গণহত্যার বিজ্ঞান: দমন-পীড়ন, অপরাধযজ্ঞে ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা
(last modified Thu, 09 Jan 2025 11:11:09 GMT )
জানুয়ারি ০৯, ২০২৫ ১৭:১১ Asia/Dhaka
  • তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়
    তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়

পার্সটুডে-ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়নের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোতে সহায়তা করে।

ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধবাজ শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন করার অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। পার্সটুডে আরও জানিয়েছে, এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে, ইহুদিবাদী ইসরাইল ১৯৯৬ সাল থেকে ইউরোপের গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচির অংশীদার এবং তখন থেকে 'হরাইজন ২০২০' এবং 'হরাইজন ইউরোপ'-এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে তারা বিশাল আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।

ইসরাইল ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হরাইজন প্রকল্পের জন্য ১ শ ২৮ কোটি ইউরো এবং ২০২১ সালে হরাইজন ইউরোপ প্রকল্পের জন্য ৭৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারেরও বেশি সাহায্য পেয়েছে, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পে ব্যয় করার লক্ষ্যে। কিন্তু এইসব সাহায্য প্রকৃতপক্ষে ইসরাইলি সামরিক শিল্পের উন্নয়নের সহায়ক হয়ে উঠেছে।

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়, কুদসের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় এবং আততাখনিউন ইনস্টিটিউটের মতো ইসরাইলি প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি ইউরোপীয় সহায়তা নিয়ে কাজ করছে। এই সহায়তার বেশিরভাগই ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। এগুলো বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করা এবং বিপণনের আগে পরীক্ষা করা হয়। আর সেই পরীক্ষা করার কাজটি করা হয় ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা করার মাধ্যমে।

এই প্রসঙ্গে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধগুলোকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে এবং সামরিক অভিযানে সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইসরাইলের প্রধান প্রধান ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ই কোনোরকম ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই বাণিজ্যিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসরাইলের সামরিক ও নিরাপত্তা শিল্পের সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা রয়েছে। এ থেকেই অনুমান করা যায় ইসরাইলের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামরিক শিল্পের মধ্যে কী পরিমাণ সংযোগ রয়েছে।

ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভূমিকা কেবল গবেষণা আর উন্নয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাঠ পর্যায়ে বিশেষ করে গাজা উপত্যকায় এগুলোর সামরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড তাদের ওই প্রযুক্তির একটি উন্মুক্ত পরীক্ষাগার। সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর সব ধরনের অস্ত্র এবং নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে।

ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরর ভূমিকা এখানেও সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতিও বাস্তবায়ন করে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থায়নে পরিচালিত বিষয়গুলো নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পড়াশোনা করতে বাধা দেয়। শুধু তাই নয় ইসরাইলের বিরুদ্ধে বা গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের যেসব ছাত্র বিক্ষোভ করে তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করে।

ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব কর্মকাণ্ড এবং পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ এবং সমালোচনা করা হয়েছে।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে, ইউরোপীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজারেরও বেশি অধ্যাপক এবং ৪৫টি বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামরিক প্রকল্পের উন্নয়নে অংশগ্রহণকারী ইসরাইলি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইইউ'র সমর্থন এবং আর্থিক সহায়তা স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।#

পার্সটুডে/এনএম/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।