জুন ০২, ২০২৪ ১৯:৫২ Asia/Dhaka
  • ইরানের উপর ইসরাইলের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর জন্য নিউইয়র্ক টাইমসের দুর্বল প্রচেষ্টা

নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট ব্রেট স্টিফেনস তার এক নিবন্ধের শিরোনাম এভাবে লিখেছেন "কে বেশি সমস্যায় পড়েছেন: ইসরাইল না ইরান?" তিনি তার এ লেখায় কিছু অবাস্তবত দবি করেছেন। এখানে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

ইতিহাসে ১৯৪৮ এবং ১৯৭৯ সালের দুটি ঘটনা তুলে ধরে তিনি তার লেখা শুরু করেন। প্রথমটি হল পশ্চিমা উপনিবেশবাদী শক্তির সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে অবৈধভাবে  ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং দ্বিতীয়টি হলো ইরানে পাশ্চাত্য র্ঘেঁষা পাহলভি শাসনের উৎখাত যা ছিল কয়েক হাজার বছরের রাজতন্ত্র শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বছর।

লেখক ঠিকই বলেছেন যে এই দুটি ঘটনা বা ইতিহাস একসাথে চলতে পারে না। তবে তিনি এ দুটি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্ক কিছু বলেননি। কেননা একটি হচ্ছে জুলুমবাজ ও সাম্রাজ্যবাদি শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী ইসরাইল। আর অন্যটি হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরোধী ইসলামি ইরান। একটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিদেরকে এনে অবৈধভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাহিনী আর অন্যটি হচ্ছে ইরানের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দেশ যাদের নিজস্ব ভূমি রয়েছে। ফলে ইসরাইল ও ইরান কখনো এক বিষয় নয় এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু, ইসরাইলের সমস্যাগুলো কেবল দখলদারিত্বের বৈশিষ্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।কারণ তিনি একজন যুদ্ধাপরাধী।

নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট ব্রেট স্টিফেনস মনে করেন যে বিশ্বের দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী এবং একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার নেতাকে গ্রেপ্তার করবে এমন সম্ভাবনা কম।

তবে, লেখকের এই মন্তব্য শ্রেফ হুমকি নাকি অন্য কিছু তা স্পষ্ট নয়। হামাস, লেবানন ও ইয়েমেনের প্রতিরোধগুলো এবং খোদ ইরান যাদের কারোরই পারমাণবিক অস্ত্র নেই তারা ঠিকই ইসরাইলে হামলার সাহস দেখিয়েছে। তারা যেহেতু ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে তাই নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতাও রয়েছে।

লেখকের মতে,যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঘোষণার অর্থ ইসরাইল একটি অবৈধ রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও সে বিচ্ছিন্ন।

লেখকের বিষয়ে একটি অদ্ভুত ব্যাপার হল যে, তিনি প্রতিবাদ করছেন কেন নেতানিয়াহুর নাম ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামী দল বিশেষ করে হামাসের নেতাদের পাশে স্থান দেয়া হয়েছে? কেননা এতে নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধমন্ত্রীর নৈতিক অবস্থানকে খাটো করা হয়েছে। ঠিক যেমনটি তিনি প্রতিবাদ করছেন কেন নাৎসিদের বিরুদ্ধে ফরাসি প্রতিরোধ শক্তির পাশে হিটলারের নাম রাখা হয়েছিল।

নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরাইলি সৈন্যরা ৩৫০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

লেখক ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন যে এই ঘটনার মাধ্যমে ইরান দুর্বল হয়ে পড়েছে।

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে,লেখক ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের শুরুতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে যারা সাদ্দামকে সহযোগিতা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে  রায়িসির কঠোর আচরণের নিন্দা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে রায়িসি একজন শান্ত ব্যক্তিত্ব হয়েও উগ্রতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

লেখক আমেরিকার যুদ্ধবাজ কর্মকর্তাদের পক্ষে প্রচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে ইরান পারমাণবিক বোমা বানাতে চেয়েছিল এবং এখন তারা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরো একটি মিথ্যা দাবি করে বলেছেন যে, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ির পুত্র তার পিতার উত্তরসূরি হওয়ার কথা। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ইরানের বিশেষজ্ঞ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সর্বোচ্চ নেতার পদে কাউকে  নির্বাচিত করা হবে। এছাড়াও, ইরানের বৈজ্ঞানিক শক্তি পাকিস্তানের মতো দেশের তুলনায় অনেক বেশি হলেও ইরান দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা চাইলে সহজেই পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে, কিন্তু এই অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা বর্তমানে ইরানের নেই।

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, লেখক ইরানের শক্তিশালী সাংবিধানিক কাঠামো দেখতে পান না। পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হারালে  যে কোনও দেশে নিশ্চিতভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে যেত। কিন্তু ইরান দেখিয়ে দিয়েছে তারা যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম এবং কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নতুন নির্বাচন করতে প্রস্তুত।

প্রকৃতপক্ষে, নিউইয়র্ক টাইমসের এই লেখক ব্রেট স্টিফেনসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এটা দেখানো যে আজ ইরান ফাঁদে পড়েছে এবং ইসরাইল সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরাইল এমন একটি রাষ্ট্র যার বিশ্বে কোনো বৈধতা নেই এবং  অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নেই। এমনকি ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও ইসরাইলের নেই।

 পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ