টির পাশাপাশি লেবানন, জর্ডান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনসহ আরব দেশগুলোর পানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট সংকট সৃষ্টি করছে।
১৪০২ হিজরিতে, চেশমে ওয়াজানি ওয়াটার পাম্প স্টেশন প্রকল্প এবং দক্ষিণ লেবাননের বৃহত্তম ওয়াটার পাম্প স্টেশন ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে লেবাননের স্থানীয় কর্মকর্তা আহমেদ আল-মোহাম্মদ বলেছেন,
'ইসরাইলের হামলায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, পানি পাম্প প্রকল্প এবং পানি বিতরণ নেটওয়ার্কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে করে সীমান্ত এলাকার অসংখ্য গ্রাম ও শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।'
লেবাননের সীমান্তে ইসরাইলের বিমান হামলা ও কামানের গোলার আঘাতে পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সীমান্তবাসীরা পানির চাহিদা মেটাতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রাখছে এবং তাদের বাড়ির ছাদ থেকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তা টেনে নিয়ে সংরক্ষণ করছে।
অন্যান্য এলাকায়, লেবাননের গ্রামবাসীরা পানির চাহিদা মেটাতে কূপ খননের আশ্রয় নিয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
লেবাননের মতো জর্ডানেও ১৪০২ হিজরিতে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।
১৯৯৪ সালে জর্ডান এবং ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইসরাইল জর্ডানকে বছরে ২ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৫ কোটি ঘনমিটার পানি সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল বারবার ওই প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে এবং পানি সরবরাহ করা থেকে বিরত থেকে।
এদিকে, জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি ঘোষণা করেছেন যে, ইসরাইল গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রাখায় তিনি ইসরাইলি মন্ত্রীর পাশে বসে পানি ও বিদ্যুৎ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারবেন না।
এ ভাবে লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জর্দানে তীব্র পানি সংকট তৈরি করেছে ইসরাইল যাতে ওই দেশগুলোর সরকার ও জনগণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাও করতে না পারে।
এ অবস্থায়, ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের পাহাড়ি জলের অববাহিকায় একটি ছোট অংশের অংশীদার হলেও সেখানেও তারা সংকট ও বঞ্চনার মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে, গোলান মালভূমি ইসরাইলের দখলে থাকার কারণে সেখানকার জালিলে হ্রদের পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিরিয়া।
ইসরাইল, উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির নীচের পানি এবং পাহাড় থেকে বেয়ে আসা পানির ওপর নির্ভরশীল। আর এ দুটি পানির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে গাজা এবং পশ্চিম তীর। ইসরাইলের ভূ-পৃষ্ঠের পানি প্রধানত উত্তর ও পূর্বে কেন্দ্রীভূত।
ইসরাইল উপকূলীয় জলাভূমি এবং পর্বত জলের উপর নির্ভর করে আর এ দুটিই গাজা এবং পশ্চিম তীরের অধীনে অবস্থিত। ইসরায়েলের ভূ-পৃষ্ঠের জল প্রধানত উত্তর ও পূর্বে কেন্দ্রীভূত এবং তারা জর্ডান নদীর উৎস দখল করে জর্ডান ও সিরিয়ার জন্য পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।
তেল আবিব ন্যাশনাল ওয়াটার ক্যারিয়ার নামে একটি বিশাল প্রকল্প তৈরি করেছে, যেখানে খাল কেটে, পাইপলাইন নির্মাণ এবং পাম্পিং স্টেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে উত্তরের জালিলে হ্রদ থেকে মধ্য ও দক্ষিণাংশে পানি সরবরাহ করা যায়।
কুনেইত্রা শহরের উত্তরে মাসাদা হ্রদ এবং মাসাদার পূর্বে তাবেরিয়ে হ্রদ কিংবা গোলান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী জালিল সাগর উপকূল এবং গোলানের পশ্চিমে জর্ডান নদীর মতো উঁচু জলের নদীর ধারা রয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস ইসরাইল দখল করে আছে। এ ভাবে ইসরাইল এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা করছে যাতে এ অঞ্চলের দেশগুলো ইসরাইল বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে না পারে।
যাইহোক, এটা এখন সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইসরাইল অর্ধ-শতাব্দী আগে পানি সন্ত্রাস শুরু করেছে এবং আজ যখন পশ্চিম এশিয়ায় নানা সংকট ও পানি-যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে তখন তেল আবিব এই ধরনের সংকট সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে না।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।